রাজধানীর পান্থপথের বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের ২৯টি ইউনিট। এছাড়া বসুন্ধরার নিজস্ব কর্মীরাও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। বর্তমানে মার্কেটের পেছন দিক দিয়ে ভেতরে পানি দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে বাতাসের কারণে কাজে ব্যাঘাত ঘটছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) মেজর শাকিল নেওযাজ বলেছেন, '২৯টি ইউনিটের দেড়শ জন কর্মী আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করছে। মার্কেটের ভেতর প্লাস্টিকের পিভিসি পাইপ থাকায় আগুন বাড়ছে। তবে আগুন ছয় তলাতেই জ্বলছে। অন্য তলায় ছড়িয়ে পড়তে দেওয়া হয়নি।'
তিনি আরও বলেন, 'ছাদে যারা আটকে পড়েছেন তাদের এখনই উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। কারণ সিঁড়িতে অনেক পানি।'
রবিবার বেলা ১১টা ২৩ মিনিটে মার্কেটের লেভেল-৬ এর সি ব্লকে 'এমএস সুজ' নামের একটি জুতার দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। দোকনটি বন্ধ ছিল। আগুন লাগার পর থেকেই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। অগ্নিকাণ্ডের পরপর ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় শপিং মল এবং আশেপাশের এলাকা।
কয়েক ঘণ্টা চেষ্টার পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা মার্কেটের ভেতর প্রবেশ করে সমর্থ হন। বসুন্ধরার ভেতরে জরুরি লাইট জ্বালিয়ে কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
বসুন্ধরা সিটির জ্যেষ্ঠ মহাব্যবস্থাপক মোস্তফা রায়হেল ইমাম জানান, ষষ্ঠ তলার একটি লেদার সুজ-এর দোকানে অগ্নিকাণ্ডের সূচনা ঘটে। ভবনের সি-ব্লক থেকে আমরা কর্ডন করে রেখেছি, যেন আগুন ছড়াতে না পারে।
তিনি আরও জানান, লেদারে আগুন লাগার কারণে ধোঁয়া বের হচ্ছে। কাচ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ধোঁয়া বের হয়ে গেলে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে। এখনও কোনো আহতের ঘটনা ঘটেনি।
বসুন্ধরা সিটির হেড অব মার্কেটিং জসিমউদ্দীন বলেছেন, ছয় তলার সি ব্লকের ৭ থেকে ৮টি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগুন ৬ তলা থেকে ছড়িয়ে পড়তে দেওয়া হয়নি। এক ঘণ্টার মধ্যে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘তিন নারীসহ মোট ১১ জকে উদ্ধার করা হয়েছে। আমাদের নিজস্ব ৬০ জন ফায়ার ফাইটার এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ছাড়া বর্তমানে মার্কেটের ভেতরে আর কেউ নেই। আমারা আজই মার্কেট পরিষ্কার করে ফেলবো। আশা করছি আগামীকাল বা পরশুর মধ্যে মার্কেট খুলে দেওয়া সম্ভব হবে।’
মার্কেটের নিজস্ব অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা আছে কিনা- সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আগের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর বিশেষজ্ঞরা যেসব পদক্ষেপ নিতে বলেছিলেন আমরা সেগুলো নিয়েছিলাম। আজকে আপনারা দেখেছেন যে, আমাদের নিজস্ব ফায়ার ফাইটারাই আগুন নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলেন। আর ছোটখাটো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তো দেশের সব মার্কেটেই ঘটে।’
শপিং মলের ৫ম তলায় জুয়েলারির দোকান। ৬ষ্ঠ তলায় মোবাইল, জুতা, ব্যাগ, ইলেক্ট্রিক পণ্যের দোকান। ৭ম তলায় কয়েকটি ব্র্যান্ডের পোশাকের ও জুতার দোকান রয়েছে। ৮ম তলায় ফুড কোর্ট ও সিনেপ্লেক্স অবস্থিত। আর নবম তলায় জেনারেটরের সরঞ্জাম। শপিং মলের বেজমেন্টে একটি সুপার শপ রয়েছে।
এরই মধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক বি. জে. আহম্মদ আলী খান বলেন, ‘ছয়তলার সিলিংয়ে আগুন লেগেছে। প্রথমে পানির সংকট ছিল, পরবর্তীতে ওয়াসার সঙ্গে কথা হয়েছে। এখন আর পানির সমস্যা নেই।’
ডিএমপির তেজগাঁও জোনের ডিসি বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিস যাতে নিরাপদে কাজ করতে পারে আমরা সেই সহযোগিতা করছি।’
এর আগে ২০০৯ সালের ১৩ মার্চ বসুন্ধরা সিটিতে আগুন লেগেছিল। ওই ঘটনায় ৭ ব্যক্তি নিহত হন।
ছবি: নাসিরুল ইসলাম।
/এআরআর/এসটি/এইচকে/টিএন/