X
শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫
২০ আষাঢ় ১৪৩২
শেখ হাসিনার নির্বাসিত জীবন

রাষ্ট্রীয় অতিথি থেকে হয়ে যান অভিবাসী

মাহবুব হাসান
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০২:০০আপডেট : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৩:১৭

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: রয়টার্স (ফাইল ফটো)

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যার পর তার বেঁচে যাওয়া দুই সন্তান শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা পড়ে যান অকূল পাথারে। সেদিন তারা অবস্থান করছিলেন বেলজিয়ামে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে। রাতে তাদের ক্যান্ডেল ডিনারে আপ্যায়ন করা হয়। সেই আয়োজনে রীতিমতো আদর-আপ্যায়নের আতিশায্য ছিল। কিন্তু ভোর না হতেই পাল্টে যায় দৃশ্যপট। রাষ্ট্রদূত সানাউল হক দেশে ঘটে যাওয়া বিয়োগন্তক ঘটনা শোনার পর শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে একরকম বাড়ি থেকে বের করেই দেন। স্বামী, সন্তান ও বোনকে নিয়ে শেখ হাসিনাকে জার্মানিতে ফিরে যাওয়ার গাড়ি পর্যন্ত দেননি। অনেক কষ্টে তারা জার্মানিতে রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর বাসভবনে পৌঁছান। এরপর নানা ঘটনার পর ১৯৭৫-এর ২৪ আগস্ট দিল্লিতে পৌঁছান তারা। শুরু হয় প্রবাস জীবন, বলতে গেলে অভিবাসী জীবন।

ইচ্ছের বিরুদ্ধে দিল্লিতে ছয় বছর পরিবার নিয়ে থাকতে বাধ্য হয়েছিলেন শেখ হাসিনা। বার বার দেশে ফিরতে চাইলেও তৎকালীন সরকারের বাধার কারণে ফিরতে পারেননি তিনি। দিল্লিতেও তাদের থাকতে হয়েছে পরিচয় গোপন করে। প্রথমত, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার চাওয়া এবং তার অসমাপ্ত কাজ শেষ করা মিশন; দ্বিতীয়ত, ঘাতকদের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করে চলা– সব মিলিয়ে অনেক কঠিন ছিল দিল্লির জীবন। কড়া নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে দিল্লিতে সময় কেটেছে তার। জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের এক রিপোর্টে বলা হয়, শেখ হাসিনার বাড়ির আশপাশে নিরাপত্তার কড়া বেষ্টনী ছিল। কারণ, ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর কর্তাদের ভয় ছিল তার নিরাপত্তা নিয়ে। তাই নিরাপত্তা বাহিনীর পাশাপাশি গোয়েন্দাদের নজরও থাকতো সেখানে।  

দুই দফা বাসা পাল্টানোর পরে দিল্লির ইন্ডিয়া গেটের কাছে পান্ডারা পার্কে একটি ফ্লাটে স্থায়ীভাবে থাকতে দেওয়া হয় ড. ওয়াজেদ-শেখ হাসিনা দম্পত্তিকে। কিন্তু তাদের চলাফেরা ছিল অত্যন্ত সীমিত। অবশ্য এর মধ্যে ড. ওয়াজেদকে একটি ফেলোশিপ প্রদান করে ভারত সরকার। এই সময়ের মধ্যে শেখ রেহানার এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা থাকলেও ঘটনা পরিক্রমায় তার আর পরীক্ষা দেওয়া হয়নি।  এমনকি শান্তিনিকেতনে তার ভর্তির ব্যবস্থা হলেও নিরাপত্তাজনিত কারণে তা হয়ে ওঠেনি। পরে তিনি লন্ডন চলে যান। সেখানে ১৯৭৬ সালে বিয়ে হয় তার। কিন্তু তাতে যোগ দেওয়া হয়নি পরিবারের বেঁচে থাকা একমাত্র সদস্য বড় বোন শেখ হাসিনা ও তার স্বামী ড. ওয়াজেদের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায়ই বলেন, অর্থাভাবই ছিল সেই বিয়েতে যোগ না দিতে পারার মূল কারণ।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও তৎকালীন তরুণ নেতা তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা একরকম দীনহীন অবস্থায় জীবনযাপন করতে বাধ্য হয়েছেন। অনেকটা অভিবাসীর জীবন। কিন্তু যার ধমনিতে বঙ্গবন্ধুর রক্ত তাকে ঠেকিয়ে রাখে কার সাধ্য। তিনি সব প্রতিকূলতা জয় করে দেশে ফিরে এসেছেন, এদেশের গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিয়েছেন, দেশকে উন্নত-সমৃদ্ধিশীল দেশ হিসেবে গড়ে তুলছেন।’

ভারতে ১৯৭৭ সালের সাধারণ নির্বাচনে ইন্দিরা গান্ধী হেরে যান। সাংবাদিক আবেদ খান এক লেখায় উল্লেখ করেন, ধীরে ধীরে শেখ হাসিনার নিরাপত্তার ব্যবস্থা থেকে হাত গোটাতে শুরু করে মোরারজী দেশাই সরকার। সেই সঙ্গে ডক্টর ওয়াজেদ মিয়া ও শেখ হাসিনার উপরে একরকম চাপ তৈরি করা হয়, যাতে তারা নিজেরাই ভারত ছেড়ে চলে যান। প্রথমে তাদের ফ্ল্যাটের বিদ্যুৎ বিল দেওয়া বন্ধ করা হয়। তারপর গাড়ির ব্যবস্থাও তুলে নেওয়া হয়। ডক্টর ওয়াজেদ নিজের ফেলোশিপটা এক বছর বাড়ানোর আবেদন করেন। প্রায় তিন মাস এর কোনও জবাব আসেনি। সে কারণে তাকে বেশ আর্থিক সমস্যায়ও পড়তে হয়। শেষমেশ মোরারজী দেশাই অবশ্য ঠিক এক বছরের জন্য তার ফেলোশিপ বাড়ানোর অনুমতি দেন। তবে ১৯৮০ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে ইন্দিরা গান্ধী আবার ক্ষমতায় ফিরে আসেন। আবার সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে যায়। ওই বছর আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে দিল্লিতে যান, অনুরোধ করেন তাকে ঢাকায় ফিরে আসার জন্য। এর মধ্যে দেশের রাজনীতিতেও চলছিল নানা খেলা। আওয়ামী লীগও ভাঙনের মুখ থেকে বেরিয়ে ঐক্যবদ্ধ হতে শুরু করেছে। দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গেও শেখ হাসিনার যোগাযোগ গড়ে উঠেছে। এমনি এক পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়ে শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়।

মৃত্যুর ঝুঁকি থাকার পরও বাবার অসমাপ্ত কাজ আর এদেশের মানুষের ভাগ্য ফেরাতে ১৯৮১ সালের ১৭ মে মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে নিয়ে দেশে ফিরে আসেন শেখ হাসিনা। এদেশের আপামর জনতা তাকে অন্তর দিয়ে বরণ করে নেয়।

 

/এমএএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
গাজাবাসীর নিরাপত্তাই ট্রাম্পের প্রধান চাওয়া
গাজাবাসীর নিরাপত্তাই ট্রাম্পের প্রধান চাওয়া
পাবনায় বাস-ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৩ জন নিহত
পাবনায় বাস-ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৩ জন নিহত
পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপে কোনও অগ্রগতি হয়নি: ট্রাম্প
পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপে কোনও অগ্রগতি হয়নি: ট্রাম্প
আ.লীগ নেতার বাড়িতে চাঁদাবাজির অভিযোগে পুলিশ সদস্য আটক
আ.লীগ নেতার বাড়িতে চাঁদাবাজির অভিযোগে পুলিশ সদস্য আটক
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল