X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

উবার নিয়ে বিআরটিএ’র তুঘলকি কাণ্ড!

হিটলার এ. হালিম
২৫ নভেম্বর ২০১৬, ২২:৫৫আপডেট : ২৭ নভেম্বর ২০১৬, ০৯:৫০

উবার

রাজধানী ঢাকায় সদ্য চালু হওয়া অ্যাপনির্ভর কার সেবা ‘উবার’-কে বিআরটিএ (বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি) অবৈধ ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। বিআরটিএ দ্রুতগতিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় অনেকেই বিষয়টিকে সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করেছেন। এ সিদ্ধান্তের ফলে কোনও পক্ষকে বিশেষ সুযোগ করে দেওয়া হলো কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

কেউ কেউ বিআরটিএকে দুষছেন এই বলে যে, সিএনজি চালিত অটোরিকশার দৌরাত্ম্য না কমিয়ে সাধারণ মানুষের কল্যাণে চালু হওয়া সাশ্রয়ী বাহন উবারকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। বেশিরভাগ ফেসবুক পোস্টদাতা উবারের প্রশংসা করে বলেছেন, এই বাহন মধ্যবিত্ত যাত্রীকে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারের একটা উপলক্ষ করে দিয়েছিল। বিআরটিএ-র এই সিদ্ধান্তে তা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। 

প্রসঙ্গত, উবার হলো অ্যাপভিত্তিক একটি ট্যাক্সি ক্যাব সেবা। যাত্রী তাদের স্মার্টফোনে গুগল প্লে থেকে উবার অ্যাপ ডাউনলোড করে ডাকতে পারবেন ট্যাক্সি। সেই ট্যাক্সিতে যাত্রী গন্তব্যে পৌঁছে ভাড়া মেটান নগদ টাকা বা কার্ডের মাধ্যমে। উবার ট্যাক্সি সার্ভিস হলেও প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব কোনও গাড়ি নেই। তারা বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের গাড়ি ও চালককে উবারে নিবন্ধন করে যাত্রীসেবা সার্ভিস চালু করে। এই গাড়ি ও যাত্রীর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করিয়ে দিয়ে উবার একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন বা সার্ভিস চার্জ নিয়ে থাকে গাড়ির মালিকের কাছ থেকে।  

বিআরটিএ শুক্রবার গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ঘোষণা দেয় উবার অবৈধ। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অনলাইনভিত্তিক ট্যাক্সি সার্ভিস ‘উবার’ সম্পূর্ণ অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে যা মোটরযান আইন ও বিধির পরিপন্থী। এ ধরনের বেআইনি কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট ‘উবার’ মালিক ও চালকগণকে অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। অন্যথায়, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় স্মার্টফোনে ট্যাক্সিসেবা ‘উবার’ চালু হলো ঢাকায় শীর্ষক প্রকাশিত সংবাদের প্রতি বিআরটিএ-র দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। বিআরটিএ তথা সরকারের অনুমোদন ব্যতীত কোনও ট্যাক্সিক্যাব সার্ভিস পরিচালনা করা সম্পূর্ণ বেআইনি, অবৈধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

বিআরটিএ-র বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ট্যাক্সিক্যাব পরিচালনা হয়ে থাকে ‘ট্যাক্সি ক্যাব সার্ভিস গাইড লাইন-২০১০’ অনুযায়ী। কোনও কোম্পানি ট্যাক্সিক্যাব পরিচালনা করলে তাকে অবশ্যই​ বিআরটিএর মাধ্যমে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অনুমতি নিতে হবে। ভাড়ায় চালিত বা রেন্ট এ কার হিসেবে পরিচালিত মোটরকার ও মাইক্রোবাস পৃথক সিরিজে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। এ ছাড়া মোটরযান বিধিমালা অনুযায়ী প্রতিটি মোটরকার ও মাইক্রোবাসের পৃথক রঙ (কালো বডি ও হলুদ টপ) থাকা এবং মোটরযান অধ্যাদেশ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় রুট পা​রমিট গ্রহণ বাধ্যতামূলক। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিএ’র পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) মো. নুরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাংলাদেশে ট্যাক্সি ক্যাব ব্যবসার লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠানকে।  উবার এই সেবা বিআরটিএ –এর অনুমতি ছাড়া চালু করেছে। এটা গুরুতর অন্যায়। এই ধরনের ট্যাক্সি সার্ভিস চালু বাংলাদেশ আইনে (ট্যাক্সিক্যাব সার্ভিস গাইডলাইন-২০১০) অনুমোদিত না।’

মো. নুরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘উবার ক্যালিফোর্নিয়ায় নিবন্ধিত একটি প্রতিষ্ঠান। বিদেশে নিবন্ধিত একটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন না।’ উবারকে এ দেশে ব্যবসা করতে দিলে ট্যাক্সি ক্যাব সার্ভিস গাইডলাইন-২০১০ পরিবর্তন করতে হবে বলে তিনি জানান।  

এদিকে উবারের জনসংযোগকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে প্রতিষ্ঠানটি থেকে জানানো হয় দুই-একদিনের মধ্যে  বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করা হবে। তবে পরবর্তীতে উবার থেকে পাঠানো বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটির মুখপাত্র বলেছেন, ‘উবার একটি প্রযুক্তিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান যা বিশ্বের ৭৪টি দেশের ৪৫০টি শহরের নাগরিক যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতি ঘটিয়েছে স্মার্টফোনে অ্যাপসের মাধ্যমে। বাংলাদেশ সরকারের ডিজিটাল লক্ষ্যমাত্রায় তাল মিলিয়ে সরকারের সঙ্গে আমরা কাজ করতে চাই। সরকার ও নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে গঠনমূলক সংলাপ ও সম্পৃক্ততার মাধ্যমে দেশের শহরগুলোতে আমরা এ অনন্য সেবা চালু করতে চাই।’

এ বিষয় জানতে চাইল বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি মোস্তাফা জব্বার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি যেকোনও ধরনের সেবার আবির্ভাবকে স্বাগত জানাই।প্রথমত বিআরটিএ এটা কেন বন্ধ  করবে তার কোনও কারণ দেখি না। এটা একটা সার্ভিস, জনগণকে দেওয়ার জন্যই। আর আমার জানা মতে দেশে এমন কোনও আইন নেই যে, একটা অ্যাপ চালু করা যাবে না। অ্যাপটি জনগণের জীবনকে সহজ করে তুলছে, ফলে এটা চালু রাখতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার মনে হয় বিআরটিএ ট্যাক্সি ক্যাব সার্ভিসের জন্য একটা বিধিবিধান মেনে চলে। মনে হয় সেই বিধিবিধানের কারণে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’  বিআরটিএ-কে এই মনোভাব থেকে সরে এসে জনগণের সেবার মনোভাবের প্রতি মনোনিবেশ করার আহ্বান জানান তিনি।

চাকরিবিষয়ক ওয়েবসাইট বিডিজবসের প্রধান নির্বাহী ফাহিম মাশরুর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘উবার কি সে সম্পর্কে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের সঠিক কোনও ধারণা নেই। যতক্ষণ পর্যন্ত উবার গ্রাহক থেকে টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে নিচ্ছে না ততক্ষণ পর্যন্ত টেকনিক্যালি উবার নিজে কোনও ট্যাক্সি বা রেন্ট-এ-কার সার্ভিস দিচ্ছে না। উবার-এর বিজনেস মডেল হচ্ছে ট্যাক্সি বা রেন্ট-এ-কার মালিকদের কাছ থেকে রেফারেল ফি বা কমিশন নেওয়া। আইনগতভাবে এক্ষেত্রে অনেকটা ই-কমার্স বা এফ-কমার্স প্রতিষ্ঠানের জন্য ফেসবুক যেমন একটি প্লাটফর্ম, উবারও সেরকমই একটি প্লাটফর্ম।

ফাহিম মাশরুর আরও বলেন, ‘উবার ভালো করেই জানে এই আইনগত ব্যাপারটি। না জানার কোনও কারণ নেই। তারা গত এক বছর ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা বাংলাদেশের জন্য দুটি জিনিস করেছে - প্রথমত তারা শুধুমাত্র রেন্ট-এ-কার লাইসেন্স যাদের আছে তাদেরকেই রেজিস্ট্রেশন করিয়েছে গাড়ির মালিক বা ড্রাইভার হিসাবে। এটি তারা করেছে যাতে যে কোনও আইনগত দায় গাড়ির মালিকের কাছে থাকে। আইনগত ভাবে রেন্ট-এ-কার মালিক এই ক্ষেত্রে প্রধান পার্টি উবার থেকে শুধু প্লাটফর্ম আর রেফারেল সার্ভিস নিচ্ছে। দ্বিতীয়ত উবার সচেতনভাবে ক্রেতার সাথে সরাসরি কোনও আর্থিক লেনদেনে যাচ্ছে না (যেটি বিদেশে উবার করে থাকে- ক্রেডিট কার্ড বা মোবাইল পেমেন্ট দিয়ে)। এই দিক থেকেও উবার নিজে কোনও পার্টি না।’

অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট আরিফ জেবতিক ফেসবুকে লিখেছেন, বিআরটিএর কর্মতৎপরতা দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে গেছি। এরা উবার চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পড়িমড়ি করে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে জানিয়েছে যে, উবার বাংলাদেশের ট্যাক্সিক্যাব সার্ভিস গাইডলাইন -২০১০ অনুসরণ করছে না তাই উবার বেআইনি সার্ভিস, বাংলাদেশে উবার চালানো যাবে না।বিষয়টি দেখে আমার সেই পাগলের কথা মনে পড়ল, যে একটা হাতে কাগজ নিয়ে ঘুরে বেড়াত আর চিল্লাতো, বউ নাই তো কী হয়েছে, এই যে হাতে কাবিন আছে।’

দুটি গোষ্ঠীর হাতে দেশের ট্যাক্সিক্যাব ব্যবসা জিম্মি উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, এই দুই দলেরই পরিবহন সেক্টরে ন্যূনতম কোনও অভিজ্ঞতা নেই। এরা প্রয়োজনীয় সংখ্যক ট্যাক্সি নামাতে পারেনি, আমি গত দুই মাসে আমার চলাচলের পথে একটাও হলুদ ট্যাক্সি দেখিনি- সুতরাং এর অপর্যাপ্ততা নিয়ে আমার কোনও সন্দেহ নেই। বিআরটিএ এখন সেই ট্যাক্সি সার্ভিসের দোহাই দিয়ে এই দেশে উবার চালু হতে দেবে না।

আরিফ জেবতিক আরও লিখেছেন, দেশে উবার চালু হওয়ার সপ্তাহ যেতে না যেতে বিআরটিএ কেন বিজ্ঞপ্তি দিতে লাফিয়ে পড়ে, সেটা বুঝতে হলে বড় বিশারদ হতে হয় না। উবার সমর্থন করি, গণপরিহনের নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ হওয়া প্রতিটি ছোটবড় উদ্যোগকে সমর্থন করি।

/এইচএএইচ/এএ/



আরও পড়ুন: 

বাংলাদেশকে স্বাধীনতা দিতে রাজি ছিল পাকিস্তান: কিসিঞ্জার

জেলা পরিষদ নির্বাচনে আ.লীগের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা

এবার ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে দুই শিক্ষিকাকে উত্ত্যক্তের অভিযোগ

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
প্রধানমন্ত্রী দেশের পথে
প্রধানমন্ত্রী দেশের পথে
সুঁই-সুতোয় ‘স্বপ্ন বুনছেন’ ভোলার আমেনা খানম
সুঁই-সুতোয় ‘স্বপ্ন বুনছেন’ ভোলার আমেনা খানম
ভিজিএফের চাল না পাওয়া উপকারভোগীদের মানববন্ধনে হামলা
ভিজিএফের চাল না পাওয়া উপকারভোগীদের মানববন্ধনে হামলা
রাফাহ শহরে নতুন করে  ইসরায়েলি হামলায় ১৩ ফিলিস্তিনি নিহত
রাফাহ শহরে নতুন করে ইসরায়েলি হামলায় ১৩ ফিলিস্তিনি নিহত
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ