(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ওই বছরের ১০ আগস্টের ঘটনা।)
জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভের ব্যাপারে বাংলাদেশের আবেদনে সমর্থনের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিরাপত্তা পরিষদের সকল সদস্য দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের কাছে বিশেষ চিঠি পাঠান। লন্ডন থেকে এনার দেওয়া খবরের বরাত দিয়ে ১৯৭২ সালের ১১ আগস্টে দৈনিক বাংলার খবরে বলা হয়, চীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লায়-এর কাছে পাঠানো এক চিঠিতে বঙ্গবন্ধু চীন ও বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে যুগ-যুগান্তরের বন্ধুত্বের কথা উল্লেখ করেন। তিনি সাম্প্রতিক সময়ে তার চীন সফরের বিষয় চিঠিতে তুলে ধরে একইসঙ্গে তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শহীদ সোহরাওয়ার্দীর পিকিং সফরের কথাও উল্লেখ করেন।
চীন ভেটো দিতে পারে
জাতিসংঘের সদস্য পদের জন্য বাংলাদেশের আবেদন নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক বসার কথা। বাংলাদেশের সদস্যপদ লাভের প্রশ্নে নিরাপত্তা পরিষদের প্রেসিডেন্ট এওয়ার্ড সদস্য রাষ্ট্রপক্ষের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেন। তাতে দেখা যায়, এ ব্যাপারে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীন সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটি নীতি গ্রহণ করছে। বাংলাদেশকে অবিলম্বে জাতিসংঘে ১৩৩তম সদস্য হিসেবে গ্রহণের জন্য সোভিয়েত ইউনিয়ন নিরাপত্তা পরিষদের কাছে দাবি করেছে। এদিকে নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী কয়েকটি সদস্য দেশকে নিয়ে গণচীন জাতিসংঘে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির বিরোধিতা করার উদ্যোগ নিচ্ছে। ভয়েস অব আমেরিকার এক সংবাদ বিবৃতিতে বলা হয়, বৈঠকে জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ লাভের বিষয়ে চীন ভেটো দিতে পারে। এদিকে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হুমকি দিয়েছেন, বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্য লাভে সক্ষম হবে না। তিনি বাংলাদেশকে স্বীকৃতির সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘের দ্বার রুদ্ধ দেখতে পাবেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার জন্য তার সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের আগামী সপ্তাহের অধিবেশনে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানের প্রসঙ্গে আলোচনা করা আর সম্ভব নয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আমি বলতে পারি যে বাংলাদেশের জন্য জাতিসংঘের দরজা বন্ধ। এত জোর দিয়ে কীভাবে একথা বলতে পারেন প্রশ্ন করা হলে তিনি গণচীনের ভেটো প্রয়োগের ক্ষমতার কথা উল্লেখ করেন।
বন্যা মোকাবিলায় বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ
জরুরি ভিত্তিতে বন্যা ও ভাঙন সমস্যা মোকাবিলার জন্য বঙ্গবন্ধুকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন সমস্যা মোকাবিলার জন্য সংশ্লিষ্ট মহলকে নির্দেশ দেন। দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বি এম আব্বাসের মাধ্যমে তিনি এই নির্দেশ দেন। সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন আব্বাস। তিনি বিশ্ব ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বন্যা নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে আলোচনার জন্য নিউইয়র্ক যাচ্ছিলেন।
এদিকে বঙ্গবন্ধু দ্রুত সেরে উঠছিলেন। এদিন সকালে চেয়ারে বসে বঙ্গবন্ধু তার প্রাতরাশ সম্পন্ন করেন এবং কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করেন। তিনি গুরুত্বপূর্ণ কাজকর্ম চালিয়ে যান, ফাইলপত্র দেখেন এবং রোগশয্যা থেকে নির্দেশ দেন বলে প্রতিবেদনে প্রকাশ হয়।
ভারতের স্বাধীনতা দিবসে বঙ্গবন্ধুর বাণী
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের অমূল্য সাহায্য ও সমর্থনের কথা পুনরায় শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। বাসসের খবরে বলা হয়, ভারতের ২৫তম স্বাধীনতা বার্ষিকী উপলক্ষে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কাছে এক বাণীতে বঙ্গবন্ধুর তার সরকার ও ভারতের জনগণের প্রতি আন্তরিক অভিনন্দন জানান এবং ভারতবাসীর সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন।
কায়রো সফরের খবর ভিত্তিহীন
ঢাকায় পররাষ্ট্র দফতর থেকে বলা হয়, বঙ্গবন্ধুর কায়রো সফরের খবর সত্য নয়। দেশে প্রত্যাবর্তনের পথে তার কায়রো যাওয়ার কোনও পরিকল্পনা নেই। এর আগে লন্ডন থেকে এক খবরে বলা হয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে ফেরার পথে কায়রো সফর করার সম্ভাবনা আছে।
জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনের সাফল্য কামনায় বঙ্গবন্ধু
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জোট নিরপেক্ষ দেশগুলোর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাফল্য কামনা করে একটি বাণী দেন। সদস্য নয় এমন যেসব দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা বাণী প্রদান করেছিলেন তাদের নামের তালিকা পড়ে শোনানো হয়ে থাকে সম্মেলনে। বাংলাদেশে এই সম্মেলনে জোট নিরপেক্ষ গ্রুপের সদস্যপদ লাভ করার কথা। তবে বাংলাদেশ সরকার অবশ্য প্রথমে জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করার জন্য যোগাযোগ কেন্দ্রীভূত করেছিল। জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করার পর বাংলাদেশ জোট নিরপেক্ষ গোষ্ঠীতে যোগদান করবে বলে পরিকল্পনা নেওয়া হয়।