X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ যাত্রীতে হিমশিম খাচ্ছে অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলো

চৌধুরী আকবর হোসেন
০৪ এপ্রিল ২০১৮, ১৯:০৪আপডেট : ০৫ এপ্রিল ২০১৮, ০৯:১৭

সৈয়দপুর বিমানবন্দর ( ছবি:  নীলফামারী প্রতিনিধি)
দেশে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ও আকাশপথে ভ্রমণকারীর সংখ্যা বাড়ায় এয়ারলাইন্সগুলোও প্রতিনিয়ত বাড়াচ্ছে অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইটের সংখ্যা। গত পাঁচ বছরে যাত্রী পরিবহনের হার দ্বিগুণ বেড়েছে। তবে টার্মিনাল ভবনসহ বিমানবন্দরের আধুনিকায়ন না করায় যাত্রীদের পড়তে হচ্ছে নানা ভোগান্তিতে। এ কারণে হিমশিম খেতে হচ্ছে বিমানবন্দরগুলোর কর্তৃপক্ষকে। সিভিল এভিয়েশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, ২০১৩ সালে দেশের অভ্যন্তরীণ রুটে ১২ হাজার ৫২৬ টি ফ্লাইট পরিচালিত হয়েছে। ২০১৭ সালে ফ্লাইট সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮ হাজার ৫৭টি। দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রয়েছে তিনটি। এরমধ্যে শুধু ঢাকায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রয়েছে পৃথক অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল। এছাড়া, চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দর, সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের  একই টার্মিনালে মধ্য দিয়েই অভ্যন্তরীণ  ও আন্তর্জাতিক যাত্রীরা যাতায়াত করেন। এছাড়া শুধু অভ্যন্তরীণ রুটের জন্য চারটি বিমানবন্দর ব্যবহৃত হচ্ছে। বিমানবন্দরগুলো হচ্ছে—কক্সবাজার বিমানবন্দর, যশোর বিমানবন্দর, বরিশাল  বিমানবন্দর, রাজশাহীর শাহ মাখদুম বিমানবন্দর ও সৈয়দপুর বিমানবন্দর।

এয়ারলাইন্সগুলোর অভিযোগ, দেশের অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলো অনেক পুরনো হওয়ায় টার্মিনাল ভবনগুলোর বর্তমানে যাত্রী ধারণক্ষমতা নেই। একইসঙ্গে একাধিক ফ্লাইট উড্ডয়ন ও অবতরণ করলে বিমানবন্দরে যাত্রীদের চেকিং ও বোডিংসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে হিমশিম খেতে হয় এয়ারলাইন্স ও বিমানব্ন্দরের কর্মীদের। অনেক বিমানবন্দরে সব যাত্রী একসঙ্গে দাঁড়ানোর স্থানও সংকুলান হয় না। অপেক্ষমাণ যাত্রী  ও বোডিং হওয়া যাত্রীদের বসার জায়গাও পর্যাপ্ত নয় এসব বিমানবন্দরের। এছাড়া, টয়লেট, গাড়ি পাকিংসহ অন্যান্য সুবিধাও অপর্যাপ্ত দেশের অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলোতে।

এ প্রসঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দেশের বিমানবন্দরগুলো অনেক পুরনো। কিন্তু প্রতিনিয়ত আকাশপথে যাত্রী পরিবহনের হার বাড়ছে। এ কারণে যাত্রীদের যথাযথা সুবিধা নিশ্চিত করা কঠিন। বিশেষ করে প্রায় একই সময়ে একাধিক ফ্লাইট থাকলে যাত্রীদের হ্যান্ডলিং করা কঠিন হয়ে পড়ে।’  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেসরকারি একটি এয়ারলাইন্সের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল কত আগে নির্মিত, এটি যাত্রীদের কাছে বিবেচ্য বিষয় নয়। যাত্রীরা বিমান ভাড়া, ট্রাভেল ট্যাক্স দিয়ে যাতায়াত করেন। কোনও যাত্রী বিমানবন্দরে এসে বসার জায়গা না পেলে ক্ষোভ প্রকাশ করবেন এটাই স্বাভাবিক। কোনও কোনও সময় এমন পরিস্থিতি হয়, দাঁড়ানোর জায়গাও থাকে না। এক্ষেত্রে যাত্রীদের ক্ষোভ সামলাতে এয়ারলাইন্সগুলোকেই বেশি বেগ পেতে হয়। কারণ বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সরাসরি যাত্রীদের হ্যান্ডেলিং করে না।  এসব সমস্যা দ্রুত সমাধান করা জরুরি।’

সিভিল এভিয়েশনের তথ্য মতে, গেছে, ২০১৩ সালে দেশের অভ্যন্তরীণ রুটে ১২ হাজার ৫২৬টি ফ্লাইটে ৬ লাখ ৪৮ হাজার ১৯ জন যাত্রী যাতায়াত করেছেন। ২০১৪ সালে ২৪ হাজার ১২৭টি ফ্লাইটে ৬ লাখ ৮৫ হাজার ১৯৮ জন যাত্রী যাতায়াত করেছেন। ২০১৫ সালে ৩২ হাজার ২১২টি ফ্লাইটে  ৯ লাখ ১২ হাজার ৬৪৪জন যাত্রী যাতায়াত করেছেন। ২০১৬ সালে ৩৮ হাজার ২০টি ফ্লাইটে ১০ লাখ  ৩হাজার ৩১জন যাত্রী যাতায়াত করেছেন। ২০১৭ সালে ৩৮ হাজার ৫৭টি ফ্লাইটে ১০ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ জন যাতায়াত করেছেন।

দেশের অভ্যন্তরে ৪টি এয়ারলাইন্স ফ্লাইট পরিচালনা করে। এরমধ্যে কয়েকটি এয়ারলাইন্স সম্প্রতি অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে। ২৫ মার্চ থেকে দেশের অভ্যন্তরীণ গন্তব্যগুলো ফ্লাইটের সংখ্যা বাড়িয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। 

এ প্রসঙ্গে এয়ারলাইন্সটির মহাব্যবস্থাপক শাকিল মেরাজ  বলেন, ‘ক্রমবর্ধমান যাত্রী চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে  অভ্যন্তরীণ রুটে  ফ্লাইট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন,  ‘২৫ মার্চ থেকে ঢাকা থেকে কক্সবাজারে সপ্তাহে ৭টির স্থলে ১০টি ফ্লাইট পরিচালনা করা হচ্ছে।  ঢাকা-যশোর রুটে সপ্তাহে ৭টির স্থলে ৮টি এবং ঢাকা-বরিশাল রুটে সপ্তাহে ২টির স্থলে ৩টি ফ্লাইট পরিচালনা  করা হচ্ছে।  ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে সপ্তাহে ৩০টি ফ্লাইট থেকে বৃদ্ধি করে ৩২টিতে উন্নীত করা হয়েছে। এছাড়া, সিলেট রুটে ৩১টির স্থলে ৩৪টি ফ্লাইট পরিচালনা করা হচ্ছে।  প্রতি সপ্তাহে ঢাকা-রাজশাহী রুটে ৪টি ও ঢাকা-সৈয়দপুর রুটে ৭টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে বিমান।’

নভোএয়ার জানিয়েছে, ১ এপ্রিল থেকে রাজশাহী রুটে প্রতিদিন যাত্রী পরিবহন শুরছে নভোএয়ার। ১ এপ্রিল থেকে প্রতিদিন চট্টগ্রাম রুটে ছয়টি, কক্সবাজার রুটে চারটি ও সৈয়দপুর রুটে চারটি করে ফ্লাইট পরিচালনা করছে এয়ারলাইন্সটি।

দ্রুত এসব সংকট  কাটিয়ে উঠার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সিভিল এভিয়েশন অথরিটি। সংস্থাটির সদস্য (পরিকল্পনা ও পরিচালনা) মোস্তাফিজুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,  ‘দেশের অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলোর সংস্কার কাজ  ও নতুন টার্মিনাল ভবন নির্মানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।  যাত্রীদের  প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে বসার ব্যবস্থা, টয়লেট, টেলিফোন,  ফুড কোর্টসহ অন্যান্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘সৈয়দপুর বিমানবন্দরের ডিপার্চার (বহির্গমন) টার্মিনাল  সংস্কার করা হবে। সেখানে নতুন করে অ্যারাইভাল (আগমনী) টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। এছাড়া, সেখানে যাত্রীদের প্রয়োজনীয় অন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হবে। যশোর বিমানবন্দরে নতুন করে ডিপার্চার (বহির্গমন) টার্মিনাল করা হবে। বর্তমানে যশোরে যে টার্মিনাল ভবনটি রয়েছে, সেটি অ্যারাইভাল (আগমনী) টার্মিনাল হিসেবে ব্যবহার করা হবে। কক্সবাজার বিমানবন্দরেও নতুন আরেকটি  টার্মিনাল ভবন নির্মাণ করা হবে। এছাড়া, সব বিমানবন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য অন্যান্য কারিগরি ও প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

/এমএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (২৬ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৬ এপ্রিল, ২০২৪)
ট্রাকেই পচে যাচ্ছে ভারত থেকে আনা আলু, বাজারে ৫৫ টাকা কেজি
ট্রাকেই পচে যাচ্ছে ভারত থেকে আনা আলু, বাজারে ৫৫ টাকা কেজি
দুর্বৃত্তের হামলায় গুরুতর আহত যুবলীগ নেতা
দুর্বৃত্তের হামলায় গুরুতর আহত যুবলীগ নেতা
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা