যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে এবং তার গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক টুলসি গ্যাবার্ড এই বিষয়ে ভুল বলেছেন। এ মন্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মূল্যায়ন সরাসরি প্রত্যাখ্যান করলেন প্রেসিডেন্ট। এমন প্রত্যাখ্যানের ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে সচরাচর দেখা যায় না। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
শুক্রবার হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে ট্রাম্প বলেন, তাহলে আমার গোয়েন্দা সংস্থা ভুল। কে বলেছে যে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বানাচ্ছে না?’ সাংবাদিকের তখন জবাব ছিল, ‘আপনার ডিএনআই, টুলসি গ্যাবার্ড।’ তখন ট্রাম্প বলেন, ‘তিনি (টুলসি) ভুল।’
এর আগে, ২৫ মার্চ কংগ্রেসে উপস্থাপিত প্রতিবেদনে গ্যাবার্ড জানান, ইরান পারমাণবিক কর্মসূচি পুনরায় চালু করেনি এবং কোনও অস্ত্র নির্মাণ কার্যক্রমের প্রমাণ নেই।
তবে শুক্রবার ট্রাম্পের মন্তব্যের পর গ্যাবার্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘আমেরিকার কাছে তথ্য আছে যে, ইরান চাইলে কয়েক সপ্তাহ বা মাসের মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্র প্রস্তুত করতে পারে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্পষ্টভাবে বলেছেন, এটা হতে দেওয়া যাবে না, আর আমি এতে একমত।’
বিশ্লেষকদের মতে, গ্যাবার্ডের নতুন বক্তব্য আগের মূল্যায়নের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়, কারণ তিনি এখনও দাবি করছেন না যে ইরান অস্ত্র তৈরি করছে।
আল জাজিরার জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক মারওয়ান বিশারা বলেন, ‘এটা কেবল একক কোনও কর্মকর্তা নয়, পুরো যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সম্প্রদায় একই মূল্যায়ন দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট তাদের মত উপেক্ষা করছেন, এটি নজিরবিহীন।’
একই দিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ থামাতে মধ্যস্থতার চেষ্টা করতে পারেন। তবে এখনই সেই সম্ভাবনা কম। তার কথায়, ‘ইসরায়েল যুদ্ধে ভালো করছে, আর ইরান পিছিয়ে। কারও জয় নিশ্চিত থাকলে তখন থামতে বলা কঠিন।’
ওয়াশিংটন থেকে আল জাজিরার হেইডি ঝো ক্যাস্ট্রো বলেন, ‘ট্রাম্প আসলে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিচ্ছেন, তিনি ইসরায়েলকে ইরানে বোমা হামলা কমাতে বলবেন না।’
তিনি আরও জানান, ‘ট্রাম্প এখনও কূটনৈতিক পথ বেছে নেননি। তবে নিজেই বলেছেন, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধে সরাসরি যুক্ত হবে কি না।’
যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হবে। কারণ, একদিকে যুক্তরাষ্ট্রই একমাত্র দেশ, যাদের কূটনৈতিক ও সামরিক প্রভাব ইসরায়েলের ওপর খাটানোর সামর্থ্য আছে। অন্যদিকে, ইসরায়েলের পক্ষ থেকে ইরানের ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক কেন্দ্র ফরদো ধ্বংস করতে গেলে দরকার ওয়াশিংটনের ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর বোমা এবং বি-২ বোমারু বিমানের সহায়তা।
ইউরোপীয় দেশগুলোও জেনেভায় ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচির সঙ্গে আলোচনায় বসেছে। তবে ট্রাম্প তাদের প্রচেষ্টাকে খাটো করে বলেন, ‘ইউরোপ কিছু করতে পারবে না।’