X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

আকাশপথে অস্ত্র পাচার: শুল্ক গোয়েন্দাদের উদ্বেগ

জামাল উদ্দিন
০৭ অক্টোবর ২০১৬, ২২:৫২আপডেট : ০৭ অক্টোবর ২০১৬, ২২:৫৮

গত ৪ জুন সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর থেকে উদ্ধার করা শটগানের গুলি

খেলনা সামগ্রীর নামে আকাশপথে অস্ত্র পাচারের ঘটনায়  উদ্বিগ্ন শুল্ক গোয়েন্দারা। তাদের প্রশ্ন, নিরাপত্তা ইস্যুতে যেসব দেশ প্রায়ই সতর্কবার্তা জারি করে, সেসব দেশের নামি- দামি বিমানবন্দরের নিরাপত্তাবলয় পেরিয়ে কিভাবে এসব অস্ত্র, গুলি ও অবৈধ পণ্য বাংলাদেশ পর্যন্ত পৌঁছায়। এরইমধ্যে অস্ত্র, গুলি ও অবৈধ পণ্য পাচারের একটি সিন্ডিকেটকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছেন শুল্ক গোয়েন্দারা। ইতোমধ্যে গ্রেফতার হওয়া সিন্ডিকেট সদস্যদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের সূত্র ধরে আরও কয়েকজনকে খুঁজে চলেছেন তারা।

শুল্ক গোয়েন্দারা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, গত ৪ জুন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক আবদুস সবুর সিলেট ওসমানি বিমানবন্দরে আসেন। তিনি সিলেটের বিয়ানিবাজার উপজেলার মাথিউরা গ্রামের আবদুস শহীদের ছেলে। লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে তিনি সরাসরি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে নামেন। নিয়মানুযায়ী তার লাগেজ স্ক্যানিং ও তল্লাশি করতে গিয়ে মেলে ১৫০ রাউন্ড রাইফেলের তাজা গুলি। এ দেখে বিস্ময়ে হতবাক শুল্ক গোয়েন্দারা। কিভাবে হিথ্রো বিমানবন্দরের নিরাপত্তাবলয় পাড়ি দিয়ে তিনি এ পর্যন্ত পৌঁছালেন। এ ব্যাপারে দায়ের হওয়া মামলাটি সিলেটের একটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে বলে জানান শুল্ক গোয়েন্দারা। এছাড়া বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক পণ্য, খেলনা সামগ্রী, রোবট ও ড্রোনসহ বিভিন্ন সামগ্রী অঘোষিতভাবে নিয়ে আসার পর আটক করেন শুল্ক গোয়েন্দারা।

সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর থেকে উদ্ধার করা শটগানের গুলি

গত ২৭ সেপ্টেম্বর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কিছু খেলনা সামগ্রী আটক করেন কাস্টমস কর্মকর্তারা। এ ক্ষেত্রে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে এসব পণ্য নিয়ে আসা হয়েছিল। নয়টি খেলনা পিস্তল নিয়ে কাস্টমস কর্মকর্তাদের মনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। এরপরই র‌্যাবের আর্মস বিশেষজ্ঞ একজন কর্মকর্তাকে ডেকে আনেন তারা। ওই কর্মকর্তা ওইসব খেলনা অস্ত্র দেখে চমকপ্রদ তথ্য দেন। তিনি কাস্টমস গোয়েন্দাদের জানান, এগুলো দৃশ্যত খেলনা পিস্তল মনে হলেও আসল পিস্তল। তিনি বলেন, ‘শুধু ম্যাগাজিনটা বদল করলেই এগুলো দিয়ে ফায়ার করা সম্ভব। র‌্যাবের ওই কর্মকর্তা হাতেকলমে দেখিয়েও দেন বিষয়টি। এরপরই সেগুলো জব্দ করে শতভাগ নিশ্চিত হতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক ল্যাবে ব্যালাস্টিক পরীক্ষার জন্য পাঠিয়ে দেন তারা।

শুল্ক গোয়েন্দারা জানান, এ চালানটি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দুই জার্মান নাগরিক মোহাম্মদ মনির বেগ আলী ও আনিসুল ইসলাম তালুকদার নিয়ে আসেন বাংলাদেশে। বিমান বন্দরের গ্রিন চ্যানেলে শুল্ক কর্তৃপক্ষ তাদের আটক করে বিমানবন্দর থানায় হস্তান্তর করে। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাদের তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানান, তাদের আগে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আরও দুই জার্মান নাগরিক তানভীর হাসান ছোট মনি ও সাবু একই ধরনের আরেকটি চালান নিয়ে দেশে এসেছিল। টাঙ্গাইলের জামিলুর রহমান মিরনসহ ওই দুই ব্যক্তি তাদের নিয়ে যেতে বিমানবন্দর এলাকায় এসেছিল। পরে তাদের আটকের খবর পেয়ে তারা পালিয়ে যায়। এই সিন্ডিকেটের সদস্যদের কারও কারও বিরুদ্ধে হত্যা ও হত্যাচেষ্টা মামলাসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের তথ্যও পেয়েছে পুলিশ। এসব মামলার সর্বশেষ অবস্থাও খতিয়ে দেখছেন তারা।

গত ২৭ সেপ্টেম্বর হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে গ্রেফতার হন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দুই নাগরিক

এ বিষয়ে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এসব পণ্য ও খেলনা সামগ্রী যারা বাংলাদেশে নিয়ে এসেছেন, তাদের গতিবিধি খুবই সন্দেহজনক মনে হয়েছে। গত ২৭ সেপ্টেম্বর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ তাদের আটক করে। তারা পাইলটের কাছে এগুলো খেলনা সামগ্রী বলে উল্লেখ করেছিল। কাগজপত্রও ওইভাবে ঠিক আছে। কিন্তু সন্দেহ হওয়ার পর র‌্যাবের কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানানো হয়। সেখান থেকে একজন বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তা এসে শনাক্ত করেন। এগুলো খেলনার মতো মনে হলেও এগুলো সন্দেহজনক আগ্নেয়াস্ত্র। ম্যাগাজিনটা পরিবর্তন করলেই এটা দিয়ে ফায়ার করা সম্ভব। কিন্তু যে অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে, সেই অবস্থায় ফায়ার করা সম্ভব ছিল না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আটককৃত মনির ও আনিস জার্মানিতে থাকেন। সেখানে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা করেন। কিন্তু তাদের ভাষ্য অনুযায়ী শ্যুটিংয়ে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে খেলনা হিসেবে এসব এনেছিলেন। কিন্তু এটা কোনোভাবেই তাদের প্রফেশনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এজন্য সন্দেহটা আরও বেড়ে যায়। ফলে এগুলো আটক করে ব্যালাস্টিক রিপোর্টের জন্য সিআইডিতে পাঠানো হয়েছে। যেন এ ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যায় যে, এসব আসলেই অস্ত্র কিনা। তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদও করেছে। তাদের কাছ থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এসবের সঙ্গে জড়িত অন্যদের ধরার চেষ্টা করছি। পুরো ঘটনার ফলোআপ করছি আমরা। তবে এখনও পূর্ণাঙ্গ কিছু পাইনি। বিষয়টি পুরোইটাই সন্দেহজনক।’

অবৈধ পণ্য ও অস্ত্র পাচারের সিন্ডিকেট চিহ্নিত করতে পেরেছেন কিনা জানতে চাইলে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের এই মহাপরিচালক বলেন, ‘এই সিন্ডিকেটের সদস্য মনির ও আনিসকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্য সদস্যদেরও ধরার চেষ্টা করছি। এর নেপথ্যে আরও কেউ আছে সেটাও জানার চেষ্টা করছি।’

এভাবে অস্ত্র আসার বিষয়ে জানতে চাইলে মইনুল খান বলেন, ‘আমরা খুবই সজাগ রয়েছি এবং জিরো টলারেন্সে কাজ করছি। কোনও কিছু সন্দেহজনক হলেই আমরা তল্লাশি করছি। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় নিয়ে আসছি। সন্দেহ দূর না হওয়া পর্যন্ত আমরা তদন্ত ও অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছি। নিরাপত্তার বিষয়ে কোনও ছাড় নেই।’ গ্রেফতারকৃতদের সঙ্গে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা পুলিশের তদন্তের ব্যাপার। মনির ও আনিসকে ধরার মাধ্যমে লিংকটা আমরা পেয়েছি। এদের ব্যাপারে আরও গভীরে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।’

অন্যান্য এয়ারপোর্ট পার হয়ে কিভাবে এসব অবৈধ পণ্য ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে বাংলাদেশ পর্যন্ত পৌঁছে গেলো জানতে চাইলে মইনুল খান বলেন, ‘এটা আমাদেরও প্রশ্ন। এসব অবৈধ অস্ত্র কেন কিভাবে এলো? এখানে আমরা ধরে ফেললাম, আর যে দেশ থেকে আসছে, তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী বলে তারা দাবি করেন। বিষয়টি আমাদেরও ভাবিয়ে তুলছে। এর আগে গত জুনে সিলেট এম এ জি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আবদুস সবুর নামের এক যুক্তরাজ্য প্রবাসীর লাগেজ তল্লাশি করে শর্টগানের ১৫০ রাউন্ড গুলি আটক করে কাস্টমস্ কর্তৃপক্ষ।’ নিরাপত্তা ইস্যুতে সতর্ক থাকা যুক্তরাজ্যের মতো একটি দেশের হিথ্রো বিমান বন্দর থেকে কর্তৃপক্ষের চোখ ফাঁকি দিয়ে কিভাবে এসব অস্ত্র বাংলাদেশ পর্যন্ত নিয়ে আসা হলো, সেটি একটি বড় প্রশ্ন মনে করেন তিনি।

/জেইউ/এইচকে/এমএনএইচ/

পড়ুন: বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দুই জার্মান নাগরিক রিমান্ডে

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ভারতকে ১৪৫ রানে থামালো বাংলাদেশ
ভারতকে ১৪৫ রানে থামালো বাংলাদেশ
গুলশানে চোর সন্দেহে পেটানোর পর যুবকের মৃত্যু, একজন গ্রেফতার
গুলশানে চোর সন্দেহে পেটানোর পর যুবকের মৃত্যু, একজন গ্রেফতার
সোমবার যুদ্ধবিরতির আলোচনায় মিসর যাচ্ছেন হামাস প্রতিনিধি
সোমবার যুদ্ধবিরতির আলোচনায় মিসর যাচ্ছেন হামাস প্রতিনিধি
যাত্রাবাড়ীতে গরমে মাংস ব্যবসায়ীর মৃত্যু
যাত্রাবাড়ীতে গরমে মাংস ব্যবসায়ীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
মিয়ানমারে গিয়ে সেনা ট্রেনিং নিলেন ২ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে ঢুকলেন বুলেট নিয়ে
মিয়ানমারে গিয়ে সেনা ট্রেনিং নিলেন ২ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে ঢুকলেন বুলেট নিয়ে