X
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪
৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

গুলশান হামলায় জড়িতরা আল-কায়েদা নেতা আওলাকির অনুসারী!

উদিসা ইসলাম
১২ আগস্ট ২০১৬, ২০:৩৭আপডেট : ১৩ আগস্ট ২০১৬, ০১:১৫

আল কায়েদা নেতা আওলাকি

গুলশানে হলি আর্টিজান হামলায় জড়িতরা আল-কায়েদা নেতা আনোয়ার আল আওলাকির অনুসারী বলে মনে করছেন জঙ্গিবাদবিষয়ক গবেষকরা। এমনকি হামলা পরবর্তী সময়ে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে হামলাকারীদের যারা স্বাগত জানিয়েছে এবং এ ধরনের হামলা আরও ঘটবে বলে হুমকি দিয়েছে, সেই হুমকিদাতারাও আওলাকি ভক্ত। এর প্রমাণ মিলেছে বলে দাবি করছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা।

গবেষকরা বলছেন, শঙ্কার বিষয় হলো বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ নিয়ে আগ্রহী একটা শ্রেণি আনোয়ার আল  আওলাকির মতাদর্শে দিক্ষিত হচ্ছে। এমনকি এই আল কায়েদা নেতার ‘দ্য ডাস্ট উইল নেভার সেটল ডাউন’ বক্তৃতাটি বাংলায় বই আকারে প্রকাশিতও হয়েছে। অভিযোগ আছে, এসব বই বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার বইয়ের দোকানে ঢুকে পড়েছে।

আওলাকির মতবাদ মূলত পাশ্চাত্য সভ্যতা, গণতন্ত্র ও অন্য ধর্মের প্রতি এক ধরনের চরম ঘৃণার সৃষ্টি করে এবং জিহাদি কর্মকাণ্ডকে যুক্তির মোড়কে বৈধতা দেয়। যারা এই মতবাদে বিশ্বাসী হয়ে ওঠে বা অনুপ্রাণিত হয়, তাদের প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই বিশেষ সম্ভাবনা থাকে, যেকোনও এক পর্যায়ে উপযুক্ত পরিবেশ ও সমর্থন পেলে তারা জঙ্গি হয়ে উঠতে পারে। আওলাকির বক্তব্য বাংলাদেশি জঙ্গিদের সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে এবং ব্লগারদের কুপিয়ে হত্যা করার তাত্ত্বিক গুরুত্ব দাঁড় করাতেও তা ব্যবহার করা হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জঙ্গিবাদ নিয়ে গবেষণা করেন যারা, তারা বলছেন, যে যুক্তিতে জাকির নায়েক ও পিস টিভি নিষিদ্ধ করা হয়েছে একই কারণে আওলাকি ভাইরাস ছড়ানো বন্ধে এসব বই নিষিদ্ধ করতে হবে। ২০১২ সালের মে মাসে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম থেকে আল-কায়েদা নেতা আনোয়ার আল আওলাকির ‘দ্য ডাস্ট উইল নেভার সেটল ডাউন’ বক্তৃতাটি বাংলায় প্রকাশ করা হয়। জঙ্গি নেতা আওলাকি ২০১১ সালে মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হয়। আওলাকির মাধ্যমেই জিহাদের নতুন ধরণ আবিষ্কৃত হয়, যেখানে বুদ্ধিবৃত্তিক জায়গায় চার্লি হেবদো বা মুক্তমনা ব্লগকে জঙ্গি টার্গেট করা। তারা অনেক বেশি সহিংস, তারা অনেক বেশি ধূর্তও। আনোয়ার আল আওলাকি ভীষণভাবে হত্যার আগ্রহ নিয়ে বাংলাদেশে জঙ্গি বানাতে সহায়তা করেছে।

হামলা পরবর্তী সময়ে ক্লোজআপ ওয়ান তারকা সাফির ফেসবুকে আওলাকির নানা পোস্ট দেখা যেত বলে তার বন্ধুরা জানিয়েছে। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী সাফি প্রথম এ বিষয়গুলো নিয়ে ২০১১ সালের শেষের দিকে কথা বলা শুরু করে, ততদিনে আওলাকি মৃত। তার বক্তৃতার অনুরাগী হয়ে সে বদলে যেতে থাকে এবং আওলাকির মতাদর্শ লালন শুরু করে। ২০১৩ সাল থেকে সে চূড়ান্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী হয়ে ওঠে বলেও বন্ধুরা দাবি করে। এদিকে, সিরিয়ায় নিহত আশিকুর রহমান জিলানী আকা আবু জানদাল আল বাঙালিও আওলাকির অনুসারী ছিল। আইএস-এর মুখপত্র দাবিকের ১৪তম সংখ্যায় সে বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়েছে। জিলানি ২০০৯ সালে বিডিআর ‘বিদ্রোহে’ নিহত সেনাকর্মকর্তার সন্তান। আওলাকির জিহাদি বক্তৃতা আনসার আল ইসলাম ও আইএস  ঘরানার বাংলাদেশি জঙ্গিদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে।

এদিকে, গত ৫ আগস্ট এক ফেসবুক লাইভে নিউ ইয়র্ক টাইমস এর রুকমিনি কালিমাচি বহির্বিশ্বে আইএস- এর অপরারেশন পরিচালনাকারী ইউনিট ‘এমনি’র হ্যারি সারফোর বরাতে বেশকিছু তথ্য হাজির করেছেন। সারফো জানান, আইএস একটা গ্লোবাল কার্যক্রমের তালিকা তৈরি করছে এবং তাদের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কের শূন্যস্থানগুলো পূরণের চেষ্টা করছে। ফেসবুক লাইভে রুকমিনি বলেন, আইএস-এর এশিয়া অঞ্চলের দায়িত্বে আছে এক বাংলাদেশি। তবে তার বিষয়ে কোনও তথ্য দেওয়া হয়নি। সেখানে দাবি করা হয়েছে, বাংলাদেশে নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে তারা আইএসএ-র বন্দুকধারীদের দিয়ে গত মাসে ঢাকার একটি ক্যাফেতে অন্তত ২০ জন জিম্মিকে হত্যা করেছে, যারা বেশিরভাগই বিদেশি।

জঙ্গিবাদ ও অনলাইন অ্যাক্টিভিটিজ নিয়ে কাজ করছেন নির্ঝর মজুমদার। তিনি মনে করেন, আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত অধিকাংশ জঙ্গি মৌলবাদী হয়ে ওঠার প্রথম ধাপ হলো আনোয়ার আল আওলাকির বক্তব্য শোনা। ধর্মীয় দিক থেকে বিতর্কিত কিছু ব্যাপারে আওলাকির সিদ্ধান্তগুলো অত্যন্ত আপত্তিকর, যেগুলো জঙ্গিরা তাদের কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করে। তিনি বলেন, আইসিস বা আল-কায়েদাসহ যেকোনও জঙ্গি দলে যারাই যোগ দেয়, তাদের মগজ ধোলাইয়ের প্রাথমিক উপকরণ হলো আওলাকির বই ও লেকচারগুলো। এই কারণেই তারা জঙ্গি কর্মকাণ্ডকে তাদের ধর্মের অংশ বলে মনে করতে শুরু করে। একইসঙ্গে সেটাকে ধর্মীয় কর্মকাণ্ড ভাবতে শুরু করে। ভয়ঙ্কর ব্যাপার হলো এই যে, যারা এই মতবাদে বিশ্বাসী বা অনুপ্রাণিত হয়, তারা সব ধরনের জঙ্গি কর্মকাণ্ডকে সামাজিকভাবে এক ধরনের সমর্থন দিতে থাকে। নিজেরা সরাসরি জঙ্গি না হয়ে উঠলেও তাদের আদর্শিক এবং নৈতিক সমর্থন সব সময়েই জঙ্গিদের দিকে থাকে। যার ভয়াবহতা কোনও অবস্থাতেই অস্বীকার করার উপায় নেই। তাদের মধ্যে কেউ কেউ কোনও জঙ্গি দলে যোগদান করতে না পারলেও স্বতঃপ্রণোদিত হয়েও হামলা চালাতে পারে বা আত্মঘাতী হতে পারে। প্রাথমিকভাবে আওলাকির মতবাদে অনুপ্রাণিত হওয়ার পর অনেকে অন্য জিহাদি ধর্মীয় গুরুর মাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন জঙ্গি দলের আদর্শ ও দর্শন গ্রহণ করে সেখানে যোগদান করে।

এধরনের বই বিষয়ে জানতে চাইলে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গত সপ্তাহে আমরা বাংলাবাজারে তল্লাশী চালিয়ে কয়েক হাজার বই জব্দ করেছি। সমস্যার বিষয় হলো, এগুলো কেবল প্রকাশিত বা ছাপা অবস্থায় পাওয়া যায় তা না, ইন্টারনেটেও এর কপি ঘুরে বেড়ায়। এবিষয়টি আমাদের মনিটরিং এ আছে।

এপিএইচ/

আরও পড়ুন:
হাসনাত-তাহমিদের মূল ছবি দিতে প্রথম আলো ও যুগান্তরকে নির্দেশ

মারজানের তথ্য চায় পুলিশ

আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদের উত্থানের পর নিও জেএমবি সক্রিয়: মনিরুল ইসলাম

আইএস ছাড়তে চেয়েছিল সেই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ কিশোরী! (ভিডিও)

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
খারকিভে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া: ইউক্রেন
খারকিভে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া: ইউক্রেন
‘অধিকার দিতে হবে না, কেড়ে না নিলেই হবে’
‘অধিকার দিতে হবে না, কেড়ে না নিলেই হবে’
ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সদস্য গ্যান্টজের পদত্যাগের হুমকি
ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সদস্য গ্যান্টজের পদত্যাগের হুমকি
উপজেলা নির্বাচনের প্রচারণায় অংশ না নিতে এমপিকে রিটার্নিং কর্মকর্তার চিঠি
উপজেলা নির্বাচনের প্রচারণায় অংশ না নিতে এমপিকে রিটার্নিং কর্মকর্তার চিঠি
সর্বাধিক পঠিত
মামুনুল হক ডিবিতে
মামুনুল হক ডিবিতে
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
‘নীরব’ থাকবেন মামুনুল, শাপলা চত্বরের ঘটনা বিশ্লেষণের সিদ্ধান্ত
‘নীরব’ থাকবেন মামুনুল, শাপলা চত্বরের ঘটনা বিশ্লেষণের সিদ্ধান্ত
আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি
আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি
মোবাইল আনতে ডিবি কার্যালয়ে মামুনুল হক
মোবাইল আনতে ডিবি কার্যালয়ে মামুনুল হক