X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা কলেজে সংঘর্ষ: অস্ত্রধারীদের খুঁজছে পুলিশ

রাফসান জানি
২২ জানুয়ারি ২০১৭, ২২:৪৮আপডেট : ২২ জানুয়ারি ২০১৭, ২২:৫৬

ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসে পুলিশের প্রহরা ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের সময় ক্যাম্পাসে হামলা করা অস্ত্রধারীদের খুঁজতে মাঠে নেমেছে পুলিশ। আক্রমণের সময় ব্যবহৃত অস্ত্রগুলো কোথা থেকে কিভাবে এসেছে, সেগুলো কাদের কাছে আছে তার উৎস খোঁজা হচ্ছে।

শনিবার (২১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ‘হিরণ গ্রুপে’র ওপর হঠাৎ হামলা করে তাদের ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয় ‘রাজু গ্রুপ’। ছাত্রাবাসের কয়েকটি কক্ষ ভাঙচুর করে হামলাকারীরা, আগুন ধরিয়ে দেয় সাতটি মোটর সাইকেলে।

এ প্রসঙ্গে নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা গোলাগুলির খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই। তবে কাউকে অস্ত্রসহ আটক করা যায়নি। আমরা অস্ত্রধারীদের খুঁজছি। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’

রমনা জোনের ডেপুটি কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার গোলাগুলির ঘটনা স্বীকার করে নিয়ে বলেন, ‘আমরা ঘটনার পরপরই হলগুলোতে রেইড চালিয়েছি। কিন্তু কোনও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা যায়নি, তদন্ত চলছে।’

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, ক্যাম্পাসের শেখ কামাল ছাত্রাবাসের সামনে থেকে ও আন্তর্জাতিক ছাত্রাবাস থেকে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী হামলা করা হয়। এসময় গুলি ছুড়তে ছুড়তে উত্তর ছাত্রাবাসে আক্রমণ করা হয়। কলেজের দুই পাশ থেকে অন্তত নয় জন অস্ত্রধারীকে গুলি ছুড়তে দেখা গেছে। তাদের বেশিরভাগই ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। তবে তাদের সঙ্গে কয়েকজন বহিরাগতও ছিল বলে জানিয়েছেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা ও সাধারণ শিক্ষার্থী।
আহত ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ রাসেল বলেন, “প্রথমে আক্রমণ করা হয় শেখ কামাল ছাত্রাবাসের সামনে থেকে। শুরুতে কয়েকটা ককটেল ফাটিয়ে ‘ধর ধর’ বলে আক্রমণ চালানো হয়। এরপর আক্রমণ আসে আন্তর্জাতিক ছাত্রাবাস থেকে। ওরা প্রথমেই আমার রুমে আক্রমণ চালায়। গুলির শব্দ শুনে বাইরে আসার পর আমার মাথায় কোপ দেওয়া হয়। তারা ভেবেছিল আমি মারা গেছি। তাই গুলি করেনি।’

ছাত্রাবাসের সামনে প্রহরারত পুলিশ একই কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক রাসেল মাহমুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা অস্ত্রধারী কয়েকজনকে চিনতে পেরেছি। তাদের সম্পর্কে পুলিশকে জানানোও হয়েছে। শেখ কামাল ছাত্রাবাসের সামনে থেকে গুলি ছুড়তে ছুড়তে আক্রমণ করে যুগ্ম আহ্বায়ক সালেহ আহমেদ হৃদয়, সদস্য শাহরিয়ার রাশেদ, সাবেক কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল আজিজ ফয়েজ, নগর উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক সহ সম্পাদক আব্দুল্লাহ হিল সোহেলসহ কয়েকজন বহিরাগত।’

তিনি আরও বলেন, ‘এদিকে আন্তর্জাতিক ছাত্রাবাস থেকে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে আক্রমণ চালায় আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক শামীম ভূঁইয়া, যুগ্ম আহ্বায়ক জুলফিকার, যুগ্ম আহ্বায়ক মুন্সি গিয়াসউদ্দিন, সদস্য বদিউজ্জামান বাদল।’

ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের আরো বেশ কয়েকজন নেতা অস্ত্রধারী হামলাকারীদের পরিচয়ের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে, অস্ত্রধারীদের মধ্যে আব্দুল আজিজ ফয়েজ ঢাকা কলেজের ছাত্র আসাদুজ্জামান ফারুক হত্যা মামলার ২ নম্বর আসামি। ২০১৪ সালে বকশিবাজারে জিয়া অরফানেজ মামলায় খালেদা জিয়া হাজিরা দেওয়ার সময় ছাত্রলীগের মিছিল থেকে একজনকে গুলি ছুড়তে দেখা যায়। তার ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিতও হয়। ছাত্রলীগের একাধিক নেতা নিশ্চিত করেছেন, ছবিটি আব্দুল আজিজের।

২০১৪ সালের এপ্রিলে বাংলামোটর এলাকায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলাকারীদের একজনের ছবি প্রকাশিত হয়, যার কোমরে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। পরবর্তীতে জানা যায়, ছবিটি সালেহ আহমেদ ওরফে হৃদয়ের। হৃদয় ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের স্থগিত ঘোষিত ফুয়াদ হাসান-সাকিব হাসান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে কমিটি স্থগিত ঘোষণার আগেই তাকে বহিষ্কার করা হয়েছিলো। সেই চিহ্নিত অস্ত্রধারী হৃদয় শনিবার ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের হয়ে হামলায় অস্ত্রসহ অংশ নেয়।

শনিবার সাতটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগকারীকেও চিহ্নিত করার দাবি জানিয়েছেন ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটির এক সদস্যের দাবি, সব মোটরসাইকেল একসঙ্গে করে জুলফিকার আগুন লাগিয়ে দেন। এসময় এটিএন বাংলার ক্যামেরাপারসন মতিউর রহমান জনির মোটরসাইকেলও পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন কমিটি না থাকার পর গত ১৭ নভেম্বর ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ শাখার একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির আহ্বায়ক রাজু ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করতেন। কমিটি গঠনের পর তিনি ক্যাম্পাসে আসেন। তবে তার সমর্থকদের ক্যাম্পাসে আসতে বাধা দেওয়া হয়। এনিয়ে রাজুর সমর্থক ও যুগ্ম আহ্বায়ক গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় গত শনিবার যুগ্ম আহ্বায়ক গ্রুপের ওপর হামলা করে আহ্বায়ক গ্রুপের সমর্থকরা। হামলায় আহত হন যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ রাসেল, গোপাল দাস, কাজল, সুলতান, সুজনসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী।

ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসে বর্তমানে শতাধিক পুলিশ নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন। প্রতিটি ছাত্রাবাসের সামনে ও মাঠে পুলিশের সতর্ক অবস্থান দেখা গেছে।

আরও পড়ুন-
ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়কসহ ১৯ নেতাকর্মী সাময়িক বহিষ্কার

ঢাকা কলেজে সংঘর্ষ: পাল্টাপাল্টি মামলা, গ্রেফতার ৩২

ঢাকা কলেজে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ

/এএআর/আপ-টিআর/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
পাহাড় ধসে বাঘাইছড়ির সঙ্গে সারা দেশের যান চলাচল বন্ধ
পাহাড় ধসে বাঘাইছড়ির সঙ্গে সারা দেশের যান চলাচল বন্ধ
যুক্তরাষ্ট্রের ‘নেসা সেন্টার’ প্রতিনিধি দলের ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস পরিদর্শন
যুক্তরাষ্ট্রের ‘নেসা সেন্টার’ প্রতিনিধি দলের ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস পরিদর্শন
জাতিসংঘে বাংলাদেশের ‘শান্তির সংস্কৃতি’ রেজুলেশন গৃহীত
জাতিসংঘে বাংলাদেশের ‘শান্তির সংস্কৃতি’ রেজুলেশন গৃহীত
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
শিগগিরই শুরু হচ্ছে উন্মুক্ত কারাগার তৈরির কাজ: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
শিগগিরই শুরু হচ্ছে উন্মুক্ত কারাগার তৈরির কাজ: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী