রাজধানীর কড়াইল বস্তিবাসীকে আগুন নেভানোর প্রশিক্ষণ দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। বস্তিবাসীর আগুন বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে ও নিরাপদ থাকার কৌশল শেখাতে সম্প্রতি এ কর্মশালা ও আগুন নেভানোর প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। ক্যাপস্টোন প্রজেক্টের আওতায় এ প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন করে জাগো ফাউন্ডেশন এবং টিচ ফর বাংলাদেশ।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, রাজধানীর কড়াইল বস্তি হচ্ছে ঢাকা শহরের ঘনবসতিপূর্ণ বস্তিগুলোর মধ্যে অন্যতম। এখানে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার প্রচুর নিম্নবিত্তের মানুষ সপরিবারে বাস করে থাকেন। এসব পরিবারের শিশুদের পড়াশোনা শেখাতে এখানে বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা পরিচালিত ১৪২টি স্কুলও রয়েছে। কিন্তু, এখানে বসবাসকারীদের সামান্য অসতর্কতায় এখানে মাঝেমধ্যেই আগুন লাগার মতো মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটছে। এসব কারণে পরিবারগুলো যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তেমনই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে অসংখ্য শিশুর লেখাপড়া শেখার সুযোগও। এ কারণে ক্যাপস্টোন প্রজেক্টের আওতায় জাগো ফাউন্ডেশন এবং টিচ ফর বাংলাদেশ এর আয়োজনে শিশুদের নেতৃত্বের গুণাবলী শেখানোর পাশাপাশি এ ধরনের প্রশিক্ষণের আয়োজন করে আগুন নেভানোর বিষয়ে হাতে কলমে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।
টিচ ফর বাংলাদেশ ফেলো ও জাগো ফাউন্ডেশন স্কুলের শিক্ষক শাহীনুর সেলিম সুজন এবং ফয়সাল মাহমুদ জানান, তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের পড়াশুনার পাশাপাশি সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ, নেতৃত্বগুণের সুযোগ তৈরি এবং বাস্তবিক সমস্যা সমাধানের দক্ষতা অর্জনের লক্ষ্যে ক্যাপস্টোন প্রজেক্টের আওতায় এ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।
ক্যাপস্টোন প্রজেক্ট নিয়ে টিচ ফর বাংলাদেশের সিইও মেইমুনা আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাঠদানের সুযোগ সৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে তাদের এই বয়স থেকেই নেতৃত্বগুণ অর্জন ও সামাজিক কার্যক্রমে শিশুদের অংশগ্রহণ বাড়াতে আমাদের ফেলোরা সব স্কুলে তাদের প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে।’
এ প্রশিক্ষণ কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ঢাকা জোনের সহকারী পরিচালক মামুন মাহমুদ। তিনি বলেন, “ঘনবসতিপূর্ণ কড়াইল বস্তির বেশিরভাগ বাসা টিন আর কাঠের তৈরি। অসাবধানতার কারণে এখানে প্রতিবছরই আগুন লাগে, আগুন লাগলে তা বিস্তৃত জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে এবং প্রতিবারই জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। কড়াইলে এর আগে এ ধরনের কর্মশালা বা ফায়ারড্রিল (আগুন নেভানোর কর্মশালা) অনুষ্ঠিত হয়নি”।
কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন আমিনা বেগম নামের এক অভিভাবক। তিনি বলেন, “গতবারের আগুনের সময় রাতে ঘুমায়ে ছিলাম। আগুন লাগলি মানুষের চিৎকারে সতবিত পাই। দেখি আগুন এক্কেরে ঘরের কাছে। চক্ষের সামনে সব পুড়ে ছাই হয়া গেল। কিছুই করবার পারলাম না”।
অতিথিরা আগুন থেকে নিরাপদ থাকতে ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের নানা পরামর্শ ও সচেতনতামূলক বক্তব্য রাখেন এবং ভিডিও প্রদর্শন করেন। ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকরাও আগুন থেকে নিরাপদ থাকতে এসব পরামর্শ মেনে চলার অঙ্গীকার করেন।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ফায়ার সার্ভিস ঢাকা জোন-২ এর উপসহকারী পরিচালক ছালেহউদ্দিন আহমেদ, বারিধারা ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আবুল কালাম আজাদ, তেজগাঁও ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার ফয়সালুর রহমান, অ্যাকশনএইড থেকে মোস্তাহেদ জামি, জাগো ফাউন্ডেশন থেকে এডুকেশন কো-অর্ডিনেটর আয়েশা রাহমান এবং টিচ ফর বাংলাদেশের সিনিয়র কর্মকর্তারা। এছাড়াও অগ্নি নির্বাপক মহড়ায় সহায়তা করে বিজয় বাংলা ফাউন্ডেশন ও কমিউনিটি ভলান্টিয়ারস।
পরে কড়াইল বস্তিসহ আপামর জনসাধারণের সচেতনা বাড়াতে অগ্নি নির্বাপক মহড়া দেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। এতে বারিধারা ও তেজগাঁও ফায়ার স্টেশনের ৪০ জন ফায়ারকর্মী, কর্মকর্তা ও স্বেচ্ছাসেবকরা অংশ নেন।