X
মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪
৩১ বৈশাখ ১৪৩১

ছিনতাইকারীরাই এএসপি মিজানকে হত্যা করেছে!

এস এম নূরুজ্জামান
২২ জুন ২০১৭, ২২:৩০আপডেট : ২৩ জুন ২০১৭, ১৫:৪৫

এএসপি মিজানুর রহমান তালুকদার যাত্রীবেশী ছিনতাইকারীদের হাতেই পুলিশের সহকারী কমিশনার (এএসপি) মিজানুর রহমান তালুকদার (৫০) খুন হয়েছেন— এমন মোটিভ নিয়ে তদন্ত করছেন পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। একইসঙ্গে অন্য কোনও কারণ আছে কিনা সেটাও অনুসন্ধান করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মিরপুর জোনের উপ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে এটি যাত্রীবেশী অজ্ঞান ও মলম পার্টির কাজ। পরিচয় জানার কারণে নিজেরা বাঁচার জন্য এই খুনের ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে।’

তবে বৃহস্পতিবার (২২ জুন) দুপুরে রাজধানীর গুলশানের পুলিশ প্লাজা মার্কেটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শনে গিয়ে আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘কারা কেনও এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তা তদন্ত শেষে বলা যাবে।’

এএসপি মিজানুর রহমান তালুকদারের লাশ উদ্ধার করা হয় জঙ্গল থেকে বুধবার (২১ জুন) রাজধানীর রূপনগর থানার মিরপুর বেড়িবাঁধের বোটক্লাব এলাকার রাস্তার পাশে ঝোঁপঝাড় থেকে এএসপি মিজানুর রহমান তালুকদারের (৫০) লাশ উদ্ধার করা হয়। এরপর থেকে সহজ-সরল ও স্বাভাবিক জীবন-যাপন করা এই পুলিশ কর্মকর্তাকে কী কারণে কারা হত্যা করেছে,তা খুঁজছে থানা পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা।

হত্যাকাণ্ডের পর এএসপি মিজানুর রহমান তালুকদারের ভাই মাসুম তালুকদার বাদী হয়ে রাজধানীর রূপনগর থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার একদিন পরেও হত্যকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের কেউ গ্রেফতার হয়নি। তবে মামলা তদন্তের জন্য ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া। অন্যদিকে,আগামী ৩০ জুলাই এ হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক মাজহারুল হক।

এএসপি মিজানুর রহমান তালুকদারের লাশ উদ্ধারের স্থান বৃহস্পতিবার (২২ জুন)সকালে ময়নাতদন্ত শেষে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক প্রদীপ বিশ্বাস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এএসপি মিজানের শরীরের অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তার গলার চারপাশে একটা গোল কালো দাগ ছিল। মাথায়, বাম হাতে ও দুই পায়ে লাঠি বা শক্ত কিছু দিয়ে আঘাত করার চিহ্ন ছিল। দুই গাল ও বুকের ওপরের অংশে আঘাতের চিহ্ন ছিল। যেসব জায়গায় আঘাত করা হয়েছে, সেখানে রক্ত জমে গিয়েছিল।’
পুলিশের এই কর্মকর্তা হত্যাকাণ্ডের প্রাথমিক ধারণা নিয়ে মোটিভ উদ্ধার ও হত্যাকারীদের খুঁজে বের করতে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা এরই মধ্যেই মাঠে নেমেছেন। হত্যাকাণ্ডের মোটিভ ও লাশ ফেলে লাখার সূত্র ধরে পুলিশ ও গোয়েন্দারা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন, এই খুনের সঙ্গে যাত্রীবেশী ছিনতাইকারী চক্র জাড়িত। রাজধানীর উত্তরা, আবদুল্লাহপুর ও টঙ্গীসহ বিভিন্ন এলাকার এসব যাত্রীবেশী ছিনতাইচক্রের সদস্যদের ধরতে বিভিন্ন জায়গায় অভিযানও চালানো হচ্ছে।

এএসপি মিজানুর রহমান তালুকদারের লাশ উদ্ধারের স্থান এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিরপুর জোনের উপ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডে জড়িত কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তবে মামলার তদন্তের ভার গোয়েন্দা পুলিশের হাতে, তারাই এ হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত কারণ উদঘাটন করতে পারবেন।’

এএসপি হত্যাকাণ্ডের কারণ জানতে চাইলে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (এডিসি) গোলাম মোস্তফা রাসেল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিভিন্ন কারণের পাশাপাশি আমরা যাত্রীবেশী ছিনতাইচক্রের দিকে বেশি মনোযোগী দিচ্ছি। পারিপার্শিক অবস্থা ও খুনের ধরন দেখে মনে হয়েছে ভোরে ছিনতাই পার্টি এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত লেগুনা টাইপের গাড়িতে যাত্রীবেশে ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা বসে থাকে। এ ধরনের চক্রের হাতেই পড়েছিলেন এএসপি মিজানুর রহমান। পরবর্তীতে হয়তো ওই চক্রের লোকজন তার পরিচয় জানার পরপরই তাৎক্ষণিক হত্যার সিদ্ধান্ত নেয় এবং সেই মোতাবেক শ্বাসরোধ করে হত্যার পর লাশ মিরপুর বেড়িবাঁধের ঢালে ঘন জঙ্গলে ফেলে পালিয়ে যায়।’

রূপনগর থানার ওসি সৈয়দ শহীদ আলম বলেছেন, ‘লাশ বাঁধের যে পাশে ফেলে রেখে গেছে খুনিরা, তাতে মনে হয়েছে এই চক্রের লোকজন মিরপুর কিংবা বিরুলিয়া ব্রিজের ওপর দিয়ে পালিয়ে গেছে।’

ওসি সৈয়দ শহীদ আলম জানান, সিআইডি’র ক্রাইম সিন ইউনিট লাশ উদ্ধারস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করেছে। নিহতের জুতা, মোবাইল ফোন, রক্ত ও আসামিদের শনাক্তের জন্য গলায় পেঁচানো ঝুট কাপড় উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করার পর আলামত ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।

এএসপি মিজানুর রহমান তালুকদারের লাশ উদ্ধারের স্থান লাশ উদ্ধার ঘন জঙ্গল থেকে

ঢাকা সমন্বিত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। ত্রিশ কিলোমিটিার দীর্ঘ এই বাঁধ মিরপুর বেড়িবাঁধ নামেই পরিচিত। উত্তরা হাউজ বিল্ডিং থেকে শুরু করে দিয়াবাড়ি রোডের শেষ মাথা মিলেছে এই বাঁধের পঞ্চবটী নামক এলাকায়। পঞ্চবটী থেকে মিরপুরের দিকে প্রায় চারশ মিটার দূরে বেড়িবাঁধের ঢালে ঝোপ-ঝাড়ের মধ্য থেকে হাইওয়ে পুলিশের এএসপি মিজানুর রহমান তালুকদারের লাশ উদ্ধার করা হয় বুধবার (২১ জুন) বেলা সাড়ে ১১টায়।
একদিন পর বৃহস্পতিবার (২২ জুন) দুপুরে লাশ উদ্ধারস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, ক্রাইমসিন সংরক্ষণের জন্য কোনও চিহ্ন নেই সেখানে। নির্জন ওই জায়গার আশপাশে কোনও বসতিও নেই। রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহন ছাড়া ওই পথে কেউ পায়ে হেঁটে চলাচল করেন না। রাস্তার যে পাশে এএসপির লাশ ফেলে দিয়েছিল দুর্বৃত্তরা, তার বিপরীত পাশের ফুটপাথ ও সংলগ্ন ঢালু জায়গাটিও ঘন জঙ্গলে ঢাকা।

পঞ্চবটী ও বিরুলিয়া রোডের শেষ মাথার দোকানদাররা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, যে জায়গায় পুলিশ কর্মকর্তার লাশ পাওয়া গেছে, ওই জায়গাটি একেবারেই নির্জন। দিনের বেলাতেও ওইখানে কেউ যাতায়াত করেন না। বাঁধ সংলগ্ন পঞ্চবটী এলাকার একজন দোকানদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, আশুলিয়া টু মিরপুরগামী বেড়িবাঁধের বাম পাশের ঢাল থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।  গত দেড় বছর আগে একই জায়গা থেকে আরও একটি অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল। জায়গাটি ঘন জঙ্গলে পরিপূর্ণ হওয়ায় দিনের বেলাতেই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। মানুষের লাশ ছাড়াও মরা হাঁস-মুরগিও এই বাঁধের ঢালুতে ফেলে যায়  অনেকেই।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, প্রাথমিকভাবে লাশ ফেলার পয়েন্ট ধরে তাদের কাছে পরিষ্কার হয়েছে, দুর্বৃত্তরা উত্তরা থেকে মিরপুরের দিকে গেছে। যাওয়ার পথেই লাশ ফেলে গেছে।

সাভার হাইওয়ে থানার পরিদর্শক জাহিদুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নিহত হওয়ার শেষ চারদিন আগে এএসপি মিজানুর রহমান সাভার হাইওয়ে থানায় হাজির হয়ে হাইওয়ে পুলিশের অধঃস্তন কর্মকর্তাদের যানজট নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দিয়ে গেছেন। এরপর তিনি আর এখানে আসেননি। তার অফিস ছিল কালিয়াকৈরে।

আরও পড়ুন

এএসপি মিজান হত্যা মামলা ডিবিতে

এএসপি মিজান হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন ৩০ জুলাই দাখিলের নির্দেশ

স্ত্রীর দেওয়া নতুন জামা পরে বেরিয়েছিলেন এএসপি মিজান

'এএসপি মিজানুরের শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন'

মিরপুরের বেড়িবাঁধ থেকে এএসপির লাশ উদ্ধার

/জেইউ/এসএমএ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
চীনমুখী তৎপরতায় আওয়ামী লীগ ও ১৪ দল
চীনমুখী তৎপরতায় আওয়ামী লীগ ও ১৪ দল
কুলখানির দাওয়াত খাওয়া নিয়ে হামলায় নিহত ১
কুলখানির দাওয়াত খাওয়া নিয়ে হামলায় নিহত ১
রেফারির সঙ্গে কথা বলার অনুমতি পাবেন কেবল অধিনায়ক
রেফারির সঙ্গে কথা বলার অনুমতি পাবেন কেবল অধিনায়ক
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নামে ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, সতর্কতা মন্ত্রণালয়ের
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নামে ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, সতর্কতা মন্ত্রণালয়ের
সর্বাধিক পঠিত
শুক্রবারও চলবে মেট্রোরেল
শুক্রবারও চলবে মেট্রোরেল
শেখ হাসিনার তিন গুরুত্বপূর্ণ সফর: প্রস্তুতি নিচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
শেখ হাসিনার তিন গুরুত্বপূর্ণ সফর: প্রস্তুতি নিচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
সজনে পাতা খেলে মিলবে এই ১২ উপকারিতা
সজনে পাতা খেলে মিলবে এই ১২ উপকারিতা
ইয়াহিয়া সিনওয়ার: যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটিয়েছেন, শেষও কি তার হাতে?
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনইয়াহিয়া সিনওয়ার: যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটিয়েছেন, শেষও কি তার হাতে?
রংপুরের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ
রংপুরের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ