X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

জাতিসংঘের বিশেষ অধিবেশনেও রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের পক্ষ নিলো চীন

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০৫ ডিসেম্বর ২০১৭, ২৩:০৭আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০১৭, ২৩:৩০

জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিল

রোহিঙ্গা ইস্যুতে সারা বিশ্ব মিয়ানমারের নির্যাতনের নিন্দা জানালেও এখনও তাদের পাশে আছে চীন। মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের বিশেষ অধিবেশনে রাখা বক্তব্যে মিয়ানমারের প্রতি অবস্থান অপরিবর্তিত রেখে চীনের প্রতিনিধি বলেছেন,দুই দেশের মধ্যে সংলাপই একমাত্র সমাধানের পথ।  

‘মিয়ানমারের রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠী ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ নিয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের বিশেষ অধিবেশনে তিনি একথা বলেন।

বাংলাদেশ ও সৌদি আরব এই বিশেষ অধিবেশনের জন্য অনুরোধ করে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে নোটিশ দেয়। সংস্থাটির মোট ৪৭টি সদস্যের মধ্যে ৩৩ সদস্য এতে সমর্থন দিয়েছে। এছাড়া সদস্য নয় এমন ৪০টি দেশ এ বিষয়ে বিশেষ অধিবেশন আহ্বানের অনুরোধকে সমর্থন করেছে। তবে এ প্রস্তাবে সমর্থন না করায় সদস্য রাষ্ট্র হয়েও বিশেষ অধিবেশনে কোনও বক্তব্য রাখেনি ভারত।

মূলত আশির দশকের শেষ দিক থেকেই রোহিঙ্গা সমস্যার সূত্রপাত। সে সময় থেকে এ বছরের ২৪ আগস্ট পর্যন্ত সাড়ে তিন লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল। তবে এ সংকট চরম আকার ধারণ করে ২৪ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে নিরীহ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপরে দেশটির সেনাবাহিনী চরম হত্যাযজ্ঞ শুরু করলে। সেখানে প্রকাশ্যে শত শত রোহিঙ্গাকে হত্যা ও ধর্ষণ করে তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিলে পরদিন থেকে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশের টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্তে রোহিঙ্গাদের ঢল নামে। মানবিক দিক বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের সাময়িকভাবে আশ্রয় দিতে রাজি হন এবং রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজরে আনতে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন ফোরামে বক্তব্য রাখেন। এরপর থেকেই বিষয়টি নিয়ে গত তিনমাস ধরে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা চলছে। সম্প্রতি পোপ ফ্রান্সিসও মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সফর করে এ সমস্যা সমাধানের জন্য শান্তিপূর্ণ উদ্যোগ নিতে মিয়ানমারকে আহ্বান জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, এ পর্যন্ত ৬ লাখ ৩০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ সাময়িকভাবে আশ্রয় দিয়েছে। 

রোহিঙ্গা সংকট

তবে ২৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বিশ্ব নেতাদের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা চালালেও মিয়ানমারের বড় প্রতিবেশী চীন শুরু থেকেই তাদের পক্ষাবলম্বন করে। তখন থেকেই রোহিঙ্গা সমস্যাকে আন্তর্জাতিকীকরণ না করে দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমাধানের জন্য বাংলাদেশকে অনুরোধ জানিয়ে আসছে। চীনের প্রতিনিধির বক্তব্যে আজও সে কথাই প্রতিধ্বনিত হলো।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে, জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের বিশেষ অধিবেশনে চীনের প্রতিনিধি যে বক্তব্য রেখেছেন তাতে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি তিনি একবারও উচ্চারণও করেননি। মিয়ানমারে যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে চীনের পক্ষ থেকে তাদের বিচার দাবিও করেননি। এমনকি পুরো ঘটনার জন্য মিয়ানমারকে নিন্দা জানায়নি।

তবে তিনি বলেছেন,‘চীন বাংলাদেশের অসুবিধা বোঝে এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য আমরা বাংলাদেশের প্রশংসা করি।’

এছাড়াও রোহিঙ্গা ইস্যুতে একটি দায়িত্বপূর্ণ দেশ হিসাবে চীন বাস্তবসম্মত ও পক্ষপাতহীন অবস্থান গ্রহণ করেছে বলেও বক্তব্য রাখেন তিনি।

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফরের বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের (চীনের)পররাষ্ট্রমন্ত্রী উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে তিন ধাপ বিশিষ্ট একটি প্রস্তাব করেছে।’ 

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির বিষয়ে তিনি বলেন,‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিৎ হবে এটিকে সমর্থন করা। মানবাধিকার কাউন্সিলের এমন কিছু করা ঠিক হবে না যা দ্বিপক্ষীয় প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে।’

রাখাইনের এ সমস্যা সমাধানের জন্য চীন সবার সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত বলেও তিনি দাবি করেন।

উল্লেখ্য, জাতিসংঘ থার্ড কমিটির ভোটাভুটিতে চীন মিয়ানমারকে সমর্থন করেছিল।

এদিকে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করলেও  অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বাংলাদেশ মনে করে আন্তর্জাতিক চাপ সরে গেলে মিয়ানমার বিষয়টির সমাধানে আন্তরিক থাকবে না। এ কারণে মঙ্গলবারের বৈঠকেও রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে চাপ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন,‘আমাদের কিছু বন্ধু বলেছেন বিষয়টি দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমাধান করার জন্য। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে এটি আর দ্বিপক্ষীয় বিষয় নেই।’

তিনি বলেন, ‘আমরা বিষয়টি সবসময় দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমাধানের চেষ্টা করেছি কিন্তু মিয়ানমার বিশেষ করে ২০০৫ এর পর থেকে কখনই আগ্রহ দেখায়নি। আমরা বিশ্বাস করি রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখার প্রয়োজন আছে।’

এসময় গত নভেম্বরে দুইদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি সামগ্রিক সমাধানের একটি অংশ।’

এদিকে জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্য রাষ্ট্র ভারত রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের দেওয়া বিশেষ অধিবেশন ডাকার প্রস্তাবকে সমর্থন না করায় আজকের অধিবেশনে বক্তব্য রাখেনি। বিশেষ এই অধিবেশনে ৪৭টি সদস্য দেশের মধ্যে ৩৮টি দেশ বক্তব্য রাখে। এদের সিংহভাগই রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানায়।

/এসএসজেড/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
গাছশূন্য ২০ কিলোমিটার সড়ক, তাপপ্রবাহে পথচারীদের দুর্ভোগ
গাছশূন্য ২০ কিলোমিটার সড়ক, তাপপ্রবাহে পথচারীদের দুর্ভোগ
প্রথমবার মেজর লিগ সকারের প্লেয়ার অব দ্য মান্থ মেসি
প্রথমবার মেজর লিগ সকারের প্লেয়ার অব দ্য মান্থ মেসি
গাজায় নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা বেড়ে ১৪১
গাজায় নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা বেড়ে ১৪১
সর্বাধিক পঠিত
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
ব্যর্থতার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ
ব্যর্থতার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ