ছাত্রীদের অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়াসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও বহাল তবিয়তে চাকরি করছেন উত্তরা আধুনিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষক ডা. আহসান হাবিব। শিক্ষকদের তদন্ত কমিটি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করলেও কর্তৃপক্ষ নিশ্চুপ।
তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে মেডিক্যাল কলেজটির নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার কো-চেয়ারম্যান এবং কলেজের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমি এতো কথা বলি না, আপনি লেডি বলে কক্ষে ঢুকতে দিয়েছি।’
রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত উত্তরা আধুনিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে জানা যায়, অভিযুক্ত ফরেনসিক মেডিসিনের প্রভাষক আহসান হাবিবের বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। তারপরও তার বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না হাসপাতালটির প্রতিষ্ঠাতা ও নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাংলাদেশ মেডিক্যাল স্টাডিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউট (বিএমএসআরআই)।
জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারিতে শিক্ষক আহসান হাবিব মেডিক্যাল কলেজের ৭ম ব্যাচের এক ছাত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন। তার বক্তব্য, ছাত্রীটি তার সঙ্গে সঠিক আচরণ করছেন না, কথার জবাব দিচ্ছেন না, এতে তিনি অপমানিত বোধ করছেন। তার অভিযোগ দায়েরের পর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর কাজী শফিকুর রহমান।
আরও পড়ুন: মেয়রের নামে ফুটপাতে ডাস্টবিন
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন সম্পর্কে অধ্যক্ষ বলেন, অভিযোগের বিষয়ে আমার সন্দেহ হলে ক্যান্সার বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনারকে চেয়ারম্যান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করি। কারণ হাবিবের বিরুদ্ধে এর আগেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত কমিটি ওই শিক্ষার্থীসহ অন্যদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারে, আহসান হাবিবের অনৈতিক প্রস্তাবে সম্মত না হওয়াতেই কলেজের সপ্তম ব্যাচের ওই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন ডা. আহসান হাবিব।
তিনি বলেন, গত ২৭ মার্চ ওই প্রতিবেদন কলেজটির নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার কাছে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু প্রায় এক মাস হয়ে গেলেও কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আমাদের কিছু জানাচ্ছেও না।
শিক্ষার্থী হেনস্তার অভিযোগের তদন্ত কমিটির পাঠানো প্রতিবেদনে কী সুপারিশ করা হয়েছে, জানতে চাইলে অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সেটা আমি বলতে পারবো না। তবে যাই হোক না কেন, শিগগিরই বিষয়টির সমাধান হওয়া উচিত।
আরও পড়ুন: আ. লীগের ভাবনা: বিএনপিকে ছাড়াই আগামী নির্বাচন!
তবে বিশ্বস্ত একটি সূত্র বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছে, তদন্ত কমিটি অভিযুক্ত প্রভাষক আহসান হাবিবকে বরখাস্ত করার সুপারিশ করেছে। এদিকে কর্তৃপক্ষের নীরবতার সুযোগে আহসান হাবিব শিক্ষার্থীদের চাপ দিচ্ছেন তার পক্ষে কথা বলতে।
কলেজ সূত্র জানায়, আহসান হাবিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ এবারই প্রথম নয়। এর আগে ৫ম ব্যাচের এক শিক্ষার্থীকেও পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তিনি অনৈতিক প্রস্তাব দেন। ওই ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করে মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়েছিল।
অন্যদিকে, গত নভেম্বরের নয় তারিখ থেকে চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত অনুমতি ছাড়াই কলেজে অনুপস্থিত ছিলেন আহসান হাবিব। এ কারণে নভেম্বর থেকে তার বেতন আটকে রাখা হয়েছে। কলেজ কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানালেও কোনও উত্তর পাননি অধ্যক্ষ।
বিএমএসআরআই কেন আহসান হাবিবে বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না, জানতে চাইলে সূত্র জানায়, কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কয়েজন শিক্ষকের ভালো যোগাযোগ আছে, আহসান হাবিব তাদের একজন। অপরদিকে, তিনি সাবেক সংসদ সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের কাছের লোক বলে পরিচিত।
অভিযুক্ত শিক্ষক আহসান হাবিবকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, যখন কোনও ছাত্রী পরীক্ষার হলে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে না, তখনই তিনি হল থেকে বেরিয়ে আমার বিরুদ্ধে কথা বলে। অনেকে ফেসবুকে নক করে নানা কথা বলে, তখন তাদের প্রশ্ন করি, ডু ইউ নো মি… যাদেরকে এসব প্রশ্ন করি তারাই আমার নামে অভিযোগ করে।
আরও পড়ুন: যেভাবে সরকারের মুঠোয় যাচ্ছে ইসলামী ব্যাংক
বিএমএসআরআইয়ের কো-চেয়ারম্যান এবং কলেজের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার সিদ্দিকুল্লাহ বলেন, রুলস অ্যান্ড রেগুলেশন মেনেই সব করা হবে, আমি বিষয়টি দেখবো।
আহসান হাবিবের বিরুদ্ধে আগেও এমন অভিযোগ ছিল, আপনারা ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের তো আরও কাজ আছে। আমরা কি এটা নিয়েই বসে থাকি নাকি, ফাইল দেখে বলতে হবে।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন গত মাসের ২৭ তারিখে পাঠানো হয়েছে, আপনারা এখনও সেটা পড়ে দেখেননি- এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে তিনি ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, আপনি লেডি বলে রুমে ঢুকতে দিয়েছি, নয়তো আপনার এতো কথার জবাব আমি দিতাম না, রুমে ঢুকতে দিতাম না।
/এজে/আপ- এপিএইচ/