কোটা সংস্কারের দাবিতে হাইকোর্টের সামনে অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে আন্দোলনকারীদের ওপর টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে আন্দোলন পণ্ড করে দিয়েছে পুলিশ। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষাসহ সকল পরীক্ষার চাকরি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা সংস্কারের দাবিতে এ কর্মসূচি চলছিল। বুধবার (১৪ মার্চ) সকালে হাইকোর্টের সামনে শিক্ষা অধিকার চত্বরে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের উদ্যোগে এই কর্মসূচি শুরু হয়।
অবস্থান কর্মসূচির আগে রাজধানীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আগত অসংখ্য চাকরি প্রার্থী শিক্ষার্থী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি জমা দেওয়ার উদ্দেশ্যে মিছিল বের করে। মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি এলাকা থেকে বের হয়ে শাহবাগ, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি), দোয়েল চত্বর হয়ে হাইকোর্টের সামনে আসে। সেখানে এলে আন্দোলনকারীদের পুলিশ বাধা দেয়। পুলিশের বাধার পর তারা হাইকোর্টের সামনে শিক্ষা অধিকার চত্বরে অবস্থান নেয়। এ সময় আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, আধঘণ্টার মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে যদি কোনও আশ্বাস বা সাড়া না পাওয়া যায় তাহলে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি চালানো হবে।
অবস্থান কর্মসূচিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা ৫ দফা দাবি ঘোষণা করে। সেগুলো হলো, কোটা ব্যবস্থা সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নিয়ে আসতে হবে, কোটায় কোনও ধরনের বিশেষ নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া যাবে না, চাকরি নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সবার জন্য অভিন্ন কাটমার্কস ও বয়সসীমা নির্ধারণ করতে হবে, কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে শূন্য থাকা পদগুলোতে মেধায় নিয়োগ দিতে হবে।
এ বিষয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী তানজিরা তমা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের দাবি হলো কোটা সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে নিয়ে আসার। এই ৫৬ শতাংশের মধ্যে ৩০ শতাংশ হলো মুক্তিযোদ্ধা কোটা । এটা তো সম্পূর্ণ বৈষম্য। আমরা লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী প্রতিযোগিতা করেও কোনও ভালো চাকরি পাচ্ছি না। অথচ যারা কোটার সুফল ভোগ করেন, তারা অল্প পরিশ্রম করে ভালো চাকরি পেয়ে যাচ্ছেন।’
আরেক চাকরি প্রার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল নোমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই কোটার কারণে বাংলাদেশের ১০ শতাংশ লোক ৫৬ শতাংশ চাকরি সুবিধা লাভ করে। আর বাকি ৯০ শতাংশ লোক ৪৪ শতাংশ চাকরি সুবিধা পাচ্ছে। আমরা আমজনতা শিক্ষার্থীরা বৈষম্যের কারণে প্রত্যাশা এবং মেধা অনুযায়ী সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।’
পুলিশের টিয়ারশেল নিক্ষেপের বিষয়ে জানতে চাইলে মো. উজ্জ্বল মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছিলাম, হঠাৎ পুলিশ আমাদের ওপর এলোপাতাড়ি টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ভঙ্গ করে দেয়।’
ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিসি মারুফ বলেন, ‘যেহেতু হাইকোর্ট এলাকাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা, তাই আন্দোলনকারীদের রাস্তা ছেড়ে দিয়ে একপাশে অবস্থান নিতে বলেছি। কিন্তু তারা রাস্তা ছাড়েনি। সে জন্যই আমরা টিয়ারশেল ছুড়ে তাদের সরিয়ে দিয়েছি। এ ঘটনায় কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। তবে কতজনকে আটক করা হয়েছে তা এই এখনই বলা যাচ্ছে না।’