X
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪
২১ বৈশাখ ১৪৩১

যেভাবে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ে সোমা ও সুমনা

নুরুজ্জামান লাবু
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ২৩:২২আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ০৯:১০

 

সোমা ও সুমনা

দুই বোনই জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েছে। প্রথমে বড় বোন মোমেনা সোমা।  সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ায় এক ব্যক্তিকে হামলার অভিযোগে সেখানে গ্রেফতার হয়েছে সে। বড় বোনের হাত ধরেই জঙ্গিবাদে যুক্ত হয় ছোট বোন আসমাউল হুসনা
ওরফে সুমনা। ঢাকার বাসায় সোমার খোঁজ নিতে গিয়ে সুমনার হামলার শিকার হয়েছেন কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা।

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১৪ সালে মোমেনা সোমা প্রথম জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ে। বছর দুই আগে থেকে ছোট বোনকেও মোটিভেটেড করে সে। তাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটে যোগ দেওয়া বাংলাদেশি ক্লাস্টারের কারও কারও সঙ্গে যোগাযোগের তথ্যও পেয়েছেন গোয়েন্দারা। এসব তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘জঙ্গিবাদে দুই বোনের জড়িত হওয়ার বিষয়ে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। এসব তথ্য আমরা যাচাই-বাছাই করছি। তারা নব্য জেএমবির সঙ্গে যুক্ত ছিল। তাদের সঙ্গে আরও যাদের যোগাযোগ আছে, তাদেরও শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে।’

সিটিটিসি সূত্র জানায়, মোমেনা সোমা ২০০৯ সালে ঢাকার লরেটো স্কুল থেকে ‘ও’ লেভেল, ২০১১ সালে মাস্টারমাইন্ড স্কুল থেকে  ‘এ’ লেভেল সম্পন্ন করে। এরপর নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে গ্র্যাজুয়েশন করে। সেখানে পড়ার সময়ই তার মধ্যে পরিবর্তন দেখা যায়। প্রথম দিকে হিজাব না পড়লেও ২০১৩ এবং ২০১৪ সালে কট্টরভাবে ইসলামিক নিয়ম মেনে চলতে দেখা যায় তাকে। এমনকি বাসাতে টিভি চালানোও বন্ধ করে দেয় সে।

সিটিটিসি’র কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১৪ সালে মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষ করে ইরাক-সিরিয়াতে ইসলামিক স্টেটের কর্মকাণ্ডে অনুপ্রাণিত হয়ে বাংলাদেশি অনেক তরুণ জঙ্গিবাদে ঝুঁকে পড়ে। সেসময় ঢাকার একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির অনেক শিক্ষার্থীও জঙ্গিবাদে জড়িয়েছে। সেখানকার নারী জঙ্গিদের একটি দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ে মোমেনা সোমা। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদে নারীদের নিয়ে ‘হালাকা’য় মিলিত হতো। হালাকা অর্থ কয়েকজন মিলে আলোচনা করা। এমনকী গত ১ ফেব্রুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার আগে রাজধানীর একটি এলাকার মসজিদে গিয়ে সোমার হালাকা করার কিছু তথ্য পেয়েছেন তারা।

সিটিটিসি’র একজন কর্মকর্তা জানান, ২০১৬ সালে সম্মান শ্রেণি সম্পন্ন করার আগে মোমেনা সোমার সঙ্গে অনেকের যোগাযোগ ছিল। এদের মধ্যে গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলায় অংশ নিয়ে নিহত নিবরাস ইসলাম ও রোহান ইমতিয়াজ অন্যতম। সিটিটিসির কাছে পাঁচ দিনের রিমান্ডে থাকা ছোট বোন সুমনা বলেছে, সে তার বড় বোনের (সোমা) কাছে নিবরাস ও রোহানের নাম শুনেছে। তবে তার সঙ্গে নিবরাস ও রোহানের সরাসরি কোনও যোগাযোগ ছিল না।

সিটিটিসি সূত্র জানায়, মোমেনা সোমার ছোট বোন সুমনা জঙ্গিবাদে জড়িত হয় বছর দুই আগে। ২০১৪ সালে সুমনা মিরপুরের গার্লস আইডিয়াল স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে। এরপর ভর্তি হয় গ্রিনফিল্ড স্কুলে এইচএসসিতে। কিন্তু ২০১৬ সালে সে পরীক্ষায় ফেল করার পর মেন্টর’স থেকে জিইডি সম্পন্ন করে। স্কলারশিপ নিয়ে মালয়েশিয়ার একটি ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির সুযোগ পেলেও হেপাটাইটিস-বি রোগ থাকার কারণে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় বাদ পড়ে যায় সে। পরবর্তীতে গত বছরের অক্টোবরে ধানমন্ডিতে একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হয় সুমনা।

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে সুমনা জানিয়েছে, দুই বোন মিলে তারা জঙ্গিবাদ নিয়ে কথা বলতো। অনলাইনে জিহাদি বিভিন্ন ভিডিও দেখতো। বড় বোন মোমেনা সোমা তাকে ছুার চালানোর প্রাথমিক প্রশিক্ষণও দিয়েছিল। এমনকী সোমা অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার আগে বলেছে, সে ওখানে কোনও একটি হামলা চালাবে। এরপর ঢাকার বাসায় পুলিশ তার খোঁজ করতে আসলে তাদের ওপরে হামলা করার জন্য সুমনাকে বলে গিয়েছিল সে। সিটিটিসির কর্মকর্তারা বলছেন, অস্ট্রেলিয়া এবং ঢাকাতে দুই হামলার চেষ্টা পূর্ব পরিকল্পিত কিনা, তা তারা নিশ্চিত নয়। বিষয়গুলো তারা খতিয়ে দেখছেন।

সিরিয়ায় আইএসে যোগ দিতে চেয়েছিল মোমেনা সোমা

২০১৪ সালে সিরিয়ায় গিয়ে আইএসে যোগ দিতে চেয়েছিল বড় বোন মোমেনা সোমা। এজন্য তুরস্কের একটি ইউনিভার্সিটি থেকে স্কলারশিপ যোগারও করেছিল। কিন্তু ঢাকায় তুরস্কের দূতাবাস তার ভিসা রিফিউজ করে। সিরিয়ার সঙ্গে তুরস্কের সীমান্ত থাকায় বিভিন্ন দেশ থেকে আইএসের যোদ্ধারা প্রথমে তুরস্ক যেত। তারপর তারা পাড়ি জমাতো সিরিয়ায়। বাংলাদেশ থেকে সিরিয়ায় যাওয়া অন্তত দুই তরুণের সঙ্গে মোমেনা সোমার যোগাযোগ ছিল। এরা দুজনই ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে সিরিয়ায় চলে যায়। একজন পরবর্তীতে ফিরে আসলেও অন্যজনের এখনও কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি।

সিটিটিসির একটি সূত্র বলছে, সিরিয়ায় চলে যাওয়া ওই তরুণের সঙ্গে মোমেনা সোমার বিয়েও ঠিক হয়েছিল। জিহাদি আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা বিয়ে করতে চেয়েছিল। কিন্তু পরিবার মেনে না নেওয়ায় শেষ পর্যন্ত বিয়ে হয়নি।

সোমা-সুমনার পরিবার আহলে হাদিসের অনুসারী

অস্ট্রেলিয়া ও ঢাকায় গ্রেফতার হওয়া দুই বোন এবং তাদের পরিবার আহলে হাদিসের অনুসারী। বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা জঙ্গি গোষ্ঠীর বেশিরভাগ সদস্যই আহলে হাদিস থেকে আসা। ছোট বেলা থেকেই পরিবারের ধর্মীয় পরিবেশে বেড়ে ওঠে দুই বোন। তাদের বাবা মনিরুজ্জামান জনতা লাইফ ইন্সুরেন্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কর্মরত। চাচা অধ্যাপক ড. আব্দুল আজিজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন হিসেবে কর্মরত। তাদের গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে। ঢাকার পূর্ব কাজিপাড়ার ৩৫৫/১ নম্বর রয়েল অ্যারোমা গার্ডেনে নিজেদের ফ্ল্যাটে থাকতো তারা।

পরিবারের সদস্যদের বরাত দিয়ে সিটিটিসির কর্মকর্তারা জানান, ছোট বেলা থেকেই পরিবারের সবাই ধর্মীয় অনুশাসন মেনে আসছে। ২০১২ সালে দুই বোনের দাদি মারা যান। এরপর থেকে আরও বেশি ধর্মকর্ম পালন করতে থাকে তারা। ২০১৫ সালের ১৭ জুন মা শাহনাজ পারভীনও মারা যান ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগে। এরপর থেকে হিজাব পড়তে শুরু করে দুই বোন সোমা ও সুমনা।

 

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে আজ নির্বাচন
বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতিআদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে আজ নির্বাচন
আলোচিত কিশোরী ইয়াসমিনের মায়ের অস্বাভাবিক মৃত্যু
আলোচিত কিশোরী ইয়াসমিনের মায়ের অস্বাভাবিক মৃত্যু
বদির বিরুদ্ধে চেয়ারম্যানের জিডি
বদির বিরুদ্ধে চেয়ারম্যানের জিডি
ছেলের মৃত্যুর ৪ দিনের মাথায় চলে গেলেন বাবা, গ্রামজুড়ে শোকের ছায়া
ছেলের মৃত্যুর ৪ দিনের মাথায় চলে গেলেন বাবা, গ্রামজুড়ে শোকের ছায়া
সর্বাধিক পঠিত
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
নদীতে ধরা পড়ছে না ইলিশ, কারণ জানালেন মৎস্য কর্মকর্তা
নদীতে ধরা পড়ছে না ইলিশ, কারণ জানালেন মৎস্য কর্মকর্তা