অমর একুশে বইমেলা শুরু হতে আর দেরি নেই। তবে বইমেলা শুরু হওয়ার আগেই ধর্মীয় উন্মাদনা ছড়াতে পারে, এমন বই প্রকাশের ওপর নজরদারি শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের অভিমত, কেউ যেন গোপনে কোনও বিতর্কিত বই প্রকাশ করতে না পারে, তা প্রতিরোধ করতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
রোববার সকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সদর দফতরে একুশে বইমেলা ২০১৭ উপলক্ষে এক সমন্বয় সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হয়। ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন ডিএমপির ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা, পুলিশের বিশেষ শাখা সহ সকল গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. আমজাদ আলী এবং বাংলা একাডেমির সচিব আনোয়ার হোসেন।
এ প্রসঙ্গে আনোয়ার হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ধর্মীয় উন্মাদনা ছড়ানোর মতো বিতর্কিত বই প্রকাশ রোধে সাদা পোশাকে পুলিশ ও গোয়েন্দারা কাজ করবেন বলে ডিএমপি কমিশনার সমন্বয় সভায় আমাদের জানিয়েছেন। আমরাও আমাদের মতো অনুসন্ধান করবো, যাতে কেউ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে এমন বই প্রকাশ করতে না পারে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, বইমেলাকে কেন্দ্র করে এক শ্রেণির প্রকাশক বিতর্কিত বিষয়, বিশেষ করে ধর্মীয় উন্মাদনা ছড়ায় এমন বই প্রকাশ করেন। এবার এ ধরনের বই প্রকাশিত হওয়ার আগেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা চলছে। একই সঙ্গে বইমেলায় প্রকাশিত বইয়ের কারণে ধর্মীয় উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর লক্ষ্যে পরিণত হতে পারেন, এমন লেখক-প্রকাশকদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য শনাক্ত করা হচ্ছে।
গোয়েন্দা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ ধরনের বই প্রকাশ করতে পারে এমন প্রকাশনীর বিষয়ে বাংলাবাজারে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি বইমেলার প্রথম দিন থেকেই প্রতিটি স্টলে গিয়ে প্রকাশিত বইগুলো সম্পর্কে খোঁজ খবর নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি এবং অন্যপ্রকাশের স্বত্বাধিকারী মাজহারুল ইসলাম এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, লেখকদের অবশ্যই যে কোনও মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। কিন্তু তাই বলে কেউ যা খুশি লিখবে বা প্রকাশ করবে, এটা ঠিক নয়। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত বা ধর্মবিদ্বেষী বই লেখা বা প্রকাশ থেকে বিরত থাকা উচিৎ। তবে কেউ যেন অকারণে অভিযুক্ত না হয়, সেজন্য পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণের পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
প্রসঙ্গত, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে গত বছর বইমেলা চলার সময় ব-দ্বীপ প্রকাশনীর স্টল বন্ধ করে দেয় পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় প্রকাশনীটির মালিক শামসুজ্জোহা মানিক, কর্মকর্তা ফকির তসলিম উদ্দিন কাজল ও লেখক শামসুল আলম চঞ্চলকে। ‘ইসলাম বিতর্ক’সহ ছয়টি বই জব্দও করা হয়।
এবারও বইমেলায় কঠোর নিরাপত্তা
গতবারের মতো এবারও বইমেলায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। বইমেলা প্রাঙ্গণে অস্থায়ী কন্ট্রোল রুম স্থাপনের পাশাপাশি টিএসসি ও দোয়েল চত্বর এলাকায় ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। এবারও আর্চওয়ে দিয়ে মেলায় প্রবেশ করতে হবে সবাইকে। পুরো বইমেলা এলাকা সিসিটিভির আওতায় আনা হবে। বইমেলাসহ আশেপাশের এলাকায় থাকবে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা। সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও সোয়াট টিম থাকবে।
/এএআর/আপ-এমডিপি/