X
রবিবার, ২৬ মে ২০২৪
১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

মায়ের শেষ যাত্রায় মেয়ের আদর

আমানুর রহমান রনি
২০ মার্চ ২০১৮, ০০:২১আপডেট : ২০ মার্চ ২০১৮, ০০:২৪

মায়ের শেষ যাত্রায় মেয়ের আদর কথা ছিল মা রাতে বাসায় ফিরে দুই বছর চার মাস বয়সী ইনায়া ইমাম হিয়ারকে পরম আদরে বুকে নিয়ে ঘুমাবেন। কিন্তু মা সেদিন রাতে আর ফেরেনি। মায়ের ফেরার জন্য ছোট্ট হিয়ার অপেক্ষা করতে হয়েছে সাতদিন। মায়ের এই ফিরে আসা কেমন হয়েছে তা সবার মত বুঝতে পারছে না হিয়া। চিরনিন্দ্রায় থাকা মায়ের কফিনে হাত রেখে তাই হিয়ার প্রশ্ন, মা ব্যথা পেয়েছো? তার আদুরে কণ্ঠে এমন অনেক প্রশ্ন। কিন্তু মা শারমিন আক্তার (নাবিলা ফারহিন)-এর কাছে কোনও প্রশ্নের উত্তর পায়নি হিয়া।

ইউএস-বাংলার বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের নিহত কেবিন ক্রু শারমিন আক্তার (নাবিলা ফারহিন)। শিশু বয়স থেকেই লড়াই করে বড় হওয়া নাবিলার আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন পূরণ হলেও অনেক স্বপ্ন বাকি রেখে অসময় চলে যেতে হয়েছে ওপারে।

নাবিলার শিশু বয়সেই তার বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ। এরপর বাবা মায়ের ভিন্ন ভিন্ন সংসারে তাকে বড় হতে হয়েছে। এ পর্যন্ত আসতে তাকে অনেক ঝড় ঝাপটার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। লেখাপড়া শিখে যখন একটু ঘুরে দাঁড়িয়েছেন, ঠিক সেই সময় পৃথিবী থেকে চলে যেতে হলো।

নাবিলার শৈশবের মতোই তার মেয়ে হিয়ারও ঘটনাপ্রবাহ প্রায় একই রকম। হিয়াকেও মা ছাড়া এই পৃথিবীতে বেড়ে উঠতে হবে।

মায়ের শেষ যাত্রায় মেয়ের আদর

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চার নম্বর অ্যাম্বুলেন্সে করে নাবিলার লাশ সোমবার বিকাল সোয়া ৫টায় আর্মি স্টেডিয়ামে নিয়ে আসা হয়। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে পুলিশ তার স্বামী আনান আহমেদের কাছে মরদেহ বুঝিয়ে দেয়। এরপর আর্মি স্টেডিয়াম থেকে ফের লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সে নাবিলার মরদেহ তোলা হয়। অ্যাম্বুলেন্সের চালকের পাশের আসনে বাবার কোলে বসে ছোট্ট হিয়া। এ সময় নাবিলার বাবার পক্ষের স্বজনরা তার মরদেহ নিতে চান। তবে তার স্বামী মরদেহ তার তেজগাঁওয়ে বাসায় নিয়ে যান। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকার পূর্ব নাখালপাড়ার বাসায় আনার পর স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।

কফিনবন্দি মায়ের কাছে বাবার কোলে বসে থাকা হিয়া মা মা করে ডাকছিল। বলছিল, মা তুমি ব্যথা পেয়েছো? মা তুমি কোথায় ব্যথা পেয়েছো? এমন অনেক প্রশ্ন, যার আর উত্তর মেলেনি। এরপর দাদির কোলে চড়ে হিয়াকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। রাতেই নাবিলার মরাদেহের তৃতীয় জানাজা হয়। পরে তেজগাঁওয়ের একটি কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

উত্তরার ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ছাত্রী নাবিলা ফারহিন ২০১৬ সালে যোগ দেন ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সে। ২০০৯ সালে বাবার মৃত্যুর পর থেকে দাদির কাছেই ছিলেন নাবিলা। ২০১৪ সালে বিয়ে করেন তিনি। তখন থেকে নিজ পরিবার বিচ্ছিন্ন ছিলেন নাবিলা। বিয়ের বিষয়টি তার পরিবার মেনে নেয়নি। হিয়ার জন্মের পর মায়ের সঙ্গে তার সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়। গত দুইমাস ধরে থাকতেন উত্তরার একটি ভাড়া বাড়িতে। এর আগে পূর্ব নাখালপাড়ার শ্বশুর বাড়িতেই ছিলেন তিনি। ছোট্ট হিয়াকে গৃহপরিচারিকার কাছে রেখে ফ্লাই করতেন।

দুর্ঘটনার সময় স্বামী আনান আহমদ হাসান একটি মামলায় কারাগারে ছিলেন। এরপর তিনি জামিন পেয়ে নেপাল যান। স্ত্রীর লাশ শনাক্ত করেন।

উল্লেখ্য, গত ১২ মার্চ নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরে অবতরণ করতে গিয়ে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়। এতে থাকা ৭১ আরোহীর মধ্যে ৫১ জন নিহত হয়েছেন। ৩৬ বাংলাদেশির মধ্যে বিমানের পাইলট, কো পাইলট ও কেবিন ক্রুসহ নিহত হয়েছেন ২৬ জন।

/এআরআর/এমপি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
তরুণদের বন্যপ্রাণীর ক্ষতি না করার শপথ করালেন প্রধান বন সংরক্ষক
তরুণদের বন্যপ্রাণীর ক্ষতি না করার শপথ করালেন প্রধান বন সংরক্ষক
অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে মোংলায় ট্রলারডুবি
অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে মোংলায় ট্রলারডুবি
প্রতীক জটিলতায় স্থগিত হওয়া সেই ইউপিতে চলছে ভোটগ্রহণ
প্রতীক জটিলতায় স্থগিত হওয়া সেই ইউপিতে চলছে ভোটগ্রহণ
রাশিয়া ও ইউক্রেনে পাল্টাপাল্টি হামলায় নিহত ১০
রাশিয়া ও ইউক্রেনে পাল্টাপাল্টি হামলায় নিহত ১০
সর্বাধিক পঠিত
ব্যক্তি পর্যায়ের কর হার বাড়বে
ব্যক্তি পর্যায়ের কর হার বাড়বে
‘তুফান’র গানে প্রীতম, আছেন পর্দায়ও!
‘তুফান’র গানে প্রীতম, আছেন পর্দায়ও!
এমপি আনার হত্যা: কে এই সিলিস্তা রহমান?
এমপি আনার হত্যা: কে এই সিলিস্তা রহমান?
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে যুক্ত হলেন কেএসআরএমের ১ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে যুক্ত হলেন কেএসআরএমের ১ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী
রঙমিস্ত্রি থেকে যেভাবে এমপি আনার হত্যায় জড়ায় জিহাদ
রঙমিস্ত্রি থেকে যেভাবে এমপি আনার হত্যায় জড়ায় জিহাদ