X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

“প্রমাণ হয়েছে আমাদের কেউ ‘দাবায়ে’ রাখতে পারবে না”

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২২ মার্চ ২০১৮, ১২:২২আপডেট : ২২ মার্চ ২০১৮, ১৫:৩৮

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা জানানোর অনুষ্ঠান স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ হওয়ার মাধ্যমে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলার পথে বাংলাদেশ আরও একধাপ এগিয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু তার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে বলেছিলেন, বাংলার মানুষকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। আজ স্বাধীনতার ৪৭ বছরে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ হওয়ার মাধ্যমে এটাই প্রমাণ হয়েছে, আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না।’
জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের স্বীকৃতি দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা প্রদানের অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। বৃহস্পতিবার (২২ মার্চ) সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে সংবর্ধনা দেওয়া হয় প্রধানমন্ত্রীকে। বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের স্বীকৃতি পাওয়ায় সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে সংবর্ধনা দেওয়া হলো প্রধানমন্ত্রীকে।
বাংলাদেশের এই অর্জনের জন্য সব শ্রেণিপেশার মানুষকে, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই অর্জনের জন্য আমি ধন্যবাদ জানাই সারাদেশের মানুষকে। আমরা সরকারে থেকে পথপ্রদর্শক হিসেবে পথ দেখিয়েছি। কিন্তু কৃষক, পেশাজীবী, মেহনতি মানুষ, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সারাদেশের মানুষ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছেন বলেই এই অর্জন সম্ভব হয়েছে। সবাই মিলে কাজ করেছেন বলেই আজ আমরা ৭.২৮ ভাগে প্রবৃদ্ধি উন্নীত করতে পেরেছি, জনগণের মাথাপিছু আয় বাড়াতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের সঙ্গে উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করেছে, বন্ধুপ্রতিম দেশগুলো এগিয়ে এসেছে আমাদের উন্নয়নের এই অগ্রযাত্রায়। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে পেরেছি। সে জন্য প্রত্যেককে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এমন একটি দিনে এই খবরটি পেয়েছি, যে দিনটিতে আমরা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে জন্মবার্ষিকী পালন করছিলাম। তিনি আজীবন মানুষের জন্য সংগ্রাম করেছেন। আজকের এই দিনে তার প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা। জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ হারানো ৩০ লাখ শহীদ, নির্যাতনের শিকার দুই লাখ মা-বোনদের প্রতি আমি শ্রদ্ধা জানাই।’

স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য বঙ্গবন্ধুর লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর যখন বাঙালিদের মাতৃভাষার অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া হলো, বঙ্গবন্ধু তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়ার জন্য সংগ্রাম করেছেন তিনি। ১৯৭২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ১৯৫২ সালের আন্দোলন কেবল ভাষার আন্দোলনেই সীমাবদ্ধ নয়, ওই আন্দোলন ছিল সামাজিক-রাজনৈতিক-সংস্কৃতিক-অর্থনৈতিক অধিকার আদায়ের আন্দোলন।

পশ্চিম পাকিস্তানিদের কাছে কীভাবে বাংলাদেশ, তথা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ শোষিত-বঞ্চিত হয়েছে, তার ইতিহাস তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। ‘আমার দেশের প্রতিটি মানুষ খাদ্য পাবে, আশ্রয় পাবে, উন্নত জীবনের অধিকারী হবে— এই আমার স্বপ্ন’— বঙ্গবন্ধুর এই উদ্ধৃতি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু আরেকটি কথা বলেছিলেন—কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না। আজ আমাদের যে উত্তরণ হয়েছে, উন্নয়নশীল দেশের যে স্বীকৃতি আমরা পেয়েছি, এই সময়ে এসে তার সেই কথাটিই বারবার মনে পড়ছে।’

বঙ্গবন্ধুর অবদান তুলে ধরে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে, তারই নির্দেশে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশকে গড়ে তুলতে মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন তিনি। তখন দেশে শরণার্থীর সংখ্যা এক কোটি, প্রায় তিন কোটি মানুষ গৃহহারা, লাখ লাখ নারী নির্যাতিত, লাখ লাখ যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। সবার পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছেন বঙ্গবন্ধু। একটি প্রদেশকে রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার কাজ করে গেছেন। ৯ মাসের মধ্যে সংবিধান উপহার দিয়েছেন, যে সংবিধানে মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার বিষয়টি স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সব আইন-নীতিমালা তিনি করে দিয়ে গেছেন। অবাক লাগে, এত অল্প সময়ে এত কাজ কীভাবে তিনি করে গেছেন। সেই সময় বাংলাদেশ ৭ ভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল। স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে তখনই যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ।’

১৯৭৫ সালে এসে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রসঙ্গ টেনে আনেন শেখ হাসিনা, তুলে ধরেন সপরিবারে জাতির জনককে নির্মমভাবে হত্যার প্রসঙ্গ। ছোট বোনকে নিয়ে শরণার্থীর মতো প্রবাসযাপনের বেদনার প্রসঙ্গও টেনে আনেন। তিনি বলেন, আমি বাবার কাছে রাজনীতি শিখেছি, মায়ের কাছে রাজনীতি শিখেছি। বাবার কাছে মাঝে-মধ্যে জানতে পারতাম তার আকাঙ্ক্ষার কথা। শিখেছি, জনগণের কল্যাণে রাজনীতি করতে হয়। ২১ বছর পর আমরা যখন সরকার গঠন করি, আমাদের লক্ষ্য ছিল কীভাবে দেশকে উন্নত করা যায়, কীভাবে জাতির পিতার ভাবনার প্রতিফলন ঘটাবো।

১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর মানুষের জন্য সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, তখন মানুষের পেটে খাবার ছিল না। আমরা খাবারের ব্যবস্থা করেছি। দেশের উন্নয়নের জন্য সবকিছুই করেছি। কিন্তু আবার আমাদের সাত বছর ক্ষমতার বাইরে থাকতে হয়। আবার ক্ষমতায় এসে দেখি আমরা দেশকে যতটুকু এগিয়ে নিয়েছিলাম, আবার পিছিয়ে পড়েছি। আমরা সাক্ষরতার হার বাড়ালাম, আমরা যাওয়ার পর কমে গেলো। আমরা দারিদ্র্যের হার কমালাম, দারিদ্র্য বেড়ে গেলো। খাদ্যে আমরা দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তুলেছিলাম, ফিরে এসে দেখলাম আবার খাদ্য ঘাটতি তৈরি হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে পিছিয়ে গেলাম। এরকম প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমরা পিছিয়ে গেলাম।

প্রধানমন্ত্রী জানান, ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে না পারলেও দেশকে নিয়ে ভাবনা ছেড়ে দেয়নি আওয়ামী লীগ। তারা তখনও দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন, বিভিন্ন ধরনের নীতিমালা তৈরি করেছেন। সে অনুযায়ীই ২০০৯ সালের নির্বাচনের আগে দলীয় ইশতেহার দেয় আওয়ামী লীগ, ক্ষমতায় এসে তা বাস্তবায়ন করতে থাকে। তিনি বলেন, আগে গবেষণার সুযোগ ছিল না। আমরা ক্ষমতায় এসে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি গবেষণায়। শিক্ষার প্রসার ঘটিয়েছি, তথ্যপ্রযুক্তির প্রসার ঘটিয়েছি। ৫ বছর মেয়াদি, ১০ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা করেছি। এ কারণেই দেশের এই অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেক বাধাবিঘ্ন পেরিয়ে আসতে হয়েছে। অনেক পথের কাঁটা পায়ে বিঁধেছে। অনেক আঘাত এসেছে। কিন্তু ভয় পাইনি কখনও। একটা বৈরী পরিবেশে কাজ শুরু করেছিলাম, যেখানে জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচারের পথ রুদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, যুদ্ধাপরাধীরা এমপি-মন্ত্রী হয়েছিল। সেখান থেকে জনগণের স্বার্থে, জনগণের কল্যাণে যাত্রা শুরু করেছি, বাংলাদেশকে একটি ধাপ এগিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছি। জাতির পিতা স্বল্পোন্নত দেশ রেখে গেছেন, আজ বাংলাদেশকে আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করতে পেরেছি।’

ভবিষ্যতের স্বপ্নের কথা উল্লেখ করে তরুণ প্রজন্মকে এখনকার অর্জন ধরে রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান বঙ্গবন্ধুকন্যা। তিনি বলেন, ‘উন্নয়নের যে ধারা সূচিত হয়েছে, সেটা যেন অব্যাহত থাকে— সেই কামনাই করি সবসময়। ২০২১ সালে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। ওই সময়ে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়তে সক্ষম হবো। এর মধ্যে ২০২০ সালে আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী পালন করব। আর ২০৪১ সালে আমরা উন্নত দেশ হবো, আমরা দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠ দেশে পরিণত হবো। ততদিন হয়তো আমি বেঁচে থাকব না। কিন্তু আজকের প্রজন্ম নিশ্চয় সেই পথেই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তারা নিশ্চয় বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলবে। আমার এতটুকুই চাওয়া—আমাদের এই অর্জনটুকু যেন ধরে রাখি, এই অর্জন কোনোমতেই হারিয়ে না যায়। আমরা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছি, সেভাবেই যেন এগিয়ে যেতে পারি। আমরা যেন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে পারি।

এর আগে, প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। রাষ্ট্রপতি, স্পিকার ও প্রধান বিচারপতির পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানোর পর একে একে ফুল দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধিত করেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে জাতিসংঘ ও ইউএনডিপি প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে মন্ত্রিসভার সদস্য, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও শরিক দলের নেতা, ঢাকাস্থ বিদেশি মিশনের প্রতিনিধিসহ সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন-

ফুল দিয়ে অভিবাদন জানিয়ে উদযাপনের শুরু


আরও পড়ুন-

ফুল দিয়ে অভিবাদন জানিয়ে উদযাপনের শুরু

/ইউআই/টিআর/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মিয়ানমারে গিয়ে সেনা ট্রেনিং নিলেন ২ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে ঢুকলেন বুলেট নিয়ে
মিয়ানমারে গিয়ে সেনা ট্রেনিং নিলেন ২ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে ঢুকলেন বুলেট নিয়ে
ভাসানটেকে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় একে একে পরিবারের সবার মৃত্যু
ভাসানটেকে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় একে একে পরিবারের সবার মৃত্যু
রবিবার দুবাই থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দেবে এমভি আবদুল্লাহ
রবিবার দুবাই থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দেবে এমভি আবদুল্লাহ
একে অপরের জ্বালানি স্থাপনায় হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া ও ইউক্রেন
একে অপরের জ্বালানি স্থাপনায় হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া ও ইউক্রেন
সর্বাধিক পঠিত
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
তাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
প্রাক-প্রাথমিক বন্ধই থাকছেতাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু