X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

কোলন ক্যান্সার দ্রুত নির্ণয়ের অভাবেই বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা

তাসকিনা ইয়াসমিন
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ০৭:৫০আপডেট : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১০:২৩

ছবি : ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

দেশে মোট জনসংখ্যার তিন দশমিক পাঁচ ভাগ কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার (আইএআরসি)। সংস্থাটির তথ্যমতে, দেশে এই রোগে মৃত্যুর হার তিন দশমিক পাঁচ ভাগ। আগামী পাঁচ বছরে দেশে এই রোগে আক্রান্তের হার চার শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে কোলন ক্যান্সার দ্রুত নির্ণয় করতে না পারার কারণে মৃত্যুহার বেশি। তারা এও বলছেন, নির্দিষ্ট বয়সের পরেই নিয়মিত স্ক্রিনিং করে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাই দেশে কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে স্ক্রিনিং সেন্টার চালুর বিষয়েও গুরুত্বারোপ করেছেন চিকিৎসকরা।

দেশের জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ কোলন ক্যান্সারে দীর্ঘদিন ভোগার পর মৃত্যুবরণ করেন। এই রোগে সম্প্রতি মারা গেছেন সাংবাদিক জুটন চৌধুরী। দেশের মানুষের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন, ধূমপান, অ্যালকোহল গ্রহণ, অতিমাত্রায় ফাস্টফুড খাওয়ার কারণে এই রোগ দিন দিন বাড়ছে বলেও জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

বিশ্বে কোলন ক্যান্সারে আক্রান্তদের মধ্যে নারীরা দ্বিতীয় ও পুরুষরা তৃতীয় স্থানে রয়েছেন। 

২০১২ সালে বিশ্বব্যাপী পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী, ৭ লাখ ৪৬ হাজার পুরুষ নতুন করে এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে, যা মোট ক্যান্সার রোগীর ১০ ভাগ। নারীদের মধ্যে ছয় লাখ ১৪ হাজার নতুন রোগী পাওয়া গেছে, যা ক্যান্সার আক্রান্ত নারীর মধ্যে ৯ দশমিক দুই ভাগ। এর মধ্যে উন্নত দেশের  ৫৫ ভাগ নাগরিক এই রোগে আক্রান্ত হয়। এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে ভৌগোলিক অবস্থান ও ধরন নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে প্রায় একই।

প্রতি এক লাখ নাগরিকের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে ৪৪ দশমিক ৮ ভাগ পুরুষ এবং ৩২ দশমিক দুই ভাগ নারী এই রোগে আক্রান্ত। পশ্চিম আফ্রিকায় চার দশমিক পাঁচ ভাগ পুরুষ এবং তিন দশমিক আট  ভাগ নারী কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত।

২০১২ সালের তথ্য অনুযায়ী, ওই বছর সারাবিশ্বে কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ৬ লাখ ৯৪ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় অনুন্নত দেশগুলোতে এই রোগে আক্রান্তদের মধ্যে ৫২ ভাগ রোগী মৃত্যুবরণ করে। উন্নত দেশে কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যুহার তুলনামূলক কম। ইউরোপে এই রোগে প্রতি এক লাখে ২০ দশমিক তিনজন পুরুষ এবং ১১ দশমিক সাতজন নারী মৃত্যুবরণ করছে। আফ্রিকায় তিন দশমিক পাঁচজন পুরুষ এবং তিন জন নারী মৃত্যুবরণ করছেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)-এর ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘ডায়াগনোসিসটা দ্রুত হয় না। মানুষও সময়মতো চিকিৎসকের কাছে আসে না। সাধারণত এই ধরনের রোগীর তেমন কোনও লক্ষণ থাকে না। হয়তো পাতলা পায়খানা হয়, তলপেটে ব্যথা হয়, পায়খানা কষা থাকে। অনেক সময় রক্ত যেতে পারে। প্রথমদিকে ডায়রিয়া, বদহজম হয়। রুচি থাকে না। অনেক সময় রোগী নিজেও গুরুত্ব দেয় না। কারণ, পেটের পীড়া তো আমাদের দেশে অনেক লোকেরই থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোনও লক্ষণই দেখা যায় না।’ 

তিনি বলেন, ‘রোগী যদি শুরুতেই চিকিৎসকের কাছে আসতো, তাহলে মৃত্যুর হার কমানো যেতো। দেখা যায়, রোগী যখন আসে, তখন কোলন থেকে ক্যান্সারটা লিভারে ছড়িয়ে যায়। তখনই মৃত্যুর হারটা বেশি হয়। লেখক হুমায়ূন আহমেদ যে মারা গেলেন, শুরুতে তিনি পাত্তা দেননি। কিন্তু পরে যখন গুরুত্ব দিলেন ততদিনে এ ক্যান্সার লিভারে ছড়িয়ে যায়।’

এই চিকিৎসক আরও বলেন, ‘এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি মধ্যবয়সে। ৪০-৫০ বছর বয়স হলে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি তৈরি হয়। এই রোগ নির্ণয়ের জন্য কোলনোস্কপি করা যায়। এটা করলে দ্রুত ধরা পড়ে। কোনও ব্যক্তি যদি বোঝে যে তার পেটে সমস্যা আছে, তাহলে সে গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট চিকিৎসককে দেখাতে পারে। বাংলাদেশে কোলন ক্যান্সারের চিকিৎসা আছে। যদি শুরুর দিকে ধরা পড়ে, তাহলে কোলনের নির্দিষ্ট অংশ অপারেশন করে ফেলে দিলে রোগী সুস্থ হতে পারে। কিন্তু যদি লিভারে ছড়িয়ে যায়, তখন অনেকে অপারেশন করে। আবার কেমোথেরাপিও দিতে হয়। তখন রোগীকে ট্রিটমেন্ট দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়।’

জানতে চাইলে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন বলেন, ‘আমাদের এখানে সপ্তাহে একদিন ক্যান্সার বিষয়ে পরীক্ষা করা হয়। রোগীরা এখানে এসেও কোলন ক্যান্সারের বিষয়ে পরীক্ষা করতে পারে।’

হেলথ রাইটস মুভমেন্ট ন্যাশনাল কমিটির  প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. রশীদ-ই-মাহবুব বলেন, ‘ইউরোপে যে কয় ধরনের ক্যান্সার আছে, তার মধ্যে কোলন অন্যতম। এর মধ্যে রয়েছে ব্রেস্ট, লাংস, প্রোস্টেট, কোলন ক্যান্সার। ইউরোপে কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য স্ক্রিনিংয়ের একটা প্রোগ্রাম আছে। একটা নির্দিষ্ট বয়সের পরে কোলন ক্যান্সার হয়েছে কিনা, প্রতিবছর দেখাতে হয়। আমাদের দেশে কোলন ক্যান্সারের ব্যাপারে এত উদ্যোগ নেই। তবে, সৌভাগ্যবশত আমাদের দেশে কোলন ক্যান্সারের মাত্রাটা তুলনামূলক কম। এখন যে মাত্রাই বলি না কেন, তারাও ঠিক সময়মতো চিকিৎসকের কাছে আসে না। সুতরাং স্ক্রিনিংয়ের ব্যাপার আছে। আফটার ৫০ বা ৬০-এর পর প্রতিবছর স্ক্রিনিংয়ের আওতায় যুক্ত হলে ডায়াগনোসিসটা হবে। এখন কেউ আগে চিকিৎসকের কাছে আসে না। যখন আসে, তখন কিছু করার থাকে না। তবে, আমাদের দেশে এখনও কোলনের জন্য স্ক্রিনিংয়ের বন্দোবস্ত সেভাবে চালু হয়নি। চিকিৎসকরা রোগীকে পাঠালে পরীক্ষা করা হয়।

ডা. রশিদ-ই-মাহবুব ও ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ উভয়ে নির্দিষ্ট বয়সের পর চেকআপ করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। তারা বলেন, বিদেশে যেটা দেখা যায়, ৫০ বছর পার হয়ে গেলে অন্তত বছরে একবার তারা কোলনের টেস্ট করায়। আমাদের দেশে এটা হয় না। যে কারণে আমাদের দেশে রোগীর মৃত্যুহার বেশি।

দেশে বয়স্ক লোকদের কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য একটি স্ক্রিনিং সেন্টার থাকা উচিত বলে মনে করেন ডা. রশিদ-ই-মাহবুব।

 

/এমএ/এপিএইচ/এমএনএইচ/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ব্রাজিলে বৃষ্টিপাতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৭৮, এখনও নিখোঁজ অনেকে
ব্রাজিলে বৃষ্টিপাতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৭৮, এখনও নিখোঁজ অনেকে
হারিয়ে গেছে প্রাণ, নদীর বুকে বুনছে ধান
হারিয়ে গেছে প্রাণ, নদীর বুকে বুনছে ধান
টিভিতে আজকের খেলা (৬ মে, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (৬ মে, ২০২৪)
নারায়ণগঞ্জে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ, আহত ৩
নারায়ণগঞ্জে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ, আহত ৩
সর্বাধিক পঠিত
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?