X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

মারিয়ার জন্য কাঁদছেন মা

জাকিয়া আহমেদ
২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ০৭:৫০আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১২:১৪

নিখোঁজ শিশু মারিয়া (ফাইল ফটো)

‘মাইয়াডা ছাড়া আমারে পানি ঢাইল্যা খাওয়ানেরও কেউ নাই। বিছানা ঠিক করার কেউ নাই। হেই মাইয়াডারে কেডায় নিয়া গেলো, আমারে অহন কে দেখবো?’ বলেই চুপ হয়ে যান মানসুরা। শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মানসুরার দেখাশোনার একমাত্র সহায় ছিল তার শিশুকন্যা মারিয়া। গত ২৪ আগস্ট সে এই হাসপাতাল থেকেই নিখোঁজ হয়।

এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, রোগীর অ্যাটেনডেন্ট কে কোথায় গেলো সেটার খোঁজ রাখা তাদের পক্ষে সব সময় সম্ভব নয়। মানসুরা তো এখন সুস্থ। তিনি হাসপাতাল থেকে চলে গেলে একটি সিট (বিছানা) বেঁচে যায়!

সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা তাৎক্ষণিক খোঁজ নিয়েছি, এখনও নিচ্ছি। তবে মানসুরা আমাকে বলেছে, সে তার মেয়েকে নিজ ইচ্ছাতেই একজনের বাসায় থাকতে দিয়েছে।’

পরিচালকের এই বক্তব্য  অস্বীকার করে মানসুরা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, তার মেয়েকে তিনি কারও কাছে দেননি।  তবে তাকে দেখতে এসেছিলেন দুই নারী, যাদের  তিনি চেনেন না। তারাই মারিয়াকে নিয়ে গেছেন। মানসুরার পাশের বেডের রোগীরাও জানিয়েছেন, ‘বোরকা পরা দুজন নারীর সঙ্গেই মারিয়া বেরিয়ে যায়। তারপর আর ফেরত আসেনি।’

হাসপাতালের বিছানায় মাকে ভাত বেড়ে দিচ্ছে শিশু মারিয়া (ফাইল ফটো)

ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া আরও বলেন, ‘মানসুরাকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পরে তাকে দেখতে এবং সাহায্য করতে অনেকেই হাসপাতালে এসেছেন। বিভিন্ন জনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়েছে।  তিনি এখন একেক সময় একেক কথা বলছেন। কখনও বলছেন মেয়ে হারিয়ে গেছে। আবার কখনও বলছেন তিনি তার মেয়েকে দিয়ে দিয়েছেন। মানসুরার বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় তার দিকে আমরা বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছিলাম। এখনও সেই অবস্থান থেকেই তার মেয়ের বিষয়ে আমরা খোঁজ নিচ্ছি।’

আমরা চাই, মানসুরাকে কোথাও পুনর্বাসন করা হোক, জানিয়ে ডা. উত্তম  বড়ুয়া আরও বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে একজন সুস্থ মানুষ হাসপাতালের বিছানায় থাকবে এটি হতে পারে না। আমাদের এই হাসপাতালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মতো কোনও ক্রাইসিস সেন্টারও নেই যে তাকে আমরা রাখতে পারি। কোনও হৃদয়বান ব্যক্তি যদি তাকে নিয়ে যেতেন, বা কোনও সংস্থা যদি তার পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করত, তাহলে আমাদের জন্য ভালো হতো।’

হাসপাতালে মানসুরার সঙ্গে তার কন্যা মারিয়া (ফাইল ফটো)

ডা. উত্তম বড়ুয়া বলেন, ‘মারিয়ার নিখোঁজের বিষয়ে আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি।  কমিটির রিপোর্ট এখনও পাইনি। তবে মানসুরা তদন্ত কমিটিকে বলেছেন, মেয়েকে তিনি স্বেচ্ছায় কোনও এক পরিচিত নারীর বাসায় থাকতে দিয়েছেন। বিষয়টি এখন আমাদের জন্য বিড়ম্বনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

প্রসঙ্গত, ‘মেয়েকে নিয়ে পাঁচ বছর ধরে হাসপাতালে আছেন মা, হচ্ছে না চিকিৎসা’ শিরোনামে গত এপ্রিলে বাংলা ট্রিবিউন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে।  মানসুরা এবং তার মেয়ের সাহায্যে এগিয়ে আসেন অসংখ্য মানুষ। বর্তমানে মানসুরা অনেকটা সুস্থ হলেও তার যাবার কোনও জায়গা না থাকায়, তিনি হাসপাতালেই থাকছেন। সেই মানসুরার মেয়ে মারিয়া গত ২৪ আগস্ট থেকে নিখোঁজ রয়েছে। এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

/এনএস/এমও/ এপিএইচ/

আরও পড়ুন:

দিল্লি থেকে আসা প্রেমিক যশোরে আটক

মায়ের বটির কোপে শিশুকন্যার হাত দ্বিখণ্ডিত

ঢামেক হাসপাতালে ‘স্পেশাল দুইশ ওয়ার্ডবয়’ যেন ডাক্তার!

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
হারিয়ে গেছে প্রাণ, নদীর বুকে বুনছে ধান
হারিয়ে গেছে প্রাণ, নদীর বুকে বুনছে ধান
টিভিতে আজকের খেলা (৬ মে, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (৬ মে, ২০২৪)
নারায়ণগঞ্জে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ, আহত ৩
নারায়ণগঞ্জে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ, আহত ৩
সুন্দরবনে আগুন ছড়ানো রুখতে দেওয়া হয়েছে বেরিকেট
সুন্দরবনে আগুন ছড়ানো রুখতে দেওয়া হয়েছে বেরিকেট
সর্বাধিক পঠিত
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?