X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সিএএ নিয়ে ভারতের উদ্দেশ্য বোধগম্য নয়: প্রধানমন্ত্রী

বিদেশ ডেস্ক
১৯ জানুয়ারি ২০২০, ০৩:৪০আপডেট : ১৯ জানুয়ারি ২০২০, ১৭:০৫

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়ে ভারত সরকারের উদ্দেশ্য ও পরিকল্পনা কী; তা বুঝতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমিরাত সফররত প্রধানমন্ত্রী আবু ধাবিতে গালফ নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে  বলেছেন, ‘আমরা বুঝি না ভারত সরকার কেন এই কাজটি করলো। এটা জরুরি ছিল না।’ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এটি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়।

সিএএ নিয়ে ভারতের উদ্দেশ্য বোধগম্য নয়: প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে নিপীড়নের মুখে ভারতে পালিয়ে যাওয়া হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, পার্সি ও খ্রিষ্টানদের নাগরিকত্ব নিশ্চিতে গত বছরের ডিসেম্বরে আইন সংশোধন করেছে ভারত। বিতর্কিত এই আইন প্রত্যাহারের দাবিতে দেশজুড়ে সরব হয়েছে একাধিক রাজনৈতিক দল। চলছে দফায় দফায় বিক্ষোভ। সিএএ পাস হওয়ার পরই ভারতজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। এছাড়া জাতীয় নাগরিক তালিকারও বিরোধিতা করছে সাধারণ মানুষ। বাংলাদেশের বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভারতে থাকা মুসলিমরা নিজেদের নাগরিকত্ব প্রমাণে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশে আশ্রয় খুঁজবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভারতে পাড়ি দেওয়া কেউ বাংলাদেশে ফিরে এসেছে এমন নজির নেই। তবে ভারতে অনেকে সমস্যার মধ্যে আছে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সবসময়ই এই সিএএ এবং এনআরসিকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ই মনে করে আসছে। ভারত সরকারও সবসময় বলে আসছে, এটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও ব্যক্তিগতভাবে আমাকে এ বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন।’

রোহিঙ্গা সংকট

শেখ হাসিনার মতে, বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সর্বোচ্চ সুসম্পর্ক রয়েছে। বেশ কিছু বিষয়ে ভারত বাংলাদেশকে সহায়তা করছে। এ সময় মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ১২ লাখ রোহিঙ্গাদের কক্সবাজারে আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে ভারতের উদ্বেগের কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকটের শুরু মিয়ানমারে। তাদের কাছেই এর সমাধান রয়েছে। কিন্তু মিয়ানমার এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসনের বিষয়ে কোনও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। এখন পর্যন্ত দুবার প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও কোনও রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় সেখানে যেতে চায়নি। ফলে আমাদের উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে। মিয়ানমার আসলে প্রত্যাবাসনের উপযোগী পরিবেশ তৈরিতে ব্যর্থ হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ অনির্দিষ্টকালের জন্য ১০ লাখের বেশি শরণার্থীর বোঝা বহন করতে পারবে না। এই সমস্যা থাকলে আমাদের দেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়বে। সেজন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এই সংকট সমাধানে এগিয়ে আসা উচিত।

কার্বন নিঃসরণ

কয়লা পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনায় পরিবেশবাদীদের শঙ্কা প্রকাশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছেন। তিনি বলেন, কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিবেশের ক্ষতি করবে না। বাংলাদেশ এখন আড়াই শতাংশ বিদ্যুৎ কয়লা থেকে উৎপাদন করে। আমরা এটা ২৫ শতাংশে উন্নীত করবো। শেখ হাসিনা বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ খুব বেশি কার্বন নিঃসরণ করে না। তাই বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে কিছুটা কার্বন ব্যবহার করতে পারা উচিত বাংলাদেশের। উন্নয়ন রূপরেখা বাস্তবায়ন করতে এটা জরুরি।

নতুন কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র

২০১৬ সালে বাংলাদেশ ২৯টি কয়লা খনি তৈরির ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ। যদিও জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের উপকূলে থাকা ৪ কোটিরও বেশি মানুষ ঝুঁকির মুখে পড়বে বলে ধারণা করা হয়। এছাড়া পদ্মা, মেঘনা, যমুনার মতো গুরুত্বপূর্ণ নদীগুলোর ভাঙনেরও ঝুঁকি রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের প্রথম কয়লা খনি তৈরির ২২ বছর হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত কোনও পরিবেশের ক্ষতি দেখিনি আমরা। আমি ব্যক্তিগতভাবে দিনাজপুরে গিয়ে সেই কেন্দ্র সফর করে এসেছি।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন বিশ্বের অষ্টম জনবহুল দেশ। এত বিশাল জনগোষ্ঠীর চাহিদা সামাল দিতে এমন করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ’৯৫ শতাংশ জনগণ এখন বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে। কিন্তু মানুষ বাড়ছে। তাদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে। ফলে চাহিদাও বাড়ছে। মোবাইল, কম্পিউটার থেকে শুরু করে ডিজিটাল ক্লাসরুমে এখন বেশি বিদ্যুৎ প্রয়োজন।’

প্রাকৃতিক গ্যাসের অভাব

অতীতে বাংলাদেশ বেশিরভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদন করতো প্রাকৃতিক গ্যাসের মাধ্যমে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক দশক আগেও বিদ্যুৎ উৎপাদনের মূল উৎস ছিল গ্যাস। কিন্তু আমাদের গ্যাস কমে যাচ্ছে। তাই কয়লা, তরল জ্বালানি ও পরমাণু শক্তির ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে আমাদের।

শেখ হাসিনা বলেন, ভারত থেকে ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে বাংলাদেশ। নেপাল, ভারত ও ভুটানের সঙ্গে জলবিদ্যুতের চুক্তি করা হয়েছে। এখন বাংলাদেশে ২ দশমিক ৪ গিগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। দেশজুড়ে স্থাপন করা হয়েছে ৫৩ লাখ সোলার প্যানেল। এছাড়া ছাই বাইপ্রোডাক্ট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

প্লাস্টিক নিষিদ্ধকরণ

বাংলাদেশ বারবার প্লাস্টিক নিষিদ্ধের কথা বলে আসছে। ২০০২ সালে একবার পলিথিন নিষিদ্ধ করাও হয়েছিলো। এখনও উপকূলীয় অঞ্চলে হোটেল, রেস্টুরেন্টগুলোতে প্লাস্টিক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখনও শতভাগ পলিথিন ব্যবহার বন্ধে সফল হয়নি। মূলত কম টাকায় বিকল্প তৈরি করা যায়নি এখনও। তবে পরিস্থিতি পাল্টেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন আমাদের কাছে বিকল্প আছে। এখন ভুট্টা নিয়ে বায়োগ্রেডেবল ব্যাগ তৈরি করেছি আমরা। এছাড়া পাট দিয়েও ব্যাগ তৈরি করছেন বিজ্ঞানীরা। আমি এর নাম দিয়েছে সোনালি ব্যাগ। আমাদের পাট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন এটা কম দামে বাজারজাত করা হয়।

/এমএইচ/টিটি/বিএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ফরিদপুরে দুই শ্রমিক হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার দাবিতে খেলাফত মজলিসের মিছিল
ফরিদপুরে দুই শ্রমিক হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার দাবিতে খেলাফত মজলিসের মিছিল
মশা তাড়ানোর ৫ প্রাকৃতিক উপায়
মশা তাড়ানোর ৫ প্রাকৃতিক উপায়
মেলা থেকে অস্ত্রের মুখে দুই নারীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ
মেলা থেকে অস্ত্রের মুখে দুই নারীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ
তীব্র গরমে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুন
তীব্র গরমে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুন
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ