X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সাড়ে তিন লাখ টাকায় মিটমাট গৃহকর্মী হত্যার অভিযোগ!

আমানুর রহমান রনি
২৬ জুলাই ২০১৭, ০০:৩৫আপডেট : ২৬ জুলাই ২০১৭, ১৭:৫৭

আইন-আদালত

রাজধানীর মিরপুরে পুলিশ দম্পতির বাসায় গৃহকর্মী রাসেলের মৃত্যুর ঘটনা সাড়ে তিন লাখ টাকার বিনিময়ে মীমাংসা করা হয়েছে। মিরপুর মডেল থানা পুলিশের মধ্যস্থতায় মীমাংসার পর নিহতের লাশ বুঝে নিয়েছে তার স্বজনরা। তারা হত্যার অভিযোগ থেকেও সরে এসেছেন। পুলিশ দম্পতি গলায় ফাঁস দিয়ে গৃহকর্মীর আত্মহত্যার কথা বললেও সুরতহাল প্রতিবেদনে তার গলায় কোনও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। নিহতের স্বজন ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

গত রবিবার (২৩ জুলাই) দুপুরে মিরপুর মডেল থানার বড়বাগ এলাকায় পুলিশ দম্পতি সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) নজরুল ইসলাম ও উপপরিদর্শক (এসআই) হোসনে আরা বিউটির বাসায় তাদের গৃহকর্মী রাসেলের (১৭) ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার কান্তপুর গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে রাসেল এক বছর ধরে ওই দম্পতির বাসায় কাজ করতো।

মিরপুর বড়বাগ ৩/১৬ বাসার ছয় তলার একটি ফ্ল্যাটে ওই পুলিশ দম্পতির বাসায় কাজ করত রাসেল। এএসআই নজরুল ইসলাম পুলিশ অর্ডার ম্যানেজমেন্টে (পিওএম) এবং তার স্ত্রী এসআই হোসনে আরা বিউটি বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন পুলিশে কর্মরত।

রাসেলের বাবা রফিকুল ইসলাম ও চাচা শফিকুল ইসলাম সোমবার (২৪ জুলাই) বাংলা ট্রিবিউনের কাছে ওই পুলিশ দম্পতির বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ এনে মামলা করার কথা বলেছিলেন। তবে ঘটনার দু’দিন পর ডিএমপির মিরপুর বিভাগের ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা, অভিযুক্ত পুলিশ দম্পতির সঙ্গে বৈঠক করে তারা বিষয়টি মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) মীমাংসা করেছেন। এরপর রাসেলের পরিবার তাদের আগের  অভিযোগ থেকেও সরে আসে।

মীমাংসার বিষয়ে শফিকুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ছেলে মরে গেছে, এখন আর ঝামেলা করে লাভ কি? ছেলেকে তো আর ফিরে পাবো না। আমিও হজে যাবো।’ তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশ দম্পতিও আমাদের দূরসম্পর্কের আত্মীয় হয়। তাই বিষয়টি মীমাংসা করে ফেলেছি। এই তিনদিনে অনেক দৌড়াদৌড়ি করেছি। আমরা এখন লাশ বুঝে নিয়ে নাটোর যাবো। সেখানে দাফন করা হবে।’

কিভাবে মীমাংসা করা হলো? এর উত্তরে নিহতের চাচা বলেন, ‘সাড়ে তিন লাখ টাকা দিয়েছে আমাদের। এর মধ্যে দুই লাখ টাকা নগদ দিয়েছে, বাকি দেড় লাখ টাকা চেকে দিয়েছে।’ এখন আর কোনও অভিযোগ আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,‘আমাদের আত্মীয় হয় ওরা। অভিযোগ করে লাভ কি?’

ঘটনার পর এএসআই  নজরুল ইসলাম দাবি করেছিলেন, রবিবার দুপুরে তার বড়ছেলেকে নিয়ে মিরপুর ১৪ নম্বরে এক দন্ত চিকিৎসকের কাছে যান তার স্ত্রী হোসনে আরা বিউটি। তখন তাদের ছোট ছেলে ফাহিমকে নিয়ে গৃহকর্মী রাসেল বাসায় ছিল। বেলা ২টার দিকে বিউটি বাসায় ফিরে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ পান। ডাকাডাকি ও দরজা ধাক্কানোর পরও তা কেউ খুলেনি। অনেক্ষণপর ছোট ছেলে দরজা খুলে। তখন বিউটি বাসায় ঢুকে রাসেলকে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে ঝুলে থাকতে দেখেন। দ্রুত সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে গিলে  চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

রবিবার বিকাল ৫টার দিকে খবর পেয়ে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে আসেন রাসেলের চাচা শফিকুল ইসলাম। ওইদিন গভীর রাত পর্যন্ত রাসেলের লাশ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালেই ছিল। পরে মিরপুর মডেল থানা পুলিশ তার লাশ ঢামেক হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। সোমবার সকাল থেকে রাসেলে বাবা ও চাচা মিরপুর মডেল থানায় হত্যার অভিযোগ দায়েরের জন্য বসে থাকেন। তবে পুলিশ কোনও অভিযোগ নেয়নি।

শফিকুল ইসলাম সোমবার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রাসেলকে হত্যা করা হয়েছে, আমরা মামলা করবো। কিন্তু পুলিশ মামলা নিচ্ছে না।’ এ বিষয়ে মিরপুর মডেল থানার ওসি নজরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা ময়নাতদন্তের পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। ময়নাতদন্তের পরই তার মৃত্যুর রহস্য জানা যাবে।’

ওই ঘটনার একদিন পরই মঙ্গলবার নিহত রাসেলের পরিবারের সঙ্গে বিষয়টি মীমাংসা করেন পুলিশ দম্পতি। ডিএমপির মিরপুর বিভাগের একজন অতিরিক্ত কমিশনার (এডিসি) এতে মধ্যস্থতা করেন বলে জানিয়েছেন শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন,‘মিরপুর মডেল থানার পরিদর্শকের (তদন্ত) কক্ষে বসেই আমাদের টাকা দিয়েছে। আমরা এখন লাশ নিয়ে ফিরছি।’

মীমাংসার বিষয়ে এএসআই নজরুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সবকিছু মিরপুর মডেল থানায় বসে হয়েছে। আপনি সেখানে খোঁজ নিন। আমি এ বিষয়ে কোনও কথা বলব না।’ তবে পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মীমাংসার বিষয়টি আমার জানা নেই। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আমরা এখনও পাইনি। রিপোর্ট পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

নিহতের চাচা জানান, রাসেলের বাবা রফিকুল ইসলাম খেতে কাজ করার পাশাপাশি গুরুদাসপুরে ভ্যান চালান। এক মেয়ে ও ছেলের মধ্যে রাসেল ছোট। মেয়ে রাখির বিয়ে হয়েছে। সে স্বামীর বাড়িতে। রাসেলের বাবা ও মা গ্রামেই থাকেন। এক বছর আগে এএসআই নজরুল ইসলামের বোন ফাহিমার মাধ্যমে ওই পুলিশ দম্পতির বাসায় কাজে আসে রাসেল। এর মধ্যে একবার রাসেল বাড়িতে চলে গিয়েছিল। তখন তাকে আবার জোর করে ঢাকায় কাজে নিয়ে আসা হয়।

নিহত রাসেলের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেছেন মিরপুর থানার এসআই অজিত রায়। এতে বলা হয়, ‘মরদেহের থুতনির নিচে বামপাশে পাশাপাশি দুটি স্থানে ছিলা জখমের চিহ্ন আছে। গলা স্বাভাবিক। হাত, পা স্বাভাবিক। বুক, পেট ও পিঠ স্বাভাবিক। মলদ্বার দিয়ে কোনও মল বের হয়নি।’

/এআরআর/এএম/আপ-এএইচ

 

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দায়িত্ব পালনকালে কতটা সুরক্ষা পাচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা
পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা দিবস আজদায়িত্ব পালনকালে কতটা সুরক্ষা পাচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা
শাহীনের দুর্দান্ত বোলিংয়ে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে পাকিস্তানের সিরিজ ভাগাভাগি
শাহীনের দুর্দান্ত বোলিংয়ে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে পাকিস্তানের সিরিজ ভাগাভাগি
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
স্যামসন-জুরেলের ব্যাটে লখনউকে সহজে হারালো রাজস্থান
স্যামসন-জুরেলের ব্যাটে লখনউকে সহজে হারালো রাজস্থান
সর্বাধিক পঠিত
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
তাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
প্রাক-প্রাথমিক বন্ধই থাকছেতাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু