X
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

জাতিসংঘে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রেজ্যুলেশন গৃহীত

শেখ শাহরিয়ার জামান
১৬ নভেম্বর ২০১৭, ২২:৫৬আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০১৭, ২৩:৪১

রোহিঙ্গা (ছবি: ফোকাস বাংলা) নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের থার্ড কমিটিতে রোহিঙ্গা সমস্যার বিষয়ে চরম উদ্বেগ প্রকাশ করে একটি রেজ্যুলেশনের গৃহীত হয়েছে। রেজ্যুলেশনের পক্ষে ভোট দিয়েছে ১৩৫টি রাষ্ট্র। বিপক্ষে ভোট দিয়েছে চীন ও রাশিয়াসহ  ১০টি দেশ।  ভারতসহ ২৬টি দেশ কোনও পক্ষেই ভোট দেয়নি। এছাড়া অনুপস্থিত ছিল ২২টি দেশ। বৃহস্পতিবার নিউ ইর্য়ক সময় সকালে ভোটাভুটির পর এই রেজ্যুলেশন গৃহীত হয়। এ বিষয়ে সরকারের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশ যা চায়, তার প্রতিফলন আছে এই রেজ্যুলেশনে।’

রেজ্যুলেশনে মিয়ানমারের ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন পুনর্বিবেচনা করে রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নাগরিকত্ব দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে রোহিঙ্গাদের ওপর যারা অত্যাচার করেছে, তাদের বিচারের আওতায় আনার জন্যও দেশটির সরকারকে বলা হয়েছে।

৩১ অক্টোবর থার্ড কমিটিতে ‘মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শিরোনামে মিশর এই খসড়া রেজ্যুলেশনটি জমা দেয়। এর কো-স্পনসর ছিল ৯৭টি দেশ। এই রেজ্যুলেশনে শুধু রোহিঙ্গা সমস্যা উল্লেখ করা হয়েছে।

এর আগে ২০১৫ সালে অং সান সু চি সরকার গঠনের আগে একই শিরোনাম ‘মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শীর্ষক একটি রেজ্যুশেন গৃহীত হয়। সেখানে মিয়ানমারের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও গণতান্ত্রিক পরিবেশের ওপর জোর দেওয়া হয়েছিল। সেই রেজ্যুলেশনে ১৯টি অনুচ্ছেদের মধ্যে রোহিঙ্গা বিষয়ে শুধু একটি  অনুচ্ছেদ ছিল।

বর্তমান রেজ্যুলেশনে বলা হয়, রাখাইনে সামরিক অভিযানের কারণে নিয়মতান্ত্রিকভাবে রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে।  এই অভিযান বন্ধ করাসহ রোহিঙ্গ নিধনের জন্য দোষীদের বিচারের আওতায় আনতেও মিয়ানমার সরকারকে বলা হয়। এছাড়া বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা যেন নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে রাখাইনে ফেরত যেতে পারে, রাখাইনে যেন জাতিসংঘসহ অন্যান্য সাহায্য সংস্থা কাজ করতে পারে, সে বিষয়ে  রেজ্যুলেশনে উল্লেখ করা হয়।

রেজ্যুলেশনে জাতিসংঘের মহাসচিবকে ‘মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত’ নিয়োগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে, জাতিসংঘ যেন মিয়ানমারকে সহায়তার প্রস্তাব করে।

এছাড়া রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনসহ সব ধরনের সংকট সমাধানের জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সহযোগিতাকে উৎসাহিত করা হয়েছে।

বাংলাদেশ যা চায়, তার প্রতিফলন এই রেজ্যুলেশনে আছে উল্লেখ করে সরকারের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘রাখাইনে সহিংসতা বন্ধ, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন, নাগরিকত্ব দেওয়া, কফি আনান কমিশন রিপোর্টের পূর্ণ বাস্তবায়ন, রোহিঙ্গাদের নিজগৃহে প্রত্যাবর্তনসহ বিভিন্ন বিষয় এই রেজ্যুলেশন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দ্রুত যাচাই-বাছাই করে মিয়ানমারে ফেরত নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ প্রস্তাব করেছে, বিষয়টিও এই রেজ্যুলেশনে উল্লেখ আছে।’

সরকারের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘কফি আনানের নেতৃত্বে গঠিত রাখাইন কমিশনের রিপোর্টের পূর্ণ বাস্তবায়নের কথা বাংলাদেশ সবসময় বলে আসছে এবং বিষয়টি উল্লেখযোগ্যভাবে রেজ্যুলেশনে বলা হয়েছে।’

রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর মধ্যে অস্থিতিশীল ও নিরাপত্তাহীনতা পরিস্থিতি যেন সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতেও এই রেজ্যুলেশনে আহ্বান জানানো হয়েছে বলে তিনি জানান।

যারা রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে, যেসব সামরিক, সরকারি ও বেসরকারি ব্যক্তি রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার করেছে, তাদের বিরুদ্ধে পূর্ণ, স্বচ্ছ ও স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানানো হয়েছে এই রেজ্যুলেশনে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘যারা দোষ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি খুবই স্বাভাবিক বিষয়। এর আগেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে।’

রেজ্যুলেশনের পক্ষে ও বিপক্ষে ভোট

এই রেজ্যুলেশনের পক্ষে ও বিপক্ষে কে কে ভোট দিচ্ছে জানতে চাইলে সরকারের আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘৯৭টি দেশ এই রেজ্যুলেশনের কো-স্পনসর ছিল। এছাড়া অনেক দেশ আছে, যারা কো-স্পনসর হয়নি, তারা এর পক্ষে ভোট দিয়েছে।

উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৫ সালে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আনিত রেজ্যুলেশনটির পক্ষে ১০৪টি দেশ ভোট দেয়, ১৩ জন বিপক্ষে এবং বাংলাদেশসহ ৩৭ রাষ্ট্র কোনও পক্ষে ভোট দেয়নি। প্রকৃতপক্ষে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আনিত কোনও রেজ্যুলেশনে বাংলাদেশ কখনোই সমর্থন দেয়নি।

২০১৫-এর রেজ্যুলেশনের বিপক্ষে ভোট দিয়েছিল চীন, রাশিয়া, ইরান, উজবেকিস্থানসহ ১৩টি দেশ। কোনও ভোট দেয়নি ভারত, ইন্দোনেশিয়াসহ ৩৭টি দেশ।

২০১৫ সালে বর্তমান সময়ের মতো কয়েক দশকের মধ্যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধন শুরু হয়নি।

উল্লেখ্য, এ বছরের ২৫ আগস্ট থেকে রাখাইনে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর জাতিগত নিধন অভিযান শুরু হলে ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। 

/এমএনএইচ/
সম্পর্কিত
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে থাইল্যান্ড সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
‘হতাশা থেকে রোহিঙ্গারা আইনবিরোধী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হতে পারে’
অস্ত্র ও গুলিসহ ৫ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী আটক
সর্বশেষ খবর
অনেক নার্ভাস ছিলেন সাইফউদ্দিন
অনেক নার্ভাস ছিলেন সাইফউদ্দিন
বকশিবাজার মোড়ে বাসের ধাক্কায় পথচারী নিহত
বকশিবাজার মোড়ে বাসের ধাক্কায় পথচারী নিহত
১২ বছর পর মুম্বাইয়ের মাঠে কলকাতার জয়
১২ বছর পর মুম্বাইয়ের মাঠে কলকাতার জয়
বেড়িবাঁধে উন্নত নিরাপত্তা ও গতিশীলতা: মেয়র আতিকের কাছে ইউল্যাবের আবেদন
বেড়িবাঁধে উন্নত নিরাপত্তা ও গতিশীলতা: মেয়র আতিকের কাছে ইউল্যাবের আবেদন
সর্বাধিক পঠিত
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
নদীতে ধরা পড়ছে না ইলিশ, কারণ জানালেন মৎস্য কর্মকর্তা
নদীতে ধরা পড়ছে না ইলিশ, কারণ জানালেন মৎস্য কর্মকর্তা