X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘ভয়ের দণ্ড খাড়া রাখা!’

উদিসা ইসলাম
১১ জুলাই ২০১৭, ১৮:০৯আপডেট : ১২ জুলাই ২০১৭, ১০:২৯

৫৭ ধারা তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ‘বিতর্কিত’ ৫৭ ধারা পরিবর্তন করে ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের’ ১৯ ধারায় একই বিষয়বস্তু সন্নিবেশিত করার প্রক্রিয়া চলছে। নতুন নামে আইনটি আনা হলেও এর অপপ্রয়োগ বন্ধ হবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগীরা। তারা বলছেন, নামে বা বেনামে এই ধারা রাখার মানে হচ্ছে ‘ভয়ের দণ্ড খাড়া রাখা।’ নাম পাল্টে একই আইন রাখা হলে তা মেনে নেওয়া হবে না।

৫৭ ধারার প্রয়োগ সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, ব্লগার ও সাংবাদিকদের ওপর। ভুক্তভোগীরা বলছেন, নতুন কোনও আইনে এই ধারা সংযোজিত করার পর ৫৭ ধারা তুলে দেওয়া হবে বলে যে দাবি করা হচ্ছে, সেটা অর্থহীন। পেশাগত শঙ্কায় থাকা সাংবাদিক নেতাদের দাবি, বিশেষ আইন দিয়ে সাংবাদিকদের চাপে রাখার যে প্রবণতা, সেখান থেকে বেরিয়ে আসুক সরকার।

৯ জুলাই আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান, ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট’ আগস্টের মাঝামাঝি আসবে। এ আইনের ১৯ ধারায় একই বিষয়গুলো যুক্ত করা হবে। এ কথা জানানোর পর অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা বলছেন, এমন হলে ৫৭ ধারার বিরুদ্ধে শুরু থেকে তারা যে প্রতিবাদ করে এসেছেন সেটি অব্যাহত রাখবেন। ৫৭ ধারা বাদ দেওয়া হচ্ছে বলে আইনমন্ত্রী যা বলেছেন, তা এক ধরনের প্রতারণা। কারণ কিছুই বাদ দেওয়া হচ্ছে না।

৫৭ ধারা প্রধানমন্ত্রীর গণমাধ্যম সংক্রান্ত চেতনার পরিপন্থী বলে অভিহিত করেছেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতা মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রীর গণমাধ্যমবান্ধব একটা অবস্থান আছে বলেই তিনি ফৌজদারি দণ্ডবিধি ৫০০ থেকে ৫০২ সংশোধনী করেছেন। এর মাধ্যমে পেশাগত কারণে কোনও সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হলে গ্রেফতার করা যাবে না, তবে সমন জারি করা যাবে। এধরনের সংশোধনীর মধ্য দিয়ে পেশাগত সাংবাদিকের মর্যাদা দিলেন তিনি।আবার উল্টো দিক থেকে ৫৭ ধারায় ঠুনকো অজুহাত প্রমাণিত হোক বা না হোক গ্রেফতার করা হবে এবং জামিন হবে না। এটা গণমাধ্যমের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর যে স্পিরিট তার বিরোধী।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই আইন নিয়ে শুরু থেকেই আমাদের আপত্তি থাকায় বলা হয়েছিল ‘অপব্যবহার হবে না’, কিন্তু তা হচ্ছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের খসড়া নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। নতুন আইন যদি ৫৭ ধারার কপি হয় তাহলে সেটা মেনে নেব না। নাম পরিবর্তন হবে কিন্তু অপপ্রয়োগ অব্যাহত থাকবে, এটি কাম্য নয়। এমন কোনও আইন করা উচিত হবে না যে আইনের মধ্য দিয়ে সাংবাদিক নির্যাতন করা যায়। সাংবাদিকরা কোনও ফৌজদারি অপরাধ করলে অবশ্যই শাস্তি হবে, তবে দেশের প্রচলিত আইনের মধ্য দিয়ে। বিশেষ কোনও আইন দিয়ে তাদেরকে চাপের মধ্যে রাখার প্রবণতা থেকে সরকার সরে আসবে বলে মনে করি।’

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী এধরনের নাম পাল্টে নির্যাতনের ধারা বহাল রাখার বিরোধিতা করে বলেন, ‘ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন মনে করে,সরকারের যে কোনও আইন করার অধিকার আছে। কিন্তু সাংবাদিকের কণ্ঠ রোধ করতে কোনও আইন প্রণয়ন করা হলে তা মেনে নেওয়া হবে না।’

অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট বাকী বিল্লাহর মতে, সরকার অনলাইনের বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে এ ধরনের ধারা সন্নিবেশিত করছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এ প্রক্রিয়াটার সঙ্গেই একমত নই। ধর্ম বা রাষ্ট্র নিয়ে কথিত অবমাননার ব্যাপারটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে তা ঠেকানো প্রচলিত আইনেই সম্ভব। এটা পরিবর্তন করে যে কোনও উপায়ে ওই আদলে টিকিয়ে রাখতে চাই না।’

তিনি বলেন, ‘প্রচুর মামলা দেখেছি মিডিয়া থেকে শুরু করে অনলাইন ব্যবহারকারীদের নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা হচ্ছে। নামে বা বেনামে এই ধারা টিকিয়ে রাখার মানেই কথা বলার ওপর ভয়ের দণ্ড খাড়া করে রাখা।’

২০১৫ সালে এই ৫৭ ধারা বাতিল চেয়ে করা মামলায় এই আইনের অভিযোগ আমলে নেওয়ার প্রক্রিয়াগত ত্রুটি, ভিন্ন মাধ্যমে মত-প্রকাশের কারণে কঠোর শাস্তির বিধান, সংবিধানে আইনের সমতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ার মতো বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছিল বলে জানান ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।

বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘আইনটি বাতিলের ক্ষেত্রে নতুন কোনও আইন যেন একই ধরনের পীড়নমূলক পদ্ধতি নিয়ে হাজির না হয়, তা বিবেচনা জরুরি। দীর্ঘদিন ধরে আইসিটি অ্যাক্টের ৫৭ ধারা বাতিলের ঘোষণা শোনা গেলেও একই ধারার আদলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়া হয়েছে। যে নামেই আসুক এ পরিস্থিতিতে মত-প্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে বড় রকমের পরিবর্তন আসবে বলে মনে করার কারণ নেই।’

ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের খসড়া প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশ অ্যাসোশিয়েশন অফ সফটওয়ার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিস (বেসিস) সভাপতি মোস্তফা জব্বার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই আইনের খসড়ার ৪৪ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে, এটি যখনই প্রণীত হবে তখন তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারাসহ বেশ কয়েকটি ধারা রহিত হবে। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের ১৯ ধারায় তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার বিষয়গুলো সন্নিবেশিত হয়েছে একটু সুস্পষ্টভাবে।’

নতুন আইনের অপ-প্রয়োগের আশঙ্কা প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘এখনই কোনও মন্তব্য করার সুযোগ নেই।খসড়ার কাজ শেষ হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘যারা বলছেন, ৫৭ ধারা ও ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট-এর ১৯ ধারা একই, তাদের বলি, এটি এখনও আইন হয়নি। অনেক বিবেচনা বিচার বিশ্লেষণের সুযোগ আছে।’

/ইউআই/এসটি/ এপিএইচ/

আরও পড়ুন: 

হানিফ ফ্লাইওভারের সিঁড়ির প্রবেশপথ বন্ধ করেছে ডিএসসিসি

ফের চট্টগ্রামের গোয়েন্দা কার্যালয়ে এসপি বাবুল

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ছদ্মবেশে অভিযান চালিয়ে সাড়ে ১২ লাখ ইয়াবা উদ্ধার, নদীতে ঝাঁপিয়ে পালালো পাচারকারীরা
ছদ্মবেশে অভিযান চালিয়ে সাড়ে ১২ লাখ ইয়াবা উদ্ধার, নদীতে ঝাঁপিয়ে পালালো পাচারকারীরা
তীব্র গরমে কাজ করার সময় মাথা ঘুরে পড়ে দিনমজুরের মৃত্যু
তীব্র গরমে কাজ করার সময় মাথা ঘুরে পড়ে দিনমজুরের মৃত্যু
বাংলাদেশে সামাজিক বিমা প্রবর্তনের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে: মন্ত্রিপরিষদ সচিব
বাংলাদেশে সামাজিক বিমা প্রবর্তনের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে: মন্ত্রিপরিষদ সচিব
ট্রাকের চাকায় পিষে দেওয়া হলো ৬ হাজার কেজি আম
ট্রাকের চাকায় পিষে দেওয়া হলো ৬ হাজার কেজি আম
সর্বাধিক পঠিত
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
আজ কি বৃষ্টি হবে?
আজ কি বৃষ্টি হবে?
চার বছরে আট ফ্লপ, আসছে আরও এক হালি!
চার বছরে আট ফ্লপ, আসছে আরও এক হালি!
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড