একই নম্বর কখনও আইএস, কখনও আনসারুল্লাহ!

তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদকে যে মোবাইল নম্বর থেকে এসএমএস-এর মাধ্যমে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে সেই একই নম্বর থেকে প্রাণনাশের হুমকি পেয়েছেন বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক। ওই নম্বর থেকেই প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে আরেক বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক মঈনুল আহসান সাবের, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান এবং কবি ইমতিয়াজ মাহমুদকেও।

তবে আনু মুহাম্মদ ও জাফর ইকবাল দম্পতিকে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) নামে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হলেও সেই একই ফোন থেকে মঈনুল আহসান সাবেরকে হুমকি দেওয়া হয়েছে আইএস জঙ্গিদের নামে। আর অধ্যাপক শামসুজ্জামান খানের কাছে হুমকিদাতা পরিচয় দিয়েছে জেএমবি টু নামে।

বেসরকারি মোবাইল অপারেটর এয়ারটেলের একটি নম্বর থেকে তাদের প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। নম্বরটি হচ্ছে ০১৬২৯৯৬৭৫৫১।

তবে হুমকি দেওয়ার ক্ষেত্রে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদকে বলা হয়েছে রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরোধিতা না করতে। আবার অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের উদ্দেশে বলা হয়েছে তিনি অবিশ্বাসী, তাই তাদের হত্যার শীর্ষ তালিকায় রাখা হয়েছে। তবে তার স্ত্রীর অপরাধ সম্পর্কে ক্ষুদে বার্তায় কিছু বলা হয়নি। আর মঈনুল আহসান সাবেরকে জানানো হয়েছে আইএস এর হিটলিস্টের শীর্ষে রাখার কথা। কারণ জানানো হয়নি অধ্যাপক শামসুজ্জামানকেও। তবে তার ওপর ‘ডেনজারাস অপারেশন’ চালানোর হুমকি দেওয়া হয়। কবি ইমতিয়াজ মাহমুদকে কেন হুমকি দেওয়া হয়েছে সে বিষয়টিও নিশ্চিত নয়।

গত বুধবার (১২ অক্টোবর) ওই নম্বর থেকে এসএমএস পাঠিয়ে হুমকি দেওয়া হয় তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদকে। এ ঘটনায় তিনি রাজধানীর রামপুরা থানায় একটি জিডি করেছেন। থানায় জিডি করতে বসে পুলিশের উপস্থিতিতে আবারও একই নম্বর থেকে দ্বিতীয় দফায় এসএমএসের মাধ্যমে হুমকি পান তিনি। ওই এসএমএসে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের পক্ষে অবস্থান নিতে বলা হয়েছে তাকে। কিন্তু হুমকিদাতার পরিচয় আনসারুল্লাহ বাংলা টিম।

এ ঘটনার তিন দিন পার হলেও হুমকিদাতাকে শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। এ ব্যাপারে শুক্রবার রামপুরা থানার এসআই এমদাদ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা এটা নিয়েই কাজ করছি। প্রচুর প্রেসারের (চাপ) মধ্যে আছি। এখনও নম্বরটির প্রকৃত মালিক কে, কিংবা কোথা থেকে এসএমএস পাঠানো হয়েছে, তা জানা যায়নি।’

বুধবারই একই নম্বর থেকে এসএমএস (ক্ষুদেবার্তা) পাঠিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়া হয় লেখক মঈনুল আহসান সাবেরকেও। তাকে লেখা হয়, ‘Welcome to our new top list. you will be killed today or tomorrow’। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে আইএস জঙ্গিদের পরিচয়ে তিনি এই হুমকি পান। তবে এ ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা পরে শনিবার গুলশান থানায় জিডি করেন তিনি।

এরপর শুক্রবার (১৪ অক্টোবর)  রাতে সর্বশেষ হুমকি দেওয়া হয়েছে কথাসাহিত্যিক ও সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল এবং তার স্ত্রী প্রফেসর ড. ইয়াসমিন হককে।

মোবাইল ফোনে হত্যার হুমকি দেওয়ার কথা জানিয়ে সিলেটের জালালাবাদ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আক্তার হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মোবাইল ফোনে হত্যার হুমকি দেওয়ার কথা উল্লেখ করে শুক্রবার প্রফেসর জাফর ইকবাল ও ইয়াসমিন হক থানায় একটি জিডি করেছেন। তাদের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।’

জানা যায়, গত বুধবার জাফর ইকবাল দম্পতি ঢাকায় অবস্থানকালে তাদের মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে হুমকি দেওয়া হয়। জঙ্গি সংগঠন আনসার উল্লাহ বাংলা টিমের পরিচয়ে এ হুমকি দেওয়া হয়েছে।

জিডিতে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১২ অক্টোবর বুধবার স্ত্রীসহ ঢাকায় বনানীর ডিওএইচএসে অবস্থান করছিলেন তারা। ওইদিন রাত সোয়া ১২টায় ইয়াসমিন হকের মোবাইল ফোনে একটি ক্ষুদে বার্তা (এসএমএস) আসে। এতে তাদের হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে।

শুক্রবার সিলেটে ফিরেই জাফর দম্পতি জালালাবাদ থানায় এই সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। ডায়েরি নং ৫৯২ (১৪-১০-২০১৬)।

এসএমএসে 'welcome to our new top list! Your breath may stop at anytime. abt.'এই কথা লিখে পাঠানো হয়েছিল। পরে রাত আড়াইটায় জাফর ইকবালের মোবাইল ফোনে একটি ক্ষুদে বার্তা (এসএমএস) আসে। তাতে লেখা ছিল 'hi unbeliever! We will strangulate you soon.'

এদিকে, অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন বৃহস্পতিবার রাত ১২টা ৪০ মিনিটে তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে এসএমএসটি পাঠানো হয়।  ওই এসএমএসে লেখা রয়েছে, 'ইউ হ্যাভ টু গো টু হেল। উই উইল টেক এ ডেনজারাস অপারেশন অন ইউ। জেএমবি-২।' বিষয়টি তিনি একাডেমির সচিবের মাধ্যমে শাহবাগ থানা পুলিশকে জানিয়েছেন। এ ঘটনায় আজ শনিবার সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার কথা রয়েছে তার।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রামপুরা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কাজী শাহান হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। হুমকি আসা নম্বরটির বিস্তারিত তথ্য বের করতে ডিবিতে পাঠানো হয়েছে। তারা নম্বরের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে আমাদের জানাবে।’

/এআরএল/টিএন/