X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

অনশন ভঙ্গের ঘোষণা দিলেন নেতারা, সাধারণ শিক্ষকদের ‘না’

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৫ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৮:৩০আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৯:০৯

শহীদ মিনারে শিক্ষকদের অনশন বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের আমরণ অনশন কর্মসূচি ভঙ্গ করা নিয়ে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাসে তার হাতে শরবত পান করে শিক্ষক নেতারা অনশন ভঙ্গ করলেও কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সাধারণ শিক্ষকরা।

সোমবার বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ ঘটনা ঘটেছে।

নেতারা অনশন ভঙ্গ করলেও শিক্ষকদের একটা বড় অংশ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।  অনশনরতরা বলছেন, মন্ত্রী বলেছেন, যৌক্তিক হলে দাবি মেনে নেওয়া হবে। কিন্তু আমরা আশ্বাস নয়, সুস্পষ্ট ঘোষণা চাই। এ রকম আশ্বাস ২০১৪ সাল থেকেই আমরা শুনে আসছি। হয় প্রধানমন্ত্রী না হয় শিক্ষামন্ত্রী এসে ঘোষণা দিলে আমরা কর্মসূচি থেকে সরে যাবো।


মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার ২৩ নম্বর উল্টাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক জসিমউদ্দিন বলেন, ‘আমরা দাবির পক্ষে সুস্পষ্ট ঘোষণা চাই। কোনও আশ্বাসে আমরা বাড়ি ফিরে যাবো না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী না হয় শিক্ষামন্ত্রী এসে ঘোষণা দিলে আমরা কর্মসূচি থেকে সরে যাবো। ২০১৪ সাল থেকে আমরা এরকম আশ্বাস শুনে আসছি।’
নেতারা তো চলে গেছেন, আপনারা কিভাবে আন্দোলন চালাবেন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা ৬৪ জেলা থেকে নেতা নির্বাচন করে আন্দোলন চালিয়ে যাবো।’ তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার দুয়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সুপর্না সরকার তন্ময় বলেন, ‘নেতারা কী বলেছেন- আমরা কিছুই বুঝতে পারিনি। প্রধানমন্ত্রী অথবা শিক্ষামন্ত্রীর কাছ থেকে ঘোষণা না আসা পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো ।’
নেত্রকোনা আটকুড়া উপজেলার কদমতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. রফিকুল ইলাম বলেন, ‘দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা অনশন চালিয়ে যাবো। নেতারা দালালি করে নিজেদের স্বার্থ বুঝে পেয়ে চলে গেছেন। আমরা নতুন করে নেতা নির্বাচন করে কর্মসূচি চালিয়ে যাবো।’

প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক ভূইয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসে তাকে আন্দোলনের যৌক্তিকতা বুঝিয়েছি। তিনিও বুঝেছেন। যেহেতু এটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার, একারণে মন্ত্রী অন্তত একমাস সময় চেয়েছেন। তিনি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে কথা বলবেন।’

আমিনুল হক ভূইয়া আরও বলেন, ‘মন্ত্রী বলেছেন- প্রয়োজনে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শিক্ষকদের দাবির বিষয়ে কথা বলবেন এবং তাকেও আন্দোলনের যৌক্তিকতা বোঝাবেন। মন্ত্রীর এ আশ্বাসের পরই আমরা অনশন ভঙ্গ করেছি। কিন্তু শিক্ষকদের একাংশ মন্ত্রীর এই আশ্বাসে সন্তুষ্ট নন। এজন্য বিশৃঙ্খলা হচ্ছে।’

এর আগে শহীদ মিনারে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে নয়, অলোচনার টেবিলেই সমস্যার সমাধান করতে হবে। আপনাদের দাবির কোনমাত্রার যৌক্তিকতা আছে, তা প্রমাণ করতে পারলেই দাবি মেনে নেওয়া হবে।’

মন্ত্রীর এ বক্তব্যের পর আন্দোলনর শিক্ষকরা বলতে থাকেন, ‘আমরা মানি না, মানবো না। আন্দোলন চালিয়ে যাবো। এসময় শিক্ষক নেতা নাসরিন সুলতানা বলেন, ‘আমরা দাবি আদায় নিয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছি। মন্ত্রীর আশ্বাসে আমরা আন্দোলন বন্ধ নয়, স্থগিত করেছি। যদি দাবি মানা না হয়, আমরা আবারও  ফিরে আসবো।’

প্রসঙ্গত, গত তিন দিনের টানা অনশনে প্রায় ৬০ জন শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর মধ্যে বেশ কয়েকজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পার্শবর্তী কয়েকটি মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ৬০ জনের মধ্যে অন্তত ২০ জন নারী শিক্ষক।

অনশনকারী শিক্ষকরা জানান, ১৯৭৩ সাল থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের এক ধাপ নিচে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকরা বেতন পেতেন। কিন্তু ২০০৬ সালের বেতন কাঠামোতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকদের সঙ্গে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের ব্যবধান বেড়ে যায় ধাপ। পরে ২০১৪ সালে এই ধাপ আরও বেড়ে যায় তিনটি। প্রধান শিক্ষকদের গ্রেড উন্নয়ন করলেও সহাকারি শিক্ষকদের গ্রেড এক ধাপও বাড়ানো হয়নি। 

বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবিতে গত শনিবার থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন সহকারী শিক্ষকরা। বর্তমানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকরা ১৪তম গ্রেড ((মূল বেতন ১০ হাজার ২০০ টাকা) পান। অন্যদিকে, প্রধান শিক্ষকরা পান ১০ম গ্রেড (মূল বেতন ১৬ হাজার টাকা)।আন্দোলনকারী শিক্ষকরা  তাদের বেতন গ্রেড প্রধান শিক্ষকদের এক ধাপ নিচে ১১তম গ্রেড (১২ হাজার ৫০০ টাকা) নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক মহাজোটের উদ্যোগে এই অনশন কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। এতে মহাজোটের অধীনে থাকা ১০টি সংগঠনের শিক্ষকরা অংশ নিচ্ছেন। বেতন বৈষম্য নিরসনের জন্য ২০১৪ সাল থেকে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষকরা।



 

 

/এএইচআর/আরএআর/ এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
রেলক্রসিংয়ে রিকশায় ট্রেনের ধাক্কা, বাবার মৃত্যু মেয়ে হাসপাতালে
রেলক্রসিংয়ে রিকশায় ট্রেনের ধাক্কা, বাবার মৃত্যু মেয়ে হাসপাতালে
যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পুরস্কার পেলেন কুবির চার শিক্ষার্থী
যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পুরস্কার পেলেন কুবির চার শিক্ষার্থী
গরমে বেড়েছে অসুখ, ধারণক্ষমতার তিন গুণ বেশি রোগী হাসপাতালে
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগরমে বেড়েছে অসুখ, ধারণক্ষমতার তিন গুণ বেশি রোগী হাসপাতালে
টিভিতে আজকের খেলা (১৯ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (১৯ এপ্রিল, ২০২৪)
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন