X
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪
৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

নূর চৌধুরীকে ফেরত দিতে চেয়েছিল কানাডা

শেখ শাহরিয়ার জামান
০৮ আগস্ট ২০১৭, ২২:২৮আপডেট : ১০ আগস্ট ২০১৭, ০৩:৩৬

নূর চৌধুরী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারী নূর চৌধুরীর রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন কানাডার অভিবাসন কোর্ট এবং সর্বোচ্চ আদালত নাকচ করে দিয়ে তাকে ফেরত পাঠানোর আদেশ দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তাকে ফেরত পাঠানোর জন্য ২০০৬ সালে কানাডা সরকার একটি চিঠি দেয় বাংলাদেশকে। কিন্তু তৎকালীন বিএনপি সরকারের অনাগ্রহের ফলে কানাডার প্রি-রিমোভাল রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট  বিধির সুযোগ নিয়ে সে দেশে অবস্থান করছেন নূর চৌধুরী। এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের ফেরত আনা বিষয়ক টাস্কফোর্সের প্রধান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘আমরা সুযোগটি হারিয়েছি। আমরা তাকে পেতাম। কিন্তু তারা তো এটা করেনি।’

এখানে উল্লেখ্য নূর চৌধুরীর রাজনৈতিক আশ্রয় আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়। তাকে প্রত্যাবাসন করার নির্দেশ দেওয়ার সময়ে তার মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে মামলার আপিল সুপ্রিমকোর্টে বিবেচনাধীন ছিল। অর্থাৎ তার মৃত্যুদণ্ড হবেই, এটি নিশ্চিত ছিল না।

 কূটনৈতিক সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালে কানাডা সরকার নূর চৌধুরীকে কূটনৈতিক পাসপোর্ট অটোয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসে ফেরত দেয়। তাকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে তারা ইতিবাচক সেটি জানায়। নূর চৌধুরী সরকারের অনাগ্রহের সুযোগ নিয়ে কানাডার অভিবাসন আইনজীবী বারবারা জ্যাকসনের শরণাপন্ন হন এবং কানাডার অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসে ২০০৭ সালের মাঝামাঝি তাকে ফেরত না পাঠানোর জন্য একটি আবেদন করেন।

নূর ‘প্রি-রিমোভাল রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট’ বিধির সুযোগ নিয়ে কানাডায় আছেন। তার আবেদনে বলা হয়েছে, তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হলে তার মৃত্যুদণ্ড হবে। এখন পর্যন্ত সেই আবেদনের নিষ্পত্তি করেনি অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস। কানাডার আইন অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত কোনও ব্যক্তিকে তার দেশে ফেরত পাঠানো হয় না।

এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আজ কানাডায় নূর চৌধুরীর ডিপোর্টেশন আদেশ হয়ে গেছে কিন্তু তারা বলছে, বাংলাদেশে এলে তাকে ফাঁসি দেওয়া হবে, আমরা তাকে দেব না।’ তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার এফআইআর হয় এবং এর বিচার সম্পূর্ণভাবে শেষ হয় ২০০৯ সালে। এটি শেষ করতে এত দেরি না হলে এখন যে দেশগুলো মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করছে, তাদের সেই অবস্থান তখন ছিল না। ওই সময়ে হলে তাদের ফেরত আনতে আমাদের সুবিধা হতো।

বঙ্গবন্ধুর আরেক খুনি এ কে এম মহিউদ্দিনের রাজনৈতিক আশ্রয় আবেদন যুক্তরাষ্ট্রে খারিজ হওয়ার পর ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাকে দেশে ফেরত আনে। পরবর্তী সময়ে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

শরিফুল হক ডালিম, মোসলেম উদ্দিন, রাশেদ চৌধুরী ও আবদুল মাজেদ

রাশেদ চৌধুরী অবস্থান

এদিকে বঙ্গবন্ধুর আরেক খুনি রাশেদ চৌধুরী বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে অবস্থান করছেন বলে জানান আইনমন্ত্রী। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত দিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আজ এতটুকু বলতে পারি, আমাদের আলোচনার যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে।’

এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল মঙ্গলবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফেরত আনার জন্য জাতীয় টাস্কফোর্স গতমাসে একটি বৈঠক করেছে। ওই বৈঠকে খুনিদের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

সরকারের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিভিন্ন আলোচনায় রাশেদ চৌধুরীর ফেরত আনার বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, ২০১৪ সালে ওয়াশিংটনে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বিষয়টি আলোচিত হয়েছে। পরের বছর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সঙ্গে আলোচনার সময়ে বিষয়টি আলোচিত হয়।

এর তিন মাস পর রাশেদ চৌধুরীকে দেশে ফেরত আনার জন্য নিউ ইয়র্কের আইন সংস্থা স্কাডেন এলএলপিকে নিয়োজিত করে সরকার। এ সংস্থাটির পক্ষে রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত আনার বিষয়টি তদারকি করছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সাবেক আইনি পরামর্শক গ্রেগরি ক্রেইগ।

গ্রেগরি ক্রেইগ ও স্কাডেন এলএলপি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি, আইন মন্ত্রণালয়, অভিবাসন মন্ত্রণালয় ও  অন্যান্য কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করেছেন।

ওই কর্মকর্তা বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী গত বছরের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের আইন মন্ত্রণালয়ে একটি আনুষ্ঠানিক পত্রে রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানায়। পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক গত জুনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি এবং যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের সিনিয়র ডিরেক্টর লিসা কার্টিসের সঙ্গে বৈঠকে রাশেদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে দিতে পুনরায় অনুরোধ জানান।

আবদুর রশীদ

সরকারের আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, বঙ্গবন্ধুর আরেক খুনি আব্দুর রশিদ পাকিস্তানে আছে, এ বিষয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে তথ্য পেয়ে গত ডিসেম্বরে তার সম্পর্কে জানতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছিল বাংলাদেশ। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত ওই চিঠির কোনও জবাব দেয়নি পাকিস্তান।

শরিফুল হক ডালিম

শরিফুল হক ডালিম প্রসঙ্গে সরকারের একজন কর্মকর্তা বলেন, বঙ্গবন্ধুর আরেক খুনি শরিফুল হক ডালিম পাকিস্তান, কেনিয়া, লিবিয়া এমনকি ইউরোপে অবস্থান করছেন, এমন ধরনের অসমর্থিত তথ্য সরকারের কাছে আছে। তিনি বলেন, আমরা সর্বশেষ জানতে পেরেছি, তিনি স্পেনে অবস্থান করছেন।

মোসলেম উদ্দিন

বঙ্গবন্ধুর আরেক খুনি মোসলেম উদ্দিনের জার্মানিতে অবস্থানের বিষয়টি সম্প্রতি জানতে পারে সরকার। সরকারের এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় করেছি। জার্মান কর্তৃপক্ষ মোসলেম উদ্দিন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিতে বলেছে বাংলাদেশকে।

এছাড়া আবদুল মাজেদের বিষয়ে সর্বশেষ কোনও অবস্থানের কথা নিশ্চিত করতে পারেনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফেরত আনার প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, সর্বোচ্চ আদালতের রায় কার্যকরের প্রচেষ্টা সরকার চালিয়ে যবে। যতক্ষণ পর্যন্ত না এই রায় কার্যকর হচ্ছে, ততক্ষণ আমাদের  চেষ্টা থামবে না। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিএনপি-জিয়া সরকার ডিপলোমেটিক সার্ভিসে চাকরি দেয়। এরশাদ সরকার তাদের প্রমোশন দেয়।

/এমএনএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘জার্মানির তৃতীয় বিভাগের ক্লাবের সঙ্গেও বাংলাদেশকে মেলানো যায় না’
‘জার্মানির তৃতীয় বিভাগের ক্লাবের সঙ্গেও বাংলাদেশকে মেলানো যায় না’
তোরণ ও ব্যানার টানিয়ে জরিমানা গুনলেন তিন প্রার্থী
তোরণ ও ব্যানার টানিয়ে জরিমানা গুনলেন তিন প্রার্থী
ভারতীয় পেঁয়াজে রফতানি মূল্য নির্ধারণ, বিপাকে আমদানিকারকরা
ভারতীয় পেঁয়াজে রফতানি মূল্য নির্ধারণ, বিপাকে আমদানিকারকরা
টিভিতে আজকের খেলা (১৯ মে, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (১৯ মে, ২০২৪)
সর্বাধিক পঠিত
মামুনুল হক ডিবিতে
মামুনুল হক ডিবিতে
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি
আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি
নীরবে মামুনুল হক,  শাপলা চত্বরের ঘটনা বিশ্লেষণের সিদ্ধান্ত
নীরবে মামুনুল হক, শাপলা চত্বরের ঘটনা বিশ্লেষণের সিদ্ধান্ত
মোবাইল আনতে ডিবি কার্যালয়ে মামুনুল হক
মোবাইল আনতে ডিবি কার্যালয়ে মামুনুল হক