X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২২ বৈশাখ ১৪৩১

সার্কের ভবিষ্যৎ কী?

শেখ শাহরিয়ার জামান
৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ০০:৪০আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ০২:২০

সার্ক

১৯৮৫ সালে সার্ক গঠন করা হয়েছিল আঞ্চলিক শান্তি, সৌহার্দ্য ও স্থিতিশীলতা বাড়ানোর জন্য। পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির অঙ্গীকারও ছিলো সংগঠনটির। কিন্তু সেই সহযোগিতার মনোভাব ফুরানোর যে অশনি সংকেত এবারের সার্ক সম্মেলনকে ঘিরে দেখা দিয়েছে তাতে অনেকেই এর ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

আগামী নভেম্বরে সার্কের ১৯তম শীর্ষ সম্মেলন পাকিস্তানে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পাকিস্তানের অব্যাহত হস্তক্ষেপের কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশ সার্ক চেয়ারম্যান নেপালকে জানিয়ে দেয়, এ সম্মেলনে তারা অংশ নিচ্ছে না। তবে সহায়ক পরিবেশ তৈরি হলে তারা অংশ নেওয়ার বিষয়টি আবার বিবেচনা করবে। এর পরপরই ভারত সার্কের মধ্যে আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসী ঘটনা ও সদস্য রাষ্ট্রগুলিতে একটি দেশের হস্তক্ষেপের কারণ দেখিয়ে জানায় তারাও এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবে না। এরপর আফগানিস্তানও তাদের দেশে সন্ত্রাসী ঘটনার কারণ দেখিয়ে এ অনুষ্ঠানে অংশ না নেওয়ার কথা জানায়। সবশেষে ভুটানও এবারের সম্মেলনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

বাংলাদেশ, ভারত, আফগানিস্তান ও ভুটান সম্মেলনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর সার্কের বর্তমান চেয়ারম্যান নেপাল এক বিবৃতিতে ইসলামাবাদে নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় সম্মেলনটি স্থগিত ঘোষণা করে এবং সার্ক চার্টার অনুযায়ী সব সদস্য দেশের অংশগ্রহণের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে ১৯তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলন করতে একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরির জন্য সব পক্ষকে আহ্বান জানায়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সার্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও বিশ্লেষকরা মনে করেন, বর্তমান সমস্যার তীব্রতা অদূর ভবিষ্যতে কমে আসবে এবং সার্কভুক্ত দেশগুলো ভবিষ্যতে আবারও সমাধান খুঁজে নিয়ে সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভারতে দায়িত্ব পালনকারী বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত ও সার্ক সচিবালয়ের প্রাক্তন পরিচালক লিয়াকত আলী চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দৃশ্যমানভাবে আসিয়ানের মতো সার্ক কার্যকর প্রতিষ্ঠান ছিল না। কিন্তু এটি একটি ফোরাম হিসাবে ব্যবহৃত হতো যেখানে দক্ষিণ এশিয়ার নেতারা একত্রিত হয়ে আলোচনা করতেন। দুই দেশের মধ্যে বিবদমান দ্বিপক্ষীয় সমস্যা সমাধানে সার্ক অনেক সময় একটি প্ল্যাটফর্ম হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে।’

সার্ক শীর্ষ সম্মেলন স্থগিত হওয়ার সিদ্ধান্ত দুঃখজনক কিন্তু এটি সাময়িক বলে মনে করেন সাবেক এ পেশাদার কূটনীতিক। সার্ক বিলুপ্ত হয়ে যাবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় না এটি বলার মতো সময় এসেছে। কূটনীতিতে বিভিন্ন দেশ দীর্ঘ সময় ধরে কী ধরনের ব্যবহার করে থাকে সেটি গুরুত্বপূর্ণ, একটি বা দুটি বিছিন্ন ঘটনা নয়। এর আগেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে এবং আস্তে আস্তে দেশগুলি নিজেদের সংহত করার চেষ্টা করেছে।’

উদাহারণ হিসাবে তিনি বলেন, ‘ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ঘটা কারগিল যুদ্ধের কারণে ১৯৯৮ সালের পরে চারবছর সার্কের কোনও সম্মেলন হয়নি। সেই শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০০২ সালে।’ তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বিশ্বেরও সার্কের কাছ থেকে অনেক প্রত্যাশা আছে এবং এ সংস্থার অন্য কোনও পরিণতি এ অঞ্চলের জন্য ভালো কোনও বয়ে আনবে না।’

এ সংস্থার কোনও নেতিবাচক পরিণতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভিন্ন একটি বার্তা দেবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, সার্কের সঙ্গে চীন, জাপান, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সহযোগিতা চুক্তি আছে এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ একাধিক রাষ্ট্র এর পর্যবেক্ষক দেশ হিসাবে আছে। তাই সার্ক ব্যর্থ হলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বলবে ‘তোমরা তো নিজেদের সমস্যা নিজেরাই সমাধান করতে পারো না।’

লিয়াকত আলী বলেন, ‘এই আঞ্চলিক সংস্থার অধীনে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা একটি বাস্তবতা এবং সার্কের কারণে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার সুফল আমরা পাচ্ছি। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান ও নেপাল উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার অধীনে মোটর ভেহিক্যাল চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। নেপাল তার বিবৃতিতে দ্রুত সার্ক শীর্ষ সম্মেলন করতে সহায়ক পরিবেশ তৈরির আহ্বান জানিয়েছে যা একটি পরিপক্ক আহ্বান।’

তবে ইসলামাবাদের সার্ক শীর্ষ সম্মেলন স্থগিত হওয়ার বিষয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত ও সার্ক সচিবালয়ের প্রাক্তন পরিচালক মাহমুদ হাসান বলেন, ‘এটি একটি সাময়িক সমস্যা। সার্কের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হচ্ছে রিট্রিট, যেখানে সকল শীর্ষ নেতা একান্তে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন এবং নিজেদের মধ্যেকার দ্বিপক্ষীয় সমস্যা নিয়ে আলোচনার সুযোগ পান। এবার শীর্ষ সম্মেলন না হওয়ার কারণে নেতারা নিজেদের মধ্যেকার সমস্যা নিয়ে সামনা-সামনি আলোচনার সুযোগ পেলেন না।’

সার্ক বিষয়ে অভিজ্ঞ একজন কূটনীতিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সার্ক একটি আইনগত সংস্থা এবং এটি বন্ধ করতে হলে সবাইকে একমত হয়ে এটি করতে হবে—যা কোনও সহজ প্রক্রিয়া নয়।’ তবে তার মন্তব্য, ‘দুটি বড় দেশের দ্বন্দ্বের কারণে সার্ক আশানুরূপ সফল হতে পারেনি।’ চার দেশের শীর্ষ সম্মেলনে অংশ না নেওয়ার কারণে পাকিস্তানের ওপর তা চাপ সৃষ্টি করবে বলেও তিনি মনে করেন।

প্রসঙ্গত, সার্কের ১৯তম শীর্ষ সম্মেলন আগামী নভেম্বরের ৯-১০ তারিখে ইসলামাবাদে হওয়ার কথা ছিল। গত ২৭ অক্টোবর বাংলাদেশ, ভারত, আফগানিস্তান ও ভুটান এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ না করার কথা জানায়। গত ৩০ বছরে এ সংস্থার ১৮টি শীর্ষ সম্মেলন হয়েছে। এর একটি সচিবালয়, ১১টি আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠান (যার মধ্যে পাচঁটি কার্যকর), চারটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান আছে এবং পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে সার্কের মাধ্যমে সদস্যভুক্ত দেশগুলো ২৯টি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।

 /এমও/টিএন/

আরও পড়ুন: জঙ্গিবাদের মদদদাতারা অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হবে: প্রধানমন্ত্রী

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সুন্দরবনের আগুন নেভাতে যোগ দিয়েছে নৌ ও বিমান বাহিনী
সুন্দরবনের আগুন নেভাতে যোগ দিয়েছে নৌ ও বিমান বাহিনী
মৌসুমের চতুর্থ হ্যাটট্রিকে রেকর্ডের কাছে রোনালদো  
মৌসুমের চতুর্থ হ্যাটট্রিকে রেকর্ডের কাছে রোনালদো  
জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলায় ভারতীয় বিমান বাহিনীর এক সেনা নিহত
জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলায় ভারতীয় বিমান বাহিনীর এক সেনা নিহত
তীব্র গরমে মরে যাচ্ছে মুরগি, কমেছে ডিম ও মাংসের উৎপাদন
তীব্র গরমে মরে যাচ্ছে মুরগি, কমেছে ডিম ও মাংসের উৎপাদন
সর্বাধিক পঠিত
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি