X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

শহর ফিরছে গ্রামে

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২২ জুন ২০১৭, ২৩:২৯আপডেট : ২৩ জুন ২০১৭, ১৭:১৮

ঈদ উদযাপনের লক্ষ্যে গ্রামের পথে রাজধানীবাসীর যাত্রা রাজধানীর বাস ও লঞ্চ টার্মিনাল, রেলওয়ে স্টেশন— সবখানেই এখন মানুষের উপচেপড়া ভিড়। সাধারণ সময়ের তুলনায় এসব জায়গায় এখন মানুষের উপস্থিতি কয়েক গুণ। সব জায়গার চিত্রও এক— স্বামী-স্ত্রী, সন্তানসহ গোটা পরিবারের সময় কাটছে দাঁড়িয়ে কিংবা বসে। অপেক্ষা কাঙ্ক্ষিত যানবাহনের।

সারাবছরের নাগরিক জীবনের ক্লান্তি-শ্রান্তি শেষে এই তো সুযোগ শিকড়ে ফেরার। তাই তো মহাসড়কে ঈদযাত্রার শত ভোগান্তি আর টিকিট সংগ্রহের নানান ঝক্কি সত্ত্বেও গ্রামে ফিরতে শুরু করেছেন কর্মসূত্রে রাজধানীবাসী। একইভাবে গ্রামও যেন বরণ করে নিতে প্রস্তুত তার শহরবাসী স্বজনদের।

রাজধানীবাসীর অনেকেই বছরে কেবল দুই ঈদেই সুযোগ পান বাড়ি যাওয়ার। তাই ঈদ যাত্রার সময় যেন সারাবছরের যাত্রীর চাপ তৈরি হয় বাস, লঞ্চ, ট্রেনে! ঈদের সপ্তাহ দুয়েক আগে থেকেই শুরু হয় ঘরে ফিরতে ব্যাকুল মানুষদের টিকিট সংগ্রহের যুদ্ধ। ঈদ মৌসুমে এই টিকিট যেন হয়ে ওঠে সোনার হরিণ। একটি টিকিটের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয় লাইনে। কেউ কেউ টিকিট সংগ্রহের জন্য কাউন্টারে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন সেহরির পর থেকেই। ৫-৬ ঘণ্টা অপেক্ষার পর হয়তো মেলে টিকিট। তারপরই যেন সব কষ্ট দূর হয়ে যায়। ঈদ যাত্রার বাস, ট্রেন বা লঞ্চের টিকিট হাতে পাওয়াটা যেন তাদের কাছে যুদ্ধজয়ের মতোই।

টিকিটের পর গ্রামে স্বজনদের কাছে ফিরতে দিতে হয় আরেক ধৈর্যের পরীক্ষা। যানবাহনের চাপ হঠাৎ কয়েক গুণ হয়ে যাওয়ায় মহাসড়কগুলোতে শুরু হয় তীব্র যানজট। এ কারণে এলোমেলো হয়ে পড়ে ঈদ যাত্রার সময়সূচি। কখনও কখনও বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ট্রেনের শিডিউলেও বিপর্যয় দেখা দেওয়া নতুন কিছু নয়।

ঈদ উদযাপনের লক্ষ্যে গ্রামের পথে রাজধানীবাসীর যাত্রা লঞ্চের ক্ষেত্রে অবশ্য এমন ঘটনা খুব একটা দেখা যায় না। তবে সকালের বাস বা ট্রেন বিকালে ছাড়ার ঘটনাও ঈদের সময় হরহামেশাই ঘটে। ফলে পরিবার নিয়ে বাস টার্মিনাল বা রেল স্টেশনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ক্লান্তিকর অপেক্ষার সাক্ষী হতে হয় গ্রামমুখী রাজধানীর বাসিন্দাদের। তবে নাড়ির টান সব ভুলিয়ে রাখে তাদের! তাই কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষার পরই বাস বা ট্রেনে চড়তে পারলেই যেন সব ক্লান্তি উধাও।

অবশ্য ঈদ যাত্রার ধৈর্যের পরীক্ষা এখানেই শেষ নয়। মহাসড়কেও চার ঘণ্টার যাত্রা ১২-১৪ ঘণ্টাতেও শেষ না হওয়ার উদাহরণ রয়েছে নিকট অতীতেই। বিশেষ করে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে আশুলিয়া-বাইপাইল-চন্দ্রা এলাকা; ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে গাজীপুর চৌরাস্তা ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মেঘনা সেতুর ঢাল থেকে গোমতী সেতু পর্যন্ত, এমনকি কুমিল্লা পর্যন্ত যানজট প্রতি বছরের নিয়মিত চিত্র। এছাড়া আরিচা-পাটুরিয়া কিংবা মাওয়া ঘাটেও রাতে পৌঁছে সকালে ফেরি পারাপার হওয়ার ঘটনা শুনেও কেউ আর অবাক হন না। ঈদ যাত্রায় এমন দীর্ঘ যানজটের মুখোমুখি হওয়ার মানসিক প্রস্তুতিও নিয়েই রাখেন যাত্রীরা।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী সোম বা মঙ্গলবার উদযাপিত হবে ঈদুল ফিতর। এ উপলক্ষে বুধবার (২১ জুন) থেকেই শুরু হয়েছে রাজধানী থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা। প্রথম দিনে রাজধানীর গাবতলী, সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাস টার্মিনালে খুব বেশি মানুষের ভিড় দেখা যায়নি।

তবে সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার (২২ জুন) দুপুরের পর থেকেই এসব বাস টার্মিনালে দেখা গেছে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। এসব স্থানে যাত্রী হয়রানির ঘটনা না থাকলেও রাস্তায় যানবাহনের চাপের কারণে বাসের শিডিউল খানিকটা এলোমেলো হয়েছে। অনেক যাত্রীকেই তাই দেখা গেছে বাসের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে। যাত্রাপথে যানজটের অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও তাই তাদের চোখে-মুখে ছিল ঘরে ফেরার আনন্দ।

ঈদ উদযাপনের লক্ষ্যে গ্রামের পথে রাজধানীবাসীর যাত্রা একই চিত্র দেখা গেছে রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন এবং সদরঘাটের লঞ্চ টার্মিনালেও। ট্রেন ও লঞ্চের জন্য সপরিবারে অপেক্ষা করছেন যাত্রীরা। তাদের সবার বক্তব্য একই— গ্রামে থাকা স্বজনদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য সব ধরনের কষ্টই যেন সহ্য করতে রাজি তারা।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন তৌহিদ হাসান। ঈদ উপলক্ষে বাড়ি যাওয়ার অনুভূতি জানিয়ে বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। বছরে তেমন ছুটি পাওয়া যায় না। তাই গ্রামে যাওয়ার সুযোগ হয় মাত্র দুই বার, তা-ও দুই ঈদে। সেই কোরবানি ঈদের পর আবার বাড়ি যাচ্ছি। বাড়িতে বৃদ্ধ মা আছেন। কতদিন পর মাকে দেখবো! অনেক কষ্টে বাসের টিকিট সংগ্রহ করেছি। মনে হচ্ছে অনেকদিনের স্বপ্ন সত্যি হচ্ছে!’

একই কথা বললেন সরকারি কর্মকর্তা হাবীবুর রহমান। নওগাঁ যাবেন তিনি। বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন গাবতলী বাস কাউন্টারে। তার বাস ছাড়ার নির্ধারিত সময় ছিল সকাল ১১টা। তবে তা দুপুর ১২টায় ছাড়বে বলে কাউন্টার থেকে জানানো হয়েছে। এ নিয়েও তার অভিযোগ নেই। হাবীবুর বলেন, ‘রাস্তার যে অবস্থা, এটুকু দেরি কোনও সমস্যা না। এই পরিস্থিতি মেনে নিতে হবে। আর বাড়ি যাচ্ছি, এটাই বড় কথা।’

ঈদ উদযাপনের লক্ষ্যে গ্রামের পথে রাজধানীবাসীর যাত্রা তৌহিদ হাসান বা হাবীবুর রহমানের মতো মানুষদের বরণ করে নিতে প্রস্তুত তাদের গ্রামও। গ্রাম ও শহরবাসী স্বজনরা একে অপরের সান্নিধ্যে আসার সুযোগ পান এই দুই ঈদেই। তাই ঘরমুখী স্বজনদের প্রতীক্ষায় দিন গুনতে থাকেন তারাও। শহর থেকে সাত-আট মাস পর ঘরে ফেরা ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনিদের জন্য তাই ঘরে ঘরে প্রস্তুতি চলে পিঠা-পায়েস তৈরির। প্রিয়জনদের কাছে পাওয়াটা তাদের ঈদ আনন্দকে বাড়িয়ে দেয় কয়েক গুণ।

রবিবার (২৫ জুন) থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হচ্ছে ঈদের ছুটি। তবে সরকারি অফিসসহ অনেক প্রতিষ্ঠানেই শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটি। যাদের সাপ্তাহিক ছুটি কেবল শুক্রবার, তাদের অনেকে শনিবারের দিনটি ছুটি নিয়েছেন। ফলে অনানুষ্ঠানিকভাবে বৃহস্পতিবারই শুরু হয়েছে ঈদের ছুটি। তাই ফাঁকা হতে শুরু করেছে ঢাকা। ধীরে ধীরে গ্রামেও পৌঁছাতে শুরু করেছেন শহরবাসীরা। এসব মানুষের হাত ধরে যেন শহর ফিরছে গ্রামে।

ছবি: নাসিরুল ইসলাম ও সাজ্জাদ হোসেন
/এমটি/জেএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মেসির জোড়া গোলে মায়ামির আরেকটি জয় 
মেসির জোড়া গোলে মায়ামির আরেকটি জয় 
কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার ৫ ইউনিয়নে চলছে ভোট গ্রহণ
কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার ৫ ইউনিয়নে চলছে ভোট গ্রহণ
যাদের স্যালাইনে বাঁচে প্রাণ, তাদের মজুরি বাড়ে না
১৬ শ্রমিকের উৎপাদিত স্যালাইন দিয়ে চলছে ৯ জেলার হাসপাতালযাদের স্যালাইনে বাঁচে প্রাণ, তাদের মজুরি বাড়ে না
সিলেটে ট্রাকের ধাক্কায় ৩ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
সিলেটে ট্রাকের ধাক্কায় ৩ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
সর্বাধিক পঠিত
তাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
প্রাক-প্রাথমিক বন্ধই থাকছেতাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
মিয়ানমারে গিয়ে সেনা ট্রেনিং নিলেন ২ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে ঢুকলেন বুলেট নিয়ে
মিয়ানমারে গিয়ে সেনা ট্রেনিং নিলেন ২ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে ঢুকলেন বুলেট নিয়ে