X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২২ বৈশাখ ১৪৩১

হেয়াররোড থেকে এয়ারপোর্ট

আমানুর রহমান রনি
১৪ অক্টোবর ২০১৭, ০২:৩৩আপডেট : ১৪ অক্টোবর ২০১৭, ১১:২০

হেয়াররোডের বাসা থেকে বের হওয়ার পথে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা রাজধানীর ১৯ হেয়াররোডের প্রধান বিচারপতির বাসভবনের দুই ফটকের সামনেই গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা অবস্থান করেছেন গণমাধ্যমকর্মীরা। কারণ প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা কবে বিদেশ যাবেন, তিনি কোথায় যাচ্ছেন, কার সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন এবং তার বাসায় কে যাচ্ছেন তার সংবাদ সংগ্রহ করা। এসব নিয়ে সারাদেশের মানুষের মতো সংবাদকর্মীদেরও আগ্রহের শেষ ছিল না।

মূলত প্রধান বিচারপতি একমাসের ছুটি নেওয়ার পরই শুরু হয়, তার বিদেশে যাওয়ার দিনক্ষণ গণনা। দেশের সাধারণ মানুষকে সেই খবর জানানোর চেষ্টায় সেখানে ব্যস্ত সময় পার করেন গণমাধ্যমকর্মীরা। গত ৮ অক্টোবর থেকে প্রধান বিচারপতিকে অনুসরণ করেছেন তারা। প্রতিমূহুর্তের খবর জানাতে বাসভবনের প্রধান ফটকে সংবাদকর্মীরা পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করেন।

সব প্রক্রিয়া শেষ করে শুক্রবার রাত ৯টা ৫৭ মিনিটে তিনি সস্ত্রীক বাসা থেকে বিমানবন্দরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন প্রধান বিচারপতি। গাড়িটি প্রধান ফটকে আসার পর সাংবাদিকরা ঘিরে ধরলে গাড়িটি থেমে যায়। এ সময় স্ত্রী সুষমা সিনহাকে গাড়ির ভেতর তার পাশে বসে থাকতে দেখা যায়। প্রায় ৩০ সেকেন্ড গাড়িটি দাঁড়িয়ে থাকার পর প্রধান বিচারপতি গাড়ি থেকে বের হয়ে হাত নাড়াতে থাকেন। তখন সংবাদকর্মীরা তাকে ঘিরে ধরলে তিনি কথা বলা শুরু করেন।

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমি অসুস্থ না, আমি অসুস্থ না। আমি ভালো আছি, আমি পালিয়েও যাচ্ছি না। আমি আবার ফিরে আসবো। আমাকে ছুটিতে যেতে বাধ্য করা হয়নি। আমি নিজে থেকেই ছুটি নিয়েছি।’

বিমানবন্দরের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি তিনি আরও বলেন, ‘আমি একটু বিব্রত, আমি বিব্রত। আমি বিচার বিভাগের অভিভাবক। আমি চাই না, বিচার বিভাগ কলুষিত হোক। বিচার বিভাগের স্বার্থে আমি সাময়িকভাবে যাচ্ছি। কারও প্রতি আমার কোনও বিরাগ নেই। বিচার বিভাগ স্বাধীন থাকুক, এটাই আমি চাই।’

তিনি আরও কিছু বলার চেষ্টা করছিলেন। তখন সাংবাদিকদের ভিড় বাড়তে থাকে। এদিকে ভিড় কমাতে পুলিশ বাঁশি দিতে থাকলে প্রধান বিচারপতি বক্তব্য থামিয়ে বলেন, ‘এটাই আমার বক্তব্য।’

এসময় তিনি তার পকেট থেকে একটি ভাঁজ করা কাগজ বের করে সাংবাদিকদের দেন। কাগজটি দেওয়ার সময় তিনি আবার বলেন, ‘এখানে সব আছে।’

এরপর তিনি গাড়িতে উঠে বসলে দ্রুত গাড়িটি হোটেল শেরাটনের দিকে চলে যায়। এসময় প্রধান বিচারপতির গাড়িটির সামনে ও পেছনে একটি করে পুলিশের পিকআপ ছিল। পিকআপের পেছনে আরও দুটি গাড়ি ছিল। পরে গাড়িটি বাংলামোটর হয়ে বিমানবন্দরের দিকে চলে যায়। পথে কোথাও যানজটে প্রধান বিচারপতির গাড়ি আটকায়নি। রাত সাড়ে ১০টার দিকে তিনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। পরে গাড়ি বহরটি ভিভিআইপি গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। এরপর রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের এসকিউ ৪৪৭ ফ্লাইটটি ঢাকা থেকে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
তবে প্রধান বিচারপতির স্ত্রী সুষমা সিনহারও অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার ভিসা হলেও তিনি বিমানবন্দর থেকে ফিরে আসেন।

বিচারপতির লিখিত বক্তব্য এদিকে, তখনও বাসভবনের ফটকের সামনে সংবাদকর্মীরা প্রধান বিচারপতির দেওয়া কাগজের ছবি তোলায় ব্যস্ত। প্রধান বিচারপতির সিলমোহরসহ কম্পোজ করা কাগজটি সাধারণ কাগজের চেয়ে মোটা। একপাতায়  লেখা বক্তব্যের নিচের দিকে সবুজকালিতে তার স্বাক্ষর আছে। তাতে লেখা রয়েছে, ‘আমি সম্পূর্ণ সুস্থ আছি। কিন্তু ইদানিং একটা রায় নিয়ে রাজনৈতিক মহল, আইনজীবী, বিশেষভাবে সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী আমাকে ব্যক্তিগতভাবে যেভাবে সমালোচনা করেছেন, এতে আমি সত্যিই বিব্রত। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সরকারের একটি মহল আমার রায়কে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে পরিবেশন করায় প্রধানমন্ত্রী আমার প্রতি অভিমান করেছেন। এই অভিমান অচিরেই দূর হবে বলে আমার বিশ্বাস।’

লিখিত বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘সেই সঙ্গে আমি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়েও একটু শঙ্কিত বটে। কারণ, গতকাল (বৃহস্পতিবার) প্রধান বিচারপতির কার্যভার পালনরত দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রবীণতম বিচারপতির উদ্ধৃতি দিয়ে মাননীয় আইনমন্ত্রী প্রকাশ করেছেন যে, দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি অচিরেই সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসনে পরিবর্তন আনবেন। প্রধান বিচারপতির প্রশাসনে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কিংবা সরকারের হস্তক্ষেপ করার কোনও রেওয়াজ নেই। তিনি শুধুমাত্র রুটিনমাফিক দৈনন্দিন কাজ করবেন। এটিই হয়ে আসছে।’

বিচারপতি লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘প্রধান বিচারপতির প্রশাসনে হস্তক্ষেপ করলে এটি সহজেই অনুমেয় যে, সরকার উচ্চ আদালতে হস্তক্ষেপ করছে এবং এর দ্বারা বিচার বিভাগ ও সরকারের মধ্যে সম্পর্কের আরও অবণতি (অবনতি) হবে। এটি রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না।’

বিমানবন্দরে সস্ত্রীক প্রধান বিচারপতি উল্লেখ্য, গত ১০ অক্টোবর আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে একটি চিঠিতে বিদেশে অবস্থানের বিষয়টি রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেন প্রধান বিচারপতি। চিঠিতে ১৩ অক্টোবর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি অস্ট্রেলিয়ায় থাকতে চান বলে উল্লেখ করেন। এর প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে প্রধান বিচারপতির বিদেশ যাওয়া সংক্রান্ত সরকারি আদেশ (জিও) জারি করে আইন মন্ত্রণালয়। প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার গত ৩ অক্টোবর থেকে একমাসের ছুটিতে যাওয়ার বিষয়টি আইনমন্ত্রী জানানোর পর গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে ছুটি বাড়ানোর কথা জানানো হয়। 

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বর্ধিত ছুটিতে প্রধান বিচারপতির বিদেশে অবস্থানের সময়ে, অর্থাৎ ২ নভেম্বর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত, অথবা তিনি দায়িত্বে না ফেরা পর্যন্ত বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা প্রধান বিচারপতির কার্যভার সম্পাদন করবেন।

২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পান এসকে সিনহা। তার চাকরির মেয়াদ রয়েছে আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত।

গত ৩ জুলাই বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে দিতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে দেওয়া হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। এ রায়ের পরই মূলত প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।

আরও পড়ুন:

বিমানবন্দরে সস্ত্রীক প্রধান বিচারপতি

বিমানবন্দরের পথে সস্ত্রীক প্রধান বিচারপতি 

আমি অসুস্থ না, ফিরে আসবো: প্রধান বিচারপতি 

সরকার উচ্চ আদালতে হস্তক্ষেপ করছে: প্রধান বিচারপতি
প্রধানমন্ত্রী যেভাবে সমালোচনা করেছেন, তাতে আমি বিব্রত: প্রধান বিচারপতি

/এআরআর/এনআই/এসএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
গাছ কেটে ফেলায় ঢাকায় গরম বেশি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
গাছ কেটে ফেলায় ঢাকায় গরম বেশি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
পরীর মনে প্রেমানুভব!
পরীর মনে প্রেমানুভব!
দুই ব্রাজিলিয়ান কেন মাঠে এমন করলেন?
দুই ব্রাজিলিয়ান কেন মাঠে এমন করলেন?
চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪০ দশমিক ৩ ডিগ্রি, খুলেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪০ দশমিক ৩ ডিগ্রি, খুলেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
সর্বাধিক পঠিত
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
শোইগুর সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে পুতিনের?
শোইগুর সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে পুতিনের?