X
বুধবার, ০৮ মে ২০২৪
২৫ বৈশাখ ১৪৩১

হুমায়ুন আজাদ হত্যাচেষ্টার মামলা: জখম পরীক্ষাকারী চিকিৎসকদের খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ!

উদিসা ইসলাম
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৪:২০আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৪:৪৭

ড. হুমায়ুন আজাদ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আজাদকে হত্যাচেষ্টার পর তার জখম পরীক্ষাকারী দুই চিকিৎসককে গত আড়াই বছরেও আদালতে হাজির করতে পারেনি পুলিশ। আর এ কারণে দীর্ঘ ১৩ বছরেও শেষ হয়নি এ মামলার বিচারকাজ।  প্রসিকিউশন বলছে, এটা পুলিশের গাফলতি। তবে পুলিশ বলছে, তাদের গাফলতির কোনও কারণ নেই, নিয়ম মেনেই তারা যখন যে নির্দেশ পেয়েছেন, পালন করেছেন।

২০০৪ সালের এই দিনে একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়ে মারাত্মক আহত হন ভাষাবিদ অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আজাদ। তাকে উদ্ধার করে তাৎক্ষণিকভাবে প্রথমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ২০০৪ সালের ৭ আগস্ট গবেষণার জন্য জার্মানিতে গিয়ে সেখানেই ৫ দিন পর ১২ আগস্ট তার মৃত্যু হয়।

য. হুমায়ুন আজাদকে হত্যাচেষ্টার মামলায় যে দুই চিকিৎসকের সাক্ষ্য নেওয়া জরুরি হলেও হাজির করা সম্ভব হয়নি তারা হলেন ডা. শহিদুল ইসলাম ও মেজর শওকত হাসান। ঘটনার সময় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্মরত ছিলেন ডা. শহিদুল ইসলাম এবং সার্জিক্যাল বিশেষজ্ঞ হিসেবে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) কর্মরত ছিলেন ডা. শওকত হাসান। তারা দু’জনই হুমায়ুন আজাদের শরীরের জখমের পরীক্ষা করেছিলেন বলে জানিয়েছেন প্রসিকিউশন।

মামলাটি বর্তমানে ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ জাহিদুল কবিরের আদালতে বিচারাধীন। মামলাটিতে ৫৮ সাক্ষীর মধ্যে ৩৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। শহিদুল ইসলাম ও মেজর শওকত হাসানকে সমন পাঠিয়ে জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেও সাক্ষ্য দিতে হাজির করা যায়নি। আগামী ২৭ এপ্রিল ওই দুই চিকিৎসকের সাক্ষ্য দেওয়ার দিন ধার্য রয়েছে। আইনজীবীরা বলছেন, চিকিৎসক হাজির না করার বিষয়ে পুলিশের গাফলতি রয়েছে। দু’জন মানুষ কর্মক্ষেত্রে না থাকলে তাদের খুঁজে পাওয়া যাবে না এমনটা কখনই বিশ্বাসযোগ্য না। তারা যদি দেশত্যাগ করে থাকেন সেটাও পুলিশের খুঁজে বের করতে পারা উচিত।

আড়াই বছর আগে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য দুই চিকিৎসকের কাছে আদালত থেকে থেকে সমন পাঠানো হয়।পরবর্তীতে জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরও তাদের সাক্ষ্য দিতে আদালতে হাজির করতে পারেনি পুলিশ। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর এ পর্যন্ত কয়েকটি ধার্য তারিখ অতিবাহিত হলেও তারা আদালতে সাক্ষ্য দিতে হাজির হননি। গত ২ ফেব্রুয়ারি শাহবাগ থানা-পুলিশ ও ২৯ জানুয়ারি ক্যান্টনমেন্ট থানা-পুলিশ ওই দুই চিকিৎসক বর্তমানে কর্মরত নেই বলে প্রতিবেদন দিয়ে আদালতকে জানায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তদন্ত কর্মকর্তাসহ অধিকাংশ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হলেও দুই চিকিৎসকের সাক্ষ্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এ মামলায় এই দুই চিকিৎসককে সাক্ষ্য দিতেই হবে। পুলিশ কী বলছে প্রশ্নে তিনি বলেন, পুলিশের কিছু গাফলতি থেকে থাকতে পারে। তারা চিকিৎসকদের কর্মস্থলে না পাওয়ার প্রতিবেদন দিয়েছে ঠিকই কিন্তু স্থায়ী ঠিকানা বিষয়ে কিছু বলেনি। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের কোনও অবহেলা আছে কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা মামলা গুছিয়ে এনেছি। কিন্তু মামলার স্বার্থেই দুই চিকিৎসকের সাক্ষ্য জরুরি।

ক্যান্টনমেন্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ডা. শওকত সেনা চিকিৎসক। বাইরে থেকে আমাদের পক্ষে যতটুকু তথ্য পাওয়া সম্ভব ততটুকু আদালতে দেওয়া হয়েছে। এরবেশি কিছু করার নেই। তার আসল অবস্থান জানতে চাইলে প্রসিকিউশনকে সেনানিবাসে যোগাযোগ করতে হবে। এদিকে এই থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কবীর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমাদের কাছে স্থায়ী ঠিকানার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সেটি নিশ্চয় জানানো হতো। যদিও আমি এই প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করিনি, তবে কর্মস্থলের বিষয়ে জানতে চাওয়ায় কর্মস্থলে তারা নেই এধরনের প্রতিবেদন দেওয়া হয়ে থাকতে হবে। পাওয়া না গেলে অন্য কোনও প্রতিবেদন দেওয়ার কথা না।

এদিকে শাহবাগ থানা গত ২ ফেব্রুয়ারি ডা. শহিদুল ইসলাম এর অবস্থান বিষয়ে আদালতে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, এ চিকিৎসক বর্তমানে আগের জায়গায় কর্মরত নেই। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দীক মনে করেন চিকিৎসকদের হাজির না করতে পারার বিষয়ে পুলিশের কোনও গাফলতি থাকার কোনও কারণ নেই। কোনও ব্যক্তি সমন পেয়ে যদি আদালতে হাজির না হন বা গ্রেফতারি পরোয়ানা দিয়ে যদি তাকে ধরা না যায় তার মানেই পুলিশের গাফলতি এটা ভাবার কোনও সুযোগ নেই। তিনি আরও বলেন, আমি প্রতিবেদনটি স্মরণ করতে পারছি না, না দেখে বিষয়ে কিছু বলতে চাই না।

/ইউআই/টিএন/

আরও পড়ুন: যৌথ গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে অনীহা বিমানের

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
২০২৪ সালে ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণতম এপ্রিল দেখলো বিশ্ব
২০২৪ সালে ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণতম এপ্রিল দেখলো বিশ্ব
বকেয়া বিল ৫ কোটি টাকা, কেটে দেওয়া হলো পৌর ভবনের বিদ্যুৎসংযোগ
বকেয়া বিল ৫ কোটি টাকা, কেটে দেওয়া হলো পৌর ভবনের বিদ্যুৎসংযোগ
নগদ মেগা ক্যাম্পেইনের উপহার পেলেন ২১ বিজয়ী
নগদ মেগা ক্যাম্পেইনের উপহার পেলেন ২১ বিজয়ী
৬ মাস বন্ধ থাকবে কমলাপুর-টিটি পাড়া সড়ক, বিকল্প ব্যবহারের অনুরোধ
এমআরটি লাইন-৬ নির্মাণ৬ মাস বন্ধ থাকবে কমলাপুর-টিটি পাড়া সড়ক, বিকল্প ব্যবহারের অনুরোধ
সর্বাধিক পঠিত
ব্যারিস্টার সুমনকে একহাত নিলেন চুন্নু
ব্যারিস্টার সুমনকে একহাত নিলেন চুন্নু
শেখ হাসিনাই হচ্ছেন ভারতে নতুন সরকারের প্রথম বিদেশি অতিথি
শেখ হাসিনাই হচ্ছেন ভারতে নতুন সরকারের প্রথম বিদেশি অতিথি
গ্রাম আদালত বিল পাস, জরিমানা বাড়লো চার গুণ
গ্রাম আদালত বিল পাস, জরিমানা বাড়লো চার গুণ
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি, বিএনপির প্রস্তুতি কী?
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি, বিএনপির প্রস্তুতি কী?
কেমন আছেন মিল্টনের আশ্রমে আশ্রিতরা
কেমন আছেন মিল্টনের আশ্রমে আশ্রিতরা