X
বুধবার, ০৮ মে ২০২৪
২৪ বৈশাখ ১৪৩১

গৃহকর না বাড়াতে মন্ত্রণালয়ের চিঠি, আইনি মতামতের অপেক্ষায় ডিসিসি

শাহেদ শফিক
২৫ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৪:৩৪আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৩:০৭

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে গৃহকর বৃদ্ধির কার্যক্রম স্থগিত রাখতে চিঠি দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। আইনি মতামত এসে গেলে তা বাস্তবায়ন করা হবে। ডিসিসি কর্মকর্তারা এসব তথ্য জানিয়েছেন।  

সরকারের অনুমোদন নিয়ে রাজধানীর গৃহকর সমতায়ন করতে চেয়েছিল ডিএসসিসি ও ডিএনসিসি। এজন্য কয়েকটি অঞ্চলে বাড়ানো হয় গৃহকর। কিন্তু শুরু থেকেই এ বিষয়ে অভিযোগ জানিয়ে আসছিলেন বাড়িওয়ালারা। আন্দোলনও করেছেন তাদের অনেকেই।

এ অবস্থায় কার্যক্রমটি স্থগিত করতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে চিঠির মাধ্যমে ডিসিসি’সহ দেশের সব সিটি করপোরেশনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আইনি মতামত জানানোর জন্য ফাইল পাঠানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট দফতরে। কোনও জটিলতা না থাকলে স্থগিত করা হবে দুই সিটির গৃহকর বাড়ানোর কার্যক্রম।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে ওই চিঠি পাঠানো হয়। এতে বলা হয়েছে— ‘সরকারের অনুমতি ছাড়া কেউ এই কার্যক্রম চালু করতে পারবে না। ভবিষ্যতে অনলাইনভিত্তিক অটোমেশন পদ্ধতিতে কর আদায় করা হবে। পুরো প্রক্রিয়া অটোমেশন পদ্ধতিতে না আসা পর্যন্ত গৃহকর বৃদ্ধি কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হবে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সব সিটি করপোরেশনের মেয়রকে নির্দেশ দেওয়া হয়।’

দক্ষিণ সিটির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইউসূফ আলী সরদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত ১২ নভেম্বর আমাদের কাছে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি আসে। এরপর বিষয়টি নিয়ে আইনি মতামত জানার জন্য একটি ফাইল পাঠানো হয়। ফাইলটি ফিরে এলে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে।’

এ প্রসঙ্গে ডিএসসিসি’র প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা খান মোহাম্মাদ বিলাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কর বৃদ্ধির কার্যক্রম স্থগিত রাখতে মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের কাছে একটি চিঠি আসে। আমরা এই নির্দেশ কার্যকর করতে পদক্ষেপ নিচ্ছি। কার্যক্রম স্থগিত হয়ে গেলে নগরবাসী আগের মতোই কর দিতে পারবেন।’

ডিএনসিসি’র প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা রবীন্দ্র শ্রী বলেছেন, ‘মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি আসার পর আমরা এ সংক্রান্ত সব কার্যক্রম স্থগিত রেখেছি।’

জানা গেছে, দীর্ঘ ২৭ বছর পর গৃহকর পুনর্মূল্যায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে ডিসিসি’র চারটি অঞ্চলে বাড়ানো হয় গৃহকর। এ কারণে তা বেড়ে গেছে কয়েকগুণ।

সিটি করপোরেশন বলছে, পাঁচ বছর পরপর কর পুনর্মূল্যায়নের বিধান থাকলেও বিভিন্ন কারণে তা হয়নি। সেজন্য ১৯৯০ সালের পর থেকে বৃদ্ধি হয়নি গৃহকর। তাই তারা আইনের মধ্যে থেকে কর সমতায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল বলে সংশ্লিষ্টদের দাবি।

কিন্তু কর বাড়ানোর এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে ইতোমধ্যে এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন সংগঠন প্রতিবাদ করছে। নগরবাসীর অভিযোগ, কর বৃদ্ধির হার অস্বাভাবিক। এতে বিপাকে পড়েছেন অনেকেই। ঘরভাড়াসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর বৃদ্ধির প্রভাব পড়ছে।

সূত্র জানায়, ১৯৮৮-৮৯ অর্থবছরে কর সমতায়নের জন্য পঞ্চবার্ষিকী সাধারণ মূল্যায়ন কার্যক্রম গৃহীত হয়। কিন্তু এরপর বিভিন্ন কারণে ওই উদ্যোগ আর বাস্তবায়ন হয়নি। গত ২৯ বছর ধরে নিয়মটি বন্ধ ছিল। এ সময়ের মধ্যে পাঁচতলা ভবন হয়েছে ১০ থেকে ১২ তলা। একতলা ভবন বহুতল হয়েছে। ভাড়া বেড়েছে কয়েক গুণ। কিন্তু কারও গৃহকর বাড়েনি।

সবশেষ ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্দেশে ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে গৃহকর সমতায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরপর দক্ষিণ সিটি করপোরেশন অঞ্চল-২ ও অঞ্চল-৪ আর উত্তর সিটি করপোরেশন তার অঞ্চল-১ ও অঞ্চল-৩ এলাকায় গৃহকর সমতায়নের কাজ শুরু করে। এর মধ্যে উত্তর সিটি করপোরেশন তাদের দুটি অঞ্চলের কাজ সম্পন্ন করলেও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন তখন তা শেষ করতে পারেনি। এ দুটি অঞ্চলে কর নির্ধারণের পর বাকি ছিল শুধু চিঠি পাঠানো।

সেই সময় দুই সিটি করপোরেশনের কর সুপারভাইজারদের বিরুদ্ধে অনিয়মসহ ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠে। গত ২ ফেব্রুয়ারি ডিএসসিসির উপ-কর কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন জমাদ্দারকে সার্কুলার রোডের (ভূতের গলি) নিজ বাসা থেকে ঘুষের টাকাসহ হাতেনাতে আটক করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুই সিটি করপোরেশনের কর পুনর্মূল্যায়নে সংক্ষুব্ধ হয়ে এ বছরের ২২ জানুয়ারি উচ্চ আদালতে একটি রিট দায়ের করেন ঢাকার বাসিন্দা সাইফ আলম। এতে কর পুনর্মূল্যায়নের ওপর স্থগিতাদেশ দেন আদালত। এরপর গত ৭ আগস্ট আদালতের এক আদেশে এটি উঠে যায়। ফলে আবারও শুরু হয় দুই সিটি করপোরেশনের কর সমতায়নের কাজ।

এক্ষেত্রে ডিএনসিসি তাদের দুটি অঞ্চলের কাজ আগেই শেষ করেছে। এখন তারা নতুনভাবে বাকি তিন অঞ্চলে কর নির্ধারণে হাত দিয়েছে। একইভাবে ডিএসসিসি তাদের দুটি অঞ্চলের কর নির্ধারণের কার্যক্রম শেষ করলেও নাগরিকদের কাছে চিঠি পাঠানো বন্ধ ছিল। স্থগিতাদেশ উঠে যাওয়ার পর এখন তারা বাসিন্দাদের কাছে তা পাঠাচ্ছে। এটি পেয়েই মাথায় হাত নাগরিকদের।

সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে গৃহকর থেকে ডিএসসিসি ৫০০ কোটি টাকা ও ডিএনসিসি ৪৮০ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। এক্ষেত্রে বিবেচনায় ছিল বর্তমান বাসা ভাড়া। কিন্তু সেই লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানো সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।

 

/জেএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পিএসজিকে হারিয়ে ফাইনালে ডর্টমুন্ড
চ্যাম্পিয়নস লিগপিএসজিকে হারিয়ে ফাইনালে ডর্টমুন্ড
রাজস্থানকে হারিয়ে প্লে অফের আশা বাঁচিয়ে রাখলো দিল্লি
রাজস্থানকে হারিয়ে প্লে অফের আশা বাঁচিয়ে রাখলো দিল্লি
ঢাকা আসছেন মার্কিন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু
ঢাকা আসছেন মার্কিন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু
প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন আজ
প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন আজ
সর্বাধিক পঠিত
ব্যারিস্টার সুমনকে একহাত নিলেন চুন্নু
ব্যারিস্টার সুমনকে একহাত নিলেন চুন্নু
ছুড়ে দেওয়া সব তীর সাদরে গ্রহণ করলাম: ভাবনা
ছুড়ে দেওয়া সব তীর সাদরে গ্রহণ করলাম: ভাবনা
শনিবার স্কুল খোলা রাখার প্রতিবাদে শিক্ষকদের কর্মবিরতি ঘোষণা
শনিবার স্কুল খোলা রাখার প্রতিবাদে শিক্ষকদের কর্মবিরতি ঘোষণা
আসছে ব্যয় কমানোর বাজেট
আসছে ব্যয় কমানোর বাজেট
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি, বিএনপির প্রস্তুতি কী?
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি, বিএনপির প্রস্তুতি কী?