X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের যেন কষ্ট না হয়: দেশবাসীকে প্রধানমন্ত্রী

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২২:৫৫আপডেট : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২৩:০৬

জাতীয় সংসদে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ছবি- ফোকাস বাংলা)

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পাশে দাঁড়াতে স্থানীয় জনগণসহ সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এরা বিপদে পড়ে আমাদের কাছে আশ্রয় নিয়েছে। এটা আমাদের জন্য বিরাট একটা বোঝা ঠিকই। কিন্তু মানবতার কারণেই আশ্রয় দিয়েছি। আমাদের সাধ্যমতো সব রকম ব্যবস্থা নিচ্ছি। দেশবাসীকে বলবো, তাদের যেন কষ্ট না হয়। স্থানীয় জনগণ, রাজনৈতিক দল সবাই যেন তাদের দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেয়।’

বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদে সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমারের নীরিহ জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দেওয়ার বিপরীতে ওই দেশের এসব ঘটনার সূত্রপাতের জন্য যারা দায়ী, তারা যেন কোনোভাবে ঢুকতে না পারে, সেই বিষয়ে সতর্ক থাকতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, ‘এই জনস্রোতের ঘটনার জন্য যারা দোষী, যারা এই ঘটনার সূত্রপাত ঘটিয়েছে, তারা যেন না কোনোভাবে ঢুকতে না পারে, আশ্রয় না পায়।’

মিয়ানমার সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার সেনাবাহিনী সাধারণ মানুষের ওপর যেভাবে অত্যাচার নির্যাতন করে যাচ্ছে, আমাদের কথা হলো-যারা দোষী তাদের ওপর ব্যবস্থা নেওয়া হোক। ঘটনার জন্য যারা দোষী, তাদের গ্রেফতার করা হোক। মিয়ানমারের উচিত যারা এসব কর্মকাণ্ডে জড়িত তাদের খুঁজে বের করা।  আমাদের সিদ্ধান্ত স্পষ্ট। আমরা এ ধরনের বিচ্ছিন্নতাবাদী কাউকে প্রশ্রয় দেবো না। কিন্তু সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার কেন? এই নীরিহ মানুষগুলোর অপরাধ কী?’

তিনি আরও বলেন, ‘মিয়ানমার সরকারকে বলবো, এদের ফেরত নিতে হবে। এদের নাগরিকত্ব নিয়েও তারা প্রশ্ন তোলে। এই প্রশ্ন তোলার কোনও সুযোগ নেই। কারণ, তারা তো ওখান থেকে এখানে এসেছে। তাদের ভাষাও দুর্ভেদ্য।’

প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা আশ্রয় কেন্দ্র পরিদর্শনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘তাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। সব থেকে মানবিক বিষয় হচ্ছে শিশু। কয়েকটি শিশুর সঙ্গে কথা বললাম, চোখে পানি রাখা যায় না। একটি বাচ্চার চোখের সামনে তার  বাবা-মাকে মেরে ফেলেছে। তিন বোনকে মেরে ফেলেছে। সে তার দাদা-দাদির সঙ্গে কোনও মতে পালিয়ে চলে এসেছে। সে নিজেও আহত। দু’টি মেয়ের  বাবা-মা কেউই নেই। দু‘জন চলে এসেছে। তাদের আর আপনজন বলে কেউ নেই। আরেকটা ছোট মেয়ে, তার ছোট্ট ভাইটাটিকে নিয়ে অন্য লোকদের সঙ্গে আসছিল। ভাইটি যে কোথায় হারিয়ে গেছে, সে বলতে পারে না। এ  ধরনের করুন কাহিনীর কথা শুনতে হচ্ছে। এটা আমার পক্ষে সহ্য করা সম্ভব নয়। কারণ, আমরাও তো আপনজন হারিয়েছি। আমাদেরও ঘরবাড়ি পোড়ানো হয়েছে। রিফিউজি হিসেবে তো আমাদের থাকতে হয়েছে। এদের দুঃখ-দুর্দশা দেখে আমাদের যত কষ্টই হোক না কেন, আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি।’

মিয়ানমারের ঘটনার বর্ণনা করে সরকার প্রধান বলেন, ‘মিয়ানমারের অত্যাচার-নির্যাতনের ঘটনা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমনের কথাটি মনে করিয়ে দেয়। সেই কথাগুলো চিন্তা করেই মিয়ানমারে এখনও দূর থেকে দেখা যায়, আগুন জ্বলছে। এখনও মানুষ আসছে। এই অত্যাচার-নির্যাতেনর ঘটনা শুনলে ও দেখলে পরে কোনও মানুষ সহ্য করতে পারে না। আমাদের বিবেকে লেগেছে। এদেরকে কিভাবে, কোথায় রাখবো, সেটা একটা বিরাট সমস্যা। লাখ লাখ মানুষ আসছে। ইতোমধ্যে তিন লাখের ওপর মানুষ প্রবেশ করেছে। এখনও মানুষ আসছে। এখনও অত্যাচার চলছে। জানি না, মিয়ানমার সরকার কেন এই ঘটনা ঘটাচ্ছে।’

মিয়ানমার ইস্যুতে বিশ্ববাসী এক কাতারে দাঁড়িয়েছে এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের ঘটনায় সারা বিশ্ব জেগে উঠেছে। সব দেশ থেকে মিয়ানমারকে বলা হচ্ছে- তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য এবং এ ধরনের ঘটনা বন্ধ করার জন্য। ইতোমধ্যেই কানাডার প্রধানমন্ত্রী অং সাং সু-চিকে টেলিফোন করে এই সমস্যার সমাধান করতে আহ্বান জানিয়েছেন। জাতিসংঘের মহাসচিবও মিয়ানমারকে নির্যাতন বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের নাগরিকদের স্বদেশে ফিরিয়ে নিয়ে যওায়ার কথা জাতিসংঘ জানিয়েছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে এই বিষয়টি আলোচনা হয়েছে।  সেখানেও তারা মিয়ানমার যে হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে- সেই হত্যাকাণ্ড ও নির্য়াতন বন্ধে আহ্বান জানিয়েছে।  বাংলাদেশ যে নির্যাতিত মানুষগুলোকে আশ্রয় দিয়েছে, এজন্য বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেছে।’

ঢাকায় কর্মরত বিদেশি মিশনের কূটনীতিকদের রোহিঙ্গা আশ্রয় কেন্দ্রগুলো পরিদর্শনের প্রসঙ্গ টেনে সরকার প্রধান বলেন, ‘প্রায় ৪৫টি দেশসহ ৪৭ জন প্রতিনিধি রোহিঙ্গাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য গিয়েছিলেন। তারা গণমাধ্যমে কথা বলেছেন। মিয়ানমারই এই ঘটনা ঘটাচ্ছে এই বিষয়টিও তারা স্পষ্ট করেছেন।’

রোহিঙ্গাদের জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে ত্রাণ পাঠানোর কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মানবতার কারণে অনেক দেশ আমাদের এখানে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের নাগরিকদের সাহযোগিতা করে যাচ্ছে। তুরস্ক, ভারত ও মরক্কো থেকে একটি করে এবং ইন্দোনেশিয়া দু’টি বিমানে করে  রিলিফ পাঠিয়েছে। এই রিলিফগুলো যেন যথাযথভাবে তাদের কাছে যায়, এজন্য এটার তদারকিতে সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দিয়েছি। তাছাড়া, ডিসির নেতৃত্বে কমিটি করা হয়েছে। যারা ত্রাণ দিতে যাবে, এখানে সেখানে এভাবে ত্রাণ না দিয়ে ডিসির কাছে জমা দেবে।’

রোহিঙ্গাদের এক জায়গায় নির্দিষ্ট করা ও নিবন্ধনের আওতায় আনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যারা আসছে তাদের নিবন্ধন করা হচ্ছে। তাদের নাম, ঠিকানা ও ছবিসহ বিশেষ আইডি কার্ড করে দেওয়া হচ্ছে। তার রঙটাও আলাদা হবে। তাদের রাখার জন্য দুই হাজার একর জমি ঠিক করা হয়েছে। আপাতত সেখানে রাখা হচ্ছে। কিছু টিনসেড করে দেওয়া হয়েছে। তবে এভাবে তারা বেশি দিন থাকলে নানা সমস্যা দেখা দেবে। এজন্য আমরা ভাষান চর ঠিক করেছি। সেখানে কিভাবে অস্থায়ী আবাসিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়, সেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নৌবাহিনী প্রধানের সঙ্গে বসে এগুলো ঠিক করে দেবো। জাতিসংঘ সম্মেলনে যাওয়ার আগে আমি এগুলো গুছিয়ে যাবো।’

তিনি বলেন,‘যারা ত্রাণ নিয়ে যায় সেগুলো পরীক্ষা করে দেখতে হবে। আর ত্রাণ দিয়ে ফিরে আসার সময়ও পরীক্ষা করে দেখবে, কী নিয়ে আসছে।’

রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর কথা বলে সংসদ নেতা আরও বলেন, ‘আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় পারদর্শী। এটা তো মানুষের কষ্ট। মানুষের যে দুর্দশা- এই দুর্দশা দেখে আমাদের যতই কষ্ট হোক না কেন, যদি প্রয়োজন হয় আমাদের খাবার ভাগ করে খাবো। সাধারণ মানুষ আমাদের কাছে এসেছে আশ্রয়ের জন্য, আমরা মিয়ানমারের মতো নাফ নদীতে ফেলতে পারি না। বঙ্গোপসাগরেও ফেলতে পারি না। তাদের আশ্রয় দিতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শরণার্থীদের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সক্রিয়। আইওএম, ইউএনএইচসিআর থেকে শুরু করে সবাই সক্রিয় আছে। তবে যেহেতু (রোহিঙ্গারা) আমাদের দেশে আছে, এজন্য মূল দায়িত্ব মনে করি আমাদের। কাজেই মানবিক দিক বিবেচনা করে আমরা নানা পদক্ষেপ নিচ্ছি। আশা করি, মিয়ানমারের চেতনার উদয় হবে। তারা তাদের নাগরিকদের ফেরত নিয়ে নিরাপদে যাতে বাস করতে পারে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে।’

 

 আরও পড়ুন:  রোহিঙ্গারা ছড়িয়ে পড়ছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পদক্ষেপ কাজে আসছে না

/ইএইচএস/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
প্যারিস অলিম্পিকে ফিলিস্তিনি অ্যাথটলেটদের আমন্ত্রণ জানাবে আইওসি
প্যারিস অলিম্পিকে ফিলিস্তিনি অ্যাথটলেটদের আমন্ত্রণ জানাবে আইওসি
তাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
প্রাক-প্রাথমিক বন্ধই থাকছেতাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
ঘামে ভেজা চুলের যত্নে কী করবেন
ঘামে ভেজা চুলের যত্নে কী করবেন
ইউক্রেনের তিনটি অঞ্চলের জ্বালানি স্থাপনায় রুশ হামলা
ইউক্রেনের তিনটি অঞ্চলের জ্বালানি স্থাপনায় রুশ হামলা
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই