আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বাজেট দাবির বিরুদ্ধে নোটিশ দিয়ে ছাঁটাই প্রস্তাব আনেন জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সংসদ সদস্যরা। ওই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ কমিয়ে এক টাকা করার দাবি করেন তারা। তবে ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর দেওয়া বক্তব্যে বলেছেন উল্টো কথা। প্রায় সব সংসদ সদস্যই ওই মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ বাড়ানোর কথা বলেছেন। বেশি করে বরাদ্দ চাইতে না পারায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সমালোচনা করেন তারা। অবশ্য আইনমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমি আস্তে আস্তে এগুতে চাই। বরাদ্দ যথাযথভাবে খরচ করে অর্থমন্ত্রীকে সন্তুষ্ট করতে চাই।’
মঙ্গলবার (৩০ জুন) জাতীয় সংসদে আইন মন্ত্রণালয়ের মঞ্জুরী দাবির ওপর ছাঁটাই প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া সংসদের বৈঠকে এসময় প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘সামান্য গরু চুরি করে বছরের পর বছর কোর্টের পেছনে ঘুরতে ঘুরতে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। আর হাজার হাজার কোটি টাকা যারা চুরি করছে তারা নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আইনে সমতা নেই। আমাদের টাকা দিতে অসুবিধা নেই। টাকা তো দিতেই হবে।’
ফিরোজ রশীদ তার বক্তব্যে সালিশের মাধ্যমে মামলার নিষ্পত্তির প্রস্তাব করেন।
জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি বছরের শুরুতে সংসদে যে ভাষণ দিয়েছিলেন সেখানে বিপুল সংখ্যক বিচারপতি নিয়োগের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু বাজেট বক্তব্যে তার কোনও প্রতিফলন নেই। বর্তমানে দেশে যে সংখ্যক বিচারপতি রয়েছেন তাদের নিয়ে দেশের বিদ্যমান মামলাগুলো ৩০ বছরেও শেষ হবে না। মনে হচ্ছে দেশের বিভাগ ব্যবস্থাকে দুর্বল করার চেষ্টা হচ্ছে। যদিও এটা ছাঁটাই প্রস্তাব, তারপরেও বলছি এত বড় বাজেট সেখানে মাত্র এক হাজার কোটি সামথিং বিচার বিভাগের জন্য বরাদ্দ। এর সঙ্গে লেজিসলেটিং উইংয়ের জন্য ৪০ কোটি। এটা তো প্রচুর হওয়া উচিত ছিল। আরও অনেক বেশি হওয়া দরকার ছিল।’ তিনি তার বিচারবিভাগকে শক্তিশালী করার কথা বলেন।
বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, ‘বিচার বিভাগ স্বাধীন নয়। এ বিভাগ এখনও নির্বাহী বিভাগের অধীনে। সরকারের অঙ্গুলি নির্দেশে বিভিন্ন বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। চিহ্নিত মাদক সম্রাট, সরকারি সম্পদ আত্মসাৎকারী, সন্ত্রাসী, লুটেরা, বিচারের বাইরে। আর তারা সরকারি দলের হলে তো কথা নেই। বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতা-কর্মী রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে। বিচার পাচ্ছে না। এই অবস্থার উত্তরণের জন্য বিচার বিভাগকে ঢেলে সাজিয়ে স্বাধীন করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যদিও ছাঁটাই প্রস্তাব করেছি। কিন্তু এই বিচার ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর জন্য, সত্যিকার ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য যদি আরেও টাকার প্রয়োজন হয় সেই অর্থ দাবি করা হলে আমরা সংসদ থেকে অবশ্যই তা পাস করবো।’
জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান তার ছাঁটাই প্রস্তাবের বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আইনমন্ত্রী ভদ্র মানুষ। এ জন্য ভদ্রতার খাতিরে তিনি অল্প দাবি করেছেন। এই মন্ত্রণালয়ের অনেক অর্থের প্রয়োজন। আদালতে বিচারকদের চেম্বার নেই। এজলাস ভাগ করে বিচারপতিরা বসেন। তাদের আবাসনের ব্যবস্থা নেই।‘
রওশন আরা মান্নান বলেন, ‘মামলার জট ৫০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। একজন বিচারপতির ওপর ৫ থেকে ১০ হাজার মামলার দায়িত্ব পড়েছে। এই মামলার জট কমাতে হবে। বিচারপতি নিয়োগ দিতে হবে। বিচারপতিরা বিভিন্ন পার্টিতে যান, আমরা এ ধরনের বিচারপতি দেখতে চাই না। তারা হবেন ন্যায়ের প্রতীক।’
মুজিবুল হক (চুন্নু) বলেন, ‘আইনমন্ত্রী একজন দক্ষ মানুষ। উনি টাকা চাইতে কম চেয়েছেন কেন? এই রিমাইন্ডার দেওয়ার জন্য ছাঁটাই প্রস্তাব দিয়েছি। এটা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য ছাঁটাই প্রস্তাব। দেশে মামলার জট। এই জট কমাতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারপতি নিয়োগ দিতে হবে। এজন্য আমাদের টাকা দিতে আপত্তি নেই। আমরা টাকা দিতে চাই। আপনি টাকা নেন।’
সংসদ সদস্যদের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি ভদ্রলোক। এটার ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু আমি তো ভয় পেয়ে গেলাম। এক হাজার ৭’শ কোটি টাকা চেয়েছি। উনারা বলেন এক হাজার দেন। আমি দুই হাজার কোটি টাকা চাইলে তো উনারা হার্টফেল করতেন। সেই জন্য আমি আস্তে আস্তে চাচ্ছি। আমি কাজ দেখিয়ে অর্থমন্ত্রীকে সন্তুষ্ট করতে চাই এবং সেটা নিয়ে যেতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আদালত ভবন নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় কাজ করে যাচ্ছি। কোনও কাজ বন্ধ নেই। সেই জন্য এক হাজার ৭৪০ কোটি টাকা চেয়েছি। আমরা যে ন্যায়বিচার শুরু করেছি, এই টাকা পেলে তা এগিয়ে যাবে।’
মামলা ৩২ লাখের মতো উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা লিগ্যাল এইড প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আদালতের বাইরে নিষ্পত্তির মাধ্যমে মামলা যাতে কম হয় সেই উদ্যোগ নিয়েছি। এই কার্যক্রম চলছে। আমাদের আরও কিছু পদক্ষেপ রয়েছে। তবে, করোনাভাইরাসের কারণে কিছু কাজ শুরু করা যায়নি। আগামী বছর যখন দেখবেন আমি আরও বেশি টাকা চেয়েছি, তখন যেন আপনাদের হার্টফেল না করে।’
আরও পড়ুন- বিচার বিভাগ স্বাধীন নয়, পাকিস্তান আমলের মতো আইন করুন: বিএনপির হারুন