বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদের মরদেহে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদের পক্ষে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান মেজর আশিকুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তার উপ সামরিক সচিব কর্নেল মো সাইফুল্লাহ।
এরপর শ্রদ্ধা জানান, জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া।
এর আগে রবিবার (২২ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা ২০ মিনিটে ফজলে হাসান আবেদের মরদেহ আর্মি স্টেডিয়ামে আনা হয়।
ব্র্যাকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শ্রদ্ধা জানানোর পর দুপুর সাড়ে ১২টায় আর্মি স্টেডিয়ামেই হবে তার নামাজে জানাজা। এরপর বিকালে ফজলে হাসান আবেদকে দাফন করা হবে বনানী কবরস্থানে।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ মাহবুব উল আলম হানিফ, বাহাউদ্দিন নাছিম, দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।
শ্রদ্ধা জানানোর আগে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘স্যার ফজলে হাসান আবেদ একজন জনদরদী অসাধারণ মানুষ ছিলেন। তার শূন্যতা কোনোদিন পূরণ হবে না। তার তুলনা তিনি নিজে। এদেশে অনেক এনজিও কার্যক্রম আছে। ফজলে হাসান আবেদ ছিলেন একেবারে প্রচার বিমুখ। নীরবে, নিঃশর্তভাবে তিনি বাংলার তৃণমূল পর্যন্ত তার কার্যক্রম ছড়িয়ে দিয়েছেন। দেশব্যাপী ব্র্যাকের কর্মকাণ্ড বিস্তৃত হয়েছে। শুধু দেশেই নয় দেশের বাইরেও ব্র্যাকের কার্যক্রম বিস্তৃতি লাভ করেছে। বাংলাদেশের তৃণমূলের মানুষের জন্য তার অসামান্য অবদান রয়েছে। ব্র্যাক ব্যাংকের মাধ্যমেও ক্ষুদ্র ঋণে অবদান আছে তার। তিনি চলে গেলেও তার অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
এছাড়াও ফজলে হাসান আবেদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সভাপতি রাশেদ খান মেনন, গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য ড. ম তামিম, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ইমান আলী।
আরও শ্রদ্ধা জানায়, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র, জাতিসংঘ ঢাকা কার্যালয়, এফবিসিসিআই, এমসিসিআই, প্রশিকা, বেঙ্গল ফাউন্ডেশন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, নিজেরাই করি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের পক্ষে সারা জাকের, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, ফুড ফর দ্য হাংরি।
উল্লেখ্য, ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ও ইমেরিটাস চেয়ার স্যার ফজলে হাসান আবেদ গত শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) রাত ৮টা ২৮ মিনিটে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধী অবস্থায় মারা যান। দীর্ঘদিন ধরে তিনি অসুস্থ ছিলেন। ২৮ নভেম্বর তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানেই তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
প্রসঙ্গত, ফজলে হাসান আবেদ ১৯৩৬ সালের ২৭ এপ্রিল বাংলাদেশের হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পাবনা জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর তিনি ব্রিটেনের গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে নেভাল আর্কিটেকচারে ভর্তি হয়েছিলেন। সেটা বাদ দিয়ে তিনি লন্ডনের চার্টার্ড ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউনট্যান্টসে ভর্তি হন। ১৯৬২ সালে তিনি তার প্রফেশনাল কোর্স সম্পন্ন করেন। ১৯৮০ সালে র্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার, ২০১১ সালে ওয়াইজ প্রাইজ অব এডুকেশন, ২০১৪ সালে লিও টলস্টয় ইন্টারন্যাশনাল গোল্ড মেডেল, স্প্যানিশ অর্ডার অব সিভিল ম্যারিট, ২০১৫ সালে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি পুরস্কার অর্জন করেন। সর্বশেষ চলতি বছর তিনি সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে দক্ষিণ এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে সাউথ এশিয়ান ডায়াসপোরা অ্যাওয়ার্ড, শিক্ষায় ভূমিকা রাখায় ইয়াডান পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন। ১৯৭২ সালে ব্র্যাক প্রতিষ্ঠা করার পর তা বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় পরিণত হয়েছে।
ছবি: সাজ্জাদ হোসেন
আরও পড়ুন:
‘আমৃত্যু মানুষের কল্যাণ চেয়েছেন স্যার ফজলে হাসান আবেদ’
স্যার ফজলে হাসান আবেদ আর নেই
স্যার আবেদ প্রয়াণের শোক দেশে-বিদেশে