X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২২ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শিশু খাদ্যের সংকট

আমানুর রহমান রনি, টেকনাফ থেকে
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১০:০০আপডেট : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ০৯:১৯

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা একটি রোহিঙ্গা পরিবার, ফাইল ছবি রোহিঙ্গাদের জন্য দেওয়া ত্রাণ-সামগ্রীতে নেই শিশুদের কোনও খাবার। তাই মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা পরিবারের শিশুদের খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। পাহাড়, বন-জঙ্গল ও নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে আসা এসব শিশুদের ধকল কাটছে না কোনওভাবেই। প্রতিটি পরিবারে গড়ে অন্তত ৪-৫টি শিশু রয়েছে। এদের অনেকেই ঠাণ্ডাজনিত রোগে ভুগছে।

উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী ঢাল, পালং খালী এবং টেকনাফের উনছি প্রাং ও মোছনি পাড়া এলাকার নতুন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি ও রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। বর্তমানে শিশুরা খাদ্য সংকট ও আবাসের অভাবে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী এবং স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনগুলো জানিয়েছে, পুষ্টিকর শিশু খাদ্যের অভাব, সঠিক যত্ন, খোলা আকাশের নিচে থাকায় ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা।

টেকনাফের মোছনি নিবন্ধন ক্যাম্পের প্রবেশ মুখে রবিবার ও সোমবার অবস্থান নিয়েছেন কয়েকশ রোহিঙ্গা। রাস্তা ও দোকানের সামনেই রাতে তারা ঘুমিয়ে থাকেন। রবিবার রাতে সেখানে গিয়ে তাদের ঘুমিয়ে থাকতে দেখা যায়। এর কাছে ‘জাহিদের বাগান’ নামে একটি নার্সারির ভেতরেও অনেকে ঘুমিয়ে ছিলেন। রাতে বাগানের মালিক জাহিদ হোসেন জানান, এখানে প্রথম থেকেই রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিচ্ছেন। এই গত এক সপ্তাহে অন্তত ১০ থেকে ১১টি ছোট বাচ্চার ‍মৃত্যু হয়েছে। এদের তারা দাফন দিয়েছেন।

রোহিঙ্গা

তিনি বলেন, খোলা আকাশের নিচে একেকজন মা ৫/৬ জন শিশু নিয়ে প্রায় সপ্তাহজুড়ে থাকছেন। এতে শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। বালুখালী, কুতুপালং এলাকায় নিয়মিত ত্রাণ পেলেও এদিকে কম মানুষই ত্রাণ নিয়ে আসেন। শুকনো খাবার শিশুরা খেতে পারে না।

সুফিয়া সুলতানা নামে একজন রোহিঙ্গা নারী জানান, শনিবার রাতে তার দেড় বছরের বাচ্চার মৃত্যু হয়েছে। এরপর স্থানীয়রা তাকে কবর দেয়। তার ঠাণ্ডাজনিত রোগ হয়েছিল।

কক্সবাজারের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিচালক নাসিমা ইয়াসমিন জানান, শরণার্থী নারী ও শিশুরা সবচেয়ে সংকটকালীন সময় পার করছেন। শিশুদের অবস্থা খুবই খারাপ। বালুখালী ও পুঁটিবুনিয়ায় দুইটি চিকিৎসা কেন্দ্র খুলেছি। এখানে প্রতিদিন ঘরে এক হাজার নারী ও শিশুকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। গত ৮ সেপ্টেম্ববর থেকে আমরা ক্যাম্প শুরু করেছি।

তিনি বলেন, ‘বেশিভাগ শিশু জ্বর, ঠাণ্ডা নিয়ে আসছে। গত দুদিন ধরে আমরা চর্মরোগের প্রাদুর্ভাবও দেখছি। এছাড়া ডায়রিয়া ও পানিবাহিত আরও রোগ রয়েছে শিশুদের। কিছু শিশু আঘাত ও আগুনে পোড়া নিয়ে এসেছিল তাদেরও আমরা চিকিৎসা দিচ্ছি।’

পরিচালক নাসিমা ইয়াসমিন বলেন, ‘আমরা বয়স অনুযায়ী দুই ক্যাটাগরিতে শিশুদের ভাগ করে চিকিৎসা দিচ্ছি। প্রথমত যাদের বয়স শূন্য থেকে দুই বছর তাদের একটি, দ্বিতীয়ত, দুই থেকে দশ বছর।’

তিনি বলেন, দ্রুত নবজাতক ও তার মায়ের আশ্রয়, খাবার, নিরাপদ পানি ও ঔষধ প্রয়োজন। মা ও শিশুদের অবস্থা বেশ ভালো নয়। এই অবস্থা আরও খারাপের দিকে যেতে পারে।

গত ২৪ আগস্ট মিয়ানমারের সেনা চৌকিতে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় স্বাধীনতাকামী রোহিঙ্গাদের একটি দলকে দায়ী করে দেশটির সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়িতে আগুন দিচ্ছে। জীবন বাঁচাতে তারা টেকনাফ, উখিয়া, বান্দরবানের অন্তত ৩০টি সীমান্ত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন। গত ১৫ দিনে বাংলাদেশে অন্তত ৪ লাখ রোহিঙ্গা প্রবেশ করছে বলে স্থানীয়দের দাবি।

নো-ম্যানস ল্যান্ডে রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ

আরএইচইউ (আরআরআরসি) নামে একটি সংস্থা রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে। এই সংস্থার টেকনাফের শরণার্থী ক্যাম্পে চিকিৎসা দিচ্ছেন মো. মমিনুল হক। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রোহিঙ্গা শিশুরা মায়েদের কাছ থেকে পর্যাপ্ত বুকের দুধ পাচ্ছে না। তারা অপুষ্টিতে ভুগছে। এর ওপর এমন জার্নি, তাদের জীবন সংকটপন্ন। তাদের সবার চিকিৎসা প্রয়োজন।’

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. কানিজ হাসিনা বলেন, মা যদি যথেষ্ট পুষ্টিকর খাবার পায় তাহলে শিশুরাও ভালো থাকবে। শিশুদের ভালো খাবার প্রয়োজন।

অ্যাকশন অ্যাগেইনস্ট হ্যাংগার-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর নিপিন নিপিন গঙ্গাধরান বলেন, মা ও শিশুদের বাঁচাতে খাবার, পানি, স্যানিটেশন এবং আশ্রয়ের প্রয়োজন।

উখিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মইন উদ্দিন জানান, আমরা সমন্বয় করে ত্রাণ দিচ্ছি। যারা এখানে স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন তাদের সঙ্গে কয়েকটি সভা করেছি। তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যাতে শিশুদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিজিবির একটি এবং জেলা সিভিল সার্জনের একটি চিকিৎসা কেন্দ্র রয়েছে। তারাও কাজ করছেন কম সময়ে বেশি রোহিঙ্গাদের চিকিৎসা দিতে। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদ হোসেন সিদ্দিক জানান, শিশুদের মৃত্যুর কোনও খবর তার জানা নেই।

আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা শরণার্থীদের যেভাবে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া যাবে

 

/এমপি/আপ-এসটি
সম্পর্কিত
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে থাইল্যান্ড সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
‘হতাশা থেকে রোহিঙ্গারা আইনবিরোধী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হতে পারে’
অস্ত্র ও গুলিসহ ৫ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী আটক
সর্বশেষ খবর
জামায়াত-শিবিরের সামাজিক আন্দোলনের ফাঁদে দেশ
জামায়াত-শিবিরের সামাজিক আন্দোলনের ফাঁদে দেশ
তাপপ্রবাহের মধ্যে হবিগঞ্জে শিলাবৃষ্টি, বসতঘর ও ফসলের ক্ষতি
তাপপ্রবাহের মধ্যে হবিগঞ্জে শিলাবৃষ্টি, বসতঘর ও ফসলের ক্ষতি
যানজট-গরমে রাজধানীবাসীর ভোগান্তি
যানজট-গরমে রাজধানীবাসীর ভোগান্তি
ফারিণের ৮ বছরের অপেক্ষা শেষ হচ্ছে ২৪ মে
ফারিণের ৮ বছরের অপেক্ষা শেষ হচ্ছে ২৪ মে
সর্বাধিক পঠিত
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
শোইগুর সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে পুতিনের?
শোইগুর সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে পুতিনের?