X
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪
২৪ বৈশাখ ১৪৩১

ইয়াবার নেশায় বুঁদ হয়ে টাকার জন্য বন্ধুকে গলা টিপে হত্যা

নুরুজ্জামান লাবু
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ২২:৩৫আপডেট : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৩:২৯

নিহত সুজা তিন বন্ধু মুন, মামুন ও জিদান। তিনজনের বয়সই ১৮ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। মুন পড়তো সরকারি বাঙলা কলেজে, উচ্চ মাধ্যমিকে। মামুন ঢাকা কমার্স কলেজে আর জিদান গ্রিন ইউনিভার্সিটিতে অনার্সে। তিনজনের ওঠাবসা একসঙ্গে। একসঙ্গে ইয়াবা সেবনও করতো তারা। ইয়াবার নেশায় বুঁদ হয়ে টাকার লোভে এই তিনজন মিলে হত্যা করেছে তাদেরই আরেক সিনিয়র বন্ধুকে। তার নাম সরদার সুজা আহমেদ (৩২)। সুজার বাসায় একসঙ্গে ইয়াবা সেবন করতে গিয়েই তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে মুন, মামুন ও জিদান।

গত ২ ডিসেম্বর মিরপুরের সেনপাড়া পর্বতার ৩২৪ নম্বর এ-৮ ফ্ল্যাটে সুজাকে হত্যার দুই মাস ১০ দিন পর আদালতে দেওয়া এক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব তথ্য জানিয়েছে মুন। এর আগে রাজশাহীতে এক ফুফাতো বোনের বাসায় আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় তাকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল।

মুন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার শাহাদাত হোসেন সুমা বলেন, ‘ইয়াবায় আসক্ত হওয়ার কারণে তিন বন্ধু মিলে সুজাকে হত্যা করে। তাদের ধারণা ছিল সুজার কাছ থেকে অনেক টাকা পাওয়া যাবে। এছাড়া, তার ক্রেডিট কার্ড দিয়েও টাকা তুলতে পারবে। কিন্তু সঙ্গে বেশি টাকা না থাকায় হত্যার পর সুজার আইফোন ও মোটরসাইকেল নিয়ে তারা চলে যায়।’

গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রথমে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তিন খুনিকে শনাক্ত করা হয়। পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর মুনকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদ ও আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে মুন পুরো হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়েছে। জিদান ও মামুন নামের বাকি দুই খুনি পলাতক। তাদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে।’

মামুন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, আব্দুলাহ আজাদ মুন, আব্দুল্লাহ আল মামুন ও রাশেদুল ইসলাম জিদানের সঙ্গে মাস ছয়েক আগে সংসদ ভবন এলাকায় পরিচয় হয় সুজার। তিনি বনানীতে আমব্রেলা নামে একটি বায়িং হাউসের সাপ্লাই এক্সিকিউটিভ হিসেবে চাকরি করতেন। থাকতেন সেনপাড়ার ওই বাসায়। মুন, মামুন ও জিদানের সঙ্গে ইয়াবা সেবন করতেন সুজাও। গত বছরের ২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় সুজার বাসা ফাঁকা থাকায় সেখানে ইয়াবা সেবনের আসর বসায় চারজন মিলে। সেখানে ইয়াবা সেবনের এক ফাঁকে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তিন বন্ধু মিলে সুজাকে হাত-পা বেঁধে গলা টিপে হত্যা করে তারা।

জিদান সূত্রমতে, আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আব্দুল্লাহ আজাদ মুন জানায়, ২ ডিসেম্বর জিদান, মামুন ও সে সুজাকে মেরে তার টাকা-পয়সা, মোটরসাইকেল, মোবাইল ফোন চুরি করার পরিকল্পনা করে। ঘটনার দিন মাগরিবের কিছু পর তারা সবাই মিলে ইয়াবা সেবন করে। পরে পরিকল্পনা অনুযায়ী মুন কোমরের বেল্ট দিয়ে সুজার পা বাঁধে। জিদান গামছা দিয়ে হাত বাঁধে। মামুন গলা টিপে ধরে। সুজার মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর তার মোবাইল ফোন, মোটরসাইকেল নিয়ে তারা পালিয়ে যায়।

হত্যার পর যেভাবে পালিয়ে যায় তিন খুনি

ঘটনার দিন বিকাল ৪টার দিকে বাসায় ফেরেন সুজা। এর কিছুক্ষণ পর মুন, জিদান ও মামুন ওই বাসায় ঢোকে। তারা একসঙ্গে বসে ইয়াবা সেবনের পর সুজাকে হত্যা করে। এরপর রাত সোয়া ৮টার দিকে জিদান ও মামুন সিঁড়ি দিয়ে এবং মুন লিফটে নিচে নেমে সুজার মোটরসাইকেল নিয়ে যেতে চায়। তখন দারোয়ান আবু তাহের তাকে সুজার মোটরসাইকেল নিয়ে যেতে বাধা দেয়। এ সময় মাইনউদ্দিন নামে সুজার এক রুমমেট বাসার সামনে গেলে সেও মুনকে মোটরসাইকেল নিয়ে যেতে নিষেধ করে। এ সময় মুন বলে সুজা তাকে মোটরসাইকেল নিয়ে যেতে বলেছে। তারা সুজাকে ফোনে বিষয়টি জিজ্ঞাসা করবে–এমন সময় একটি গাড়ি এলে দারোয়ান গেট খুলে দেয়। এই ফাঁকে দ্রুত পালিয়ে যায় মুন।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, তিন বন্ধু পরদিন মোটরসাইকেল নিয়ে চলে যায় জিদান ও মামুনের গ্রামের বাড়ি পাবনায়। সেখানে জিদানের বাসায় মোটরসাইকেল রেখে তারা তিনজন চলে যায় কক্সবাজার। সেখানে কয়েকদিন থাকার মুন ও মামুন আবার ফিরে আসে পাবনায়। জিদান কক্সবাজার থেকে বান্দরবান গিয়ে একটি কাঠের কারখানায় চাকরি নেয়। পাবনায় মামুনকে রেখে মুন চলে যায় রাজশাহীতে। গ্রেফতার হওয়ার আগ পর্যন্ত মুন রাজশাহীতেই আত্মগোপন করে ছিল।

যেভাবে ধরা পড়লো মুন

সংশ্লিষ্টরা জানান, সুজা হত্যার দুদিন পর তার বড় ভাই জাকির আহমেদ বাদী হয়ে কাফরুল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলাটির থানা পুলিশের কাছ থেকে তদন্তভার হস্তান্তর করা হয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পশ্চিম বিভাগের পল্লবী জোনাল টিমের কাছে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা সুজার ওই বাসা থেকে সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ, দারোয়ান আবু তাহের এবং নিহত সুজার বন্ধু মাইনুদ্দিনের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তিন খুনিকে শনাক্ত করা হয়। পরে প্রযুক্তির সহায়তায় মুনের পরিবারের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সেই তথ্য অনুযায়ী গোয়েন্দা অনুসন্ধানের মাধ্যমে রাজশাহীতে গিয়ে গ্রেফতার করে আনা হয় মুনকে।

বাকি দুজন এখনও পলাতক

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া বাকি দুজনের অবস্থান জানার চেষ্টা চলছে। গোয়েন্দা কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন সুমা বলেন, ‘জিদান ও মামুনের অবস্থান জানার চেষ্টা চলছে। কিন্তু তারা ঘন ঘন জায়গা বদল করছে। তাদের খুব শিগগিরই গ্রেফতার করা হবে। এই দুজনকে গ্রেফতার করা গেলে দ্রুত সময়ে আদালতে মামলাটির চার্জশিটও দেওয়া হবে।’

 

 

/এএম/ চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সাকিব আল হাসানকে দেখতে ছাদে উঠে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে শিক্ষার্থী আহত
সাকিব আল হাসানকে দেখতে ছাদে উঠে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে শিক্ষার্থী আহত
কাঁটাতার পেরিয়ে ভোট দিলেন তারা
কাঁটাতার পেরিয়ে ভোট দিলেন তারা
ঢাবির ২ শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে
ঢাবির ২ শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে
হৃদয়ের বিশ্বাস, এক ইনিংস ভালো করলেই ফর্মে ফিরবেন লিটন
হৃদয়ের বিশ্বাস, এক ইনিংস ভালো করলেই ফর্মে ফিরবেন লিটন
সর্বাধিক পঠিত
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
ব্যারিস্টার সুমনকে একহাত নিলেন চুন্নু
ব্যারিস্টার সুমনকে একহাত নিলেন চুন্নু
ছুড়ে দেওয়া সব তীর সাদরে গ্রহণ করলাম: ভাবনা
ছুড়ে দেওয়া সব তীর সাদরে গ্রহণ করলাম: ভাবনা
শনিবার স্কুল খোলা রাখার প্রতিবাদে শিক্ষকদের কর্মবিরতি ঘোষণা
শনিবার স্কুল খোলা রাখার প্রতিবাদে শিক্ষকদের কর্মবিরতি ঘোষণা
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হামাস, অগ্রহণযোগ্য বলছে ইসরায়েল
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হামাস, অগ্রহণযোগ্য বলছে ইসরায়েল