কোরবানির ঈদ এলেই কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা গরু নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা যায়। পশুর হাটে গিয়ে মোটাতাজা, নাদুস-নুদুস গরুটি পছন্দ হলেও এটিকে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ দিয়ে মোটা করা হয়েছে কিনা তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েন কোরবানিদাতারা। গত কয়েক বছর ধরে কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা গরুর মাংস খাওয়ার নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে ব্যাপক প্রচারের পর এ নিয়ে জনসচেতনতাও তৈরি হয়েছে। ফলে মানুষজন হাটে গিয়ে পছন্দের পশুটি খোঁজার পাশাপাশি এটির স্বাস্থ্যগত তথ্যও জানতে চান। পশু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আতঙ্কিত না হয়ে একটু দেখেশুনে কিনলেই বিপদের ঝুঁকি এড়ানো যাবে। কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যেগুলো দেখে সুস্থ, নীরোগ পশু চেনা যাবে সহজেই।
রাজধানীর এবারের কোরবানির পশুর হাটগুলো ঘুরে বেশ কিছু গরু অস্বাভাবিক মোটাতাজা দেখা গেছে। বেপারিরা নিজের গরুকে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ খাওয়ানোর কথা অস্বীকার করলেও বলছেন, হাটে অনেক গরু আছে, যেগুলো স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ খাইয়ে মোটাতাজা করা হয়েছে।
ব্যবসায়ী ও পশু চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোরবানির ঈদ সামনে রেখে অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা গরু মোটাতাজা করার জন্য ইনজেকশনের মাধ্যমে স্টেরয়েড, হাইড্রোকর্টিসন, ডেক্রামিথাসন, কোর্টিসল, বিটামিথাসন ও প্রেডনিসলনের মতো মারাত্মক হরমোন ব্যবহার করে থাকেন। খামারিরা দ্রুত পশুকে মোটাতাজা করতে একটি পশুকে এটির সহ্য ক্ষমতার ৫ থেকে ১০ গুণ বেশি মাত্রার ওষুধ দেন। ফলে পশুর দেহে অতিরিক্ত পানি জমে শরীর দ্রুত ফুলে ওঠে। এসব পশুর মাংস খেলে মানুষের মারাত্মক অসুখ হতে পারে। যদিও এবছর এ ধরনের পশু তেমন একটা নেই বলে জানিয়েছেন ইজারাদার ও ব্যবসায়ীরা।
জানতে চাইলে মেরাদিয়া হাটের ইজারাদার মো. শরীফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এক শ্রেণির ব্যবসায়ী আছেন, যারা বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত ওষুধ খাইয়ে পশু মোটাতাজা করে থাকেন। কিন্তু, এবছর তা দেখা যাচ্ছে না। এবছর ব্যবসায়ীরা বন্যার কারণে ৭-৮ দিন আগেই ঢাকায় গরু নিয়ে এসেছেন। এখন গরুর হাটে যদি কেউ এমন কাজ করে থাকে, তাহলে এমনিতেই তা ধরা পড়ে যাবে। কয়েক বছর আগে এধরনের পশু দেখা গেলেও এখন সবাই সচেতন। ক্রেতারাও এধরনের পশু চিনে ফেলেন। এর পরেও দু’একটা তো থাকতেই পারে।’
পশু চিকিৎসকরা বলছেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ প্রয়োগ করা পশু জবাই না হলে এটি মারা যাবে। কারণ এর শরীরের প্রতিটি পরতে পরতে ভয়ঙ্কর রাসায়নিক হরমোন ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এসব রাসায়নিক আগুনেও নষ্ট হয় না। এ জাতীয় পশুর মাংস রান্না করা হলেও এর ক্ষতিকর প্রভাব নষ্ট হয় না। স্টেরয়েড ব্যবহৃত মাংস খেলে মানুষের কিডনি, লিভার, অন্ধত্ব, পুরুষত্বহীনতা ও ক্যান্সারসহ বিভিন্ন স্পর্শকাতর অঙ্গে রোগ সৃষ্টি করে। একই সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়।’
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পশু চিকিৎসক ডা. আজমত আলী বলেন, ‘অতিমাত্রায় হরমোন ব্যবহার করলে পশুর শরীরে ব্যাপক পানি জমে। এতে গরুকে মোটাতাজা দেখায়। কিন্তু ওষুধের প্রভাবে এটির কিডনি, লিভার ও পাকস্থলী নষ্ট হয়ে যায়। একইভাবে এসব গরুর মাংস খেলে মানুষেরও ক্ষতি হবে।’
যেভাবে চিনবেন স্টেরয়েড খাওয়ানো পশু:
এ ধরনের পশু খুব চুপচাপ থাকবে। ঠিকমতো চলাফেরাও করতে পারবে না। পশুর ঊরুতে অনেক মাংস দেখা যাবে। কিন্তু আসলে তা পানি। আঙুল দিয়ে চাপ দিলে ওই স্থানটি দেবে যাবে। এ ধরনের পশুকে সব সময় বাতাসে রাখতে হয়। এরা রোদ সহ্য করতে পারবে না। শ্বাস-প্রশ্বাস হবে অস্বাভাবিক। স্টেরয়েড প্রয়োগ করা গরুর পাঁজরের হাড়ও দেখা যায় না।
অন্যদিকে, প্রাকৃতিক উপায়ে পালিত গরু চঞ্চল হবে। এর গায়ের রঙ উজ্জ্বল দেখা যাবে, তবে চকচকে হবে না। গায়ে হাত দিলে এটি নড়াচড়া করবে, এমনকি তেড়েও আসতে পারে।এগুলো কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা গরুর বেলায় দেখা যাবে না।
/এএম/