করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে রেড জোন এলাকায় সাধারণ ছুটি থাকবে বলে ঘোষণা করেছে সরকার। কিন্তু কবে থেকে এ ছুটি কার্যকর হবে সে সম্পর্কে কোনও দিক নির্দেশনা না থাকায় এ ছুটি নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই সংবাদপত্র অফিসে বা সংবাদকর্মীদের কাছে জানতে চেয়েছেন রেড জোনে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি কবে থেকে কার্যকর হবে, বা ইতোমধ্যে হয়েছে কিনা।
অন্যদিকে রেড জোনে বসবাসকারী সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীরা নিজ নিজ কর্মস্থলে ফোন করে জানতে চেয়েছেন তারা রেড জোনের বিধিনিষেধ মেনে বাড়িতে অবস্থান করবেন কিনা? আবার অনেকের বাসা গ্রিন জোনে পড়লেও কর্মস্থল রেড জোনে পড়েছে। সেখানে কী হবে? ওই কর্মস্থল বন্ধ থাকবে কিনা, এসব প্রশ্ন জনমনে।
গতকাল ১৫ জুন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়েছে। প্রথম দফায় জারি করা প্রজ্ঞাপনে রেড ও ইয়েলো জোনের আওতায় থাকা এলাকায় সাধারণ ছুটি থাকবে বলা হয়। এবং তা ওয়েবসাইটে প্রকাশও করা হয়। কিন্তু এর কিছু সময় পর ওই প্রজ্ঞাপনটি প্রত্যাহার করা হয়। প্রজ্ঞাপনের কপিটি সরিয়ে নেওয়া হয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইট থেকে। কিছু সময় পর প্রজ্ঞাপনটি সংশোধন করে জানানো হয়, ইয়েলো জোনে নয়, শুধু রেড জোনেই সাধারণ ছুটি থাকবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব শেখ ইউসুফ হারুন উল্টো এই প্রতিবেদকের কাছে জানতে চান, রেড জোন ঘোষণা হয়েছে নাকি? কে, কবে, কোন, এলাকাকে রেড জোন হিসেবে ঘোষণা করলো?
তিনি জানান, এখনও পর্যন্ত সরকার কোনও এলাকাকেই রেড জোন হিসেবে ঘোষণা করেনি। কাজেই সাধারণ ছুটির তো প্রশ্নই আসে না। আগে রেড জোন ঘোষণা করা হোক, তার পর দেখা যাবে কবে থেকে সাধারণ ছুটি কার্যকর হয়।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটি ইতোমধ্যে যেসব এলাকাকে রেড, ইয়েলো এবং গ্রিন জোন হিসেবে চিহ্নিত করে কিছু এলাকার নাম প্রকাশ করেছে, সেসব এলাকা কী রেড, ইয়েলো বা গ্রিন জোন নয়, এমন প্রশ্নের জবাবে জনপ্রশাসন সচিব জানান, তারা কিছু এলাকাকে রেড, ইয়েলো এবং গ্রিন জোন হিসেবে সুপারিশ করেছে। এর মানে তো এই নয় যে, তা রেড, ইয়েলো এবং গ্রিন জোন হয়ে গেছে। আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে রেড, ইয়েলো এবং গ্রিন জোন হিসেবে এলাকা ঘোষণা করতে বলেন, তার পরে আমরা বলবো কবে থেকে সেখানে সাধারণ ছুটি কার্যকর হবে।
এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আলী কদর জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি। তবে যখন থেকে যে এলাকাকে রেড জোন হিসেবে ঘোষণা করে লকডাউন কার্যকর করা হবে তখন থেকেই ওই এলাকায় সাধারণ ছুটি কার্যকর হবে। তিনি জানান, এই মুহূর্তে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজার ছাড়া দেশের কোথাও কোনও এলাকাকেই রেড জোন হিসেবে ঘোষণা করা হয়নি এবং কোথাও লকডাউনও কার্যকর নয়।
উল্লেখ্য, গতকাল (১৫ জুন) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে আগের শর্তেই সরকারের দেওয়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন ও সরকারি-বেসরকারি অফিস চলবে। তবে করোনাভাইরাসজনিত রোগ কোভিড-১৯ এর বিস্তার রোধকল্পে শর্তসাপেক্ষে সার্বিক কার্যাবলি/চলাচলে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ ১৬ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সাপ্তাহিক ছুটি এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকবে। তবে রেড জোনে সাধারণ ছুটি থাকবে।
সোমবার (১৫ জুন) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব মো. ছাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য অধিদফতর কর্তৃক প্রণীত (Bangladesh risk zone-based covid-19 containment implementation startegy/guide) গাইডলাইন অনুসরণ করে সংক্রমণের ভিত্তিতে সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন-২০১৮ অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ লাল অঞ্চল, হলুদ অঞ্চল ও সবুজ অঞ্চল হিসেবে ভাগ করে জেলা/উপজেলা/এলকা/বাড়ি/মহল্লাভিত্তিক জন চলাচল/জীবনযাত্রা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।
আদেশে আরও বলা হয়, সিটি করপোরেশন এলাকায় অঞ্চলভিত্তিক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করার সার্বিক দায়িত্ব থাকবে সিটি করপোরেশনের। এর বাইরে জেলা প্রশাসন সার্বিক সমন্বয় করবে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান জেলা উপজেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট দফতর সমন্বিতভাবে এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, কোভিড আক্রান্ত কিছু এলাকা নির্দিষ্ট করা হয়েছে। ঢাকার এলাকাগুলোতে আমরা সহযোগিতা করছি। কিন্তু নির্দেশনা হচ্ছে, সিভিল সার্জনরা নিজেরাই জোনভিত্তিক এলাকা ঘোষণা করবেন। আমরা তাদের সহযোগিতা করবো। এটা স্থানীয়ভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। স্থানীয়ভাবে সিদ্ধান্ত হওয়াটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, লকডাউন সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে সেটি বাস্তবায়নে অনেক মন্ত্রণালয় ও দফতর জড়িত। তাই এককভাবে কারও পক্ষে কোনও এলাকা লকডাউন করা সম্ভব নয়।
এদিকে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানান, দেশের বিদ্যমান সংক্রামক রোগ আইন অনুযায়ী রাজধানীর বাইরে জেলাগুলোয় কোনও এলাকা লকডাউন করতে হলে সেই জেলার সিভিল সার্জনের পরামর্শ অনুযায়ী স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমতি নিয়েই লকডাউন করতে হবে। সেক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার লকডাউন কার্যকর করবেন।
এদিকে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) প্রতিরোধে দেশে জোনভিত্তিক লকডাউন কার্যক্রম শুরু হলে মাত্রা অনুসারে রেড জোনগুলোতে টহলে থাকবে সেনাবাহিনী। মঙ্গলবার (১৬ জুন) এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর)। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রেড জোনগুলোতে সরকারি নির্দেশাবলি যথাযথভাবে পালনের উদ্দেশে সেনাটহল জোরদার করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন- সংশোধিত প্রজ্ঞাপনে শুধু রেড জোনে সাধারণ ছুটি
সাধারণ ছুটির আওতায় রেড ও ইয়েলো জোন
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়লো ৬ আগস্ট পর্যন্ত
রেড-ইয়েলো-গ্রিন জোনে যেভাবে কাজ চলবে