প্রায় দুই বছর আগে রাজধানীর কল্যাণপুরে পাঁচ নম্বর সড়কের ৫৩ নম্বর বাড়ির জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়েছিল পুলিশ।ওই অভিযানে নিহত হয় ৯ জঙ্গি। ২০১৬ সালের ২৬ জুলাই ‘অপারেশন স্টর্ম-২৬’ নামে চালানো এ অভিযানের পর দীর্ঘদিন ভাড়াটিয়াশূন্য ছিল বাড়িটি। ১৮টি ফ্ল্যাটের মধ্যে এর মধ্যে অবশ্য ভাড়া হয়েছে ১২টি। ছয়টি ফ্ল্যাট এখনও ফাঁকা। প্রধান ফটকের বাইরে দুই জায়গায় ঝুলছে ‘টু-লেট’।
জঙ্গি আস্তানা থাকা ও ঘিঞ্জি পরিবেশের কারণে বাড়িটি ভাড়া নেওয়ার ক্ষেত্রে ভাড়াটিয়াদের আগ্রহ কম বলে জানিয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। তাদের দাবি, ৯ জন জঙ্গি মারা যাওয়ায় অনেকের মধ্যে একটা ভয় কাজ করে। এছাড়া বাড়ির পরিবেশও ভালো নয়।
পঞ্চম তলার যে ফ্ল্যাটটিতে জঙ্গিরা অবস্থান করেছিল, সেখানে অভিযানের পর অনেকটা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। তবে বর্তমানে ফ্ল্যাটটিতে অভিযানের বড় কোনও চিহ্ন নেই। পুলিশ বাড়িটি মালিকের কাছে হস্তান্তরের পর ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামত করা হয়েছে। এরপরও ভবনের বাইরের দেয়ালে, কক্ষের ভেতর স্টিলের দরজা ও কাচের জানালাগুলোতে গুলির চিহ্ন রয়েছে।
২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে একটি পরিবার ফ্ল্যাটটিতে বসবাস শুরু করেছে। জঙ্গি আস্তানা, পুলিশের অভিযান ও ৯ জঙ্গি নিহতের বিষয়টা জেনেই তারা ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়েছে।
সম্প্রতি বাড়িটিতে গিয়ে তার মালিককে পাওয়া যায়নি। পুরো বাড়িটি দেখাশুনা করছেন কেয়ারটেকার জুয়েল হাওলাদার ও তার স্ত্রী সাবরিনা। বাড়ির মালিক হাজী মো. আতাহার উদ্দিন খুব একটা আসেন না। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে থাকেন রাজধানীর জুরাইনে। তবে প্রতিমাসে আতাহার উদ্দিনের মেয়ে জলি কল্যাণপুর এসে বাড়ি ভাড়ার টাকা নিয়ে যান।
কেয়ারটেকার জুয়েলের স্ত্রী সাবরিনা জানান, ২০১৭ সালের জুলাই মাস থেকে বাড়িটিতে ভাড়াটিয়া ওঠা শুরু করেছে। নিচতলা থেকে ক্রমানুসারে ভাড়া দেওয়া শুরু হয়। নিচতলা পূরণ হওয়ার পর দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলায় ভাড়া দেওয়া হয়েছে। ছয়তলা বাড়িটিতে ফ্ল্যাট রয়েছে ১৮টি।
সিঁড়ি বেয়ে পঞ্চম তলায় ওঠার পর হাতের বাম পাশে দুটি ফ্ল্যাট। প্রথমটি পেরিয়ে দ্বিতীয়টিতেই পুলিশের অভিযানে নিহত হয়েছিল ৯ জঙ্গি। সেখানে এ বছরের জানুয়ারি থেকে বসবার শুরু করা কুলসুম বেগম কোথায় কোথায় গুলির চিহ্ন রয়েছে, সে স্থানগুলো ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে এই প্রতিবেদককে দেখান।
দেখা গেছে, ফ্ল্যাটটির স্টিলের দরজাগুলোয় অসংখ্য গুলির চিহ্ন রয়েছে। জানালার কাচেও গুলির ফলে সৃষ্ট ছিদ্র রয়ে গেছে। তবে কক্ষের ভেতরের দেয়ালে কোনও গুলি বা বিষ্ফোরণের তেমন কোনও চিহ্ন নেই। ভাড়াটিয়া ওঠার আগে নতুন করে প্লাস্টার করা হয়েছে।
বর্তমান ভাড়াটিয়া কুলসুম বেগম বলেন, ‘আমরা জেনেশুনেই উঠেছি। তাই বলে ভাড়া কম নয়। আগের মতোই ভাড়া আছে।’
বাড়িটিতে পুরনো কোনও ভাড়াটিয়া নেই বলে জানিয়েছেন কেয়ার টেকার জুয়েল হাওলাদার। তিনি বলেন, ‘আমিসহ বাড়িতে এখন যেসব ভাড়াটিয়া এখন আছেন, সবাই নতুন। অভিযানের পর পুরনো ভাড়াটিয়ারা সবাই চলে গেছেন। নতুনরা জঙ্গি আস্তানা থাকার বিষয়টা জেনেই ভাড়া নিয়েছেন। তবে সবগুলো ফ্ল্যাট এখনও ভাড়া হয়নি।’
ভাড়াটিয়া তোলার ক্ষেত্রে তারা খুব সতর্ক আছেন বলে দাবি কেয়ারটেকার জুয়েলের। তার ভাষ্য, এখন কোনও ব্যাচেলর ভাড়া দেওয়া হয় না। নতুন ভাড়াটিয়া আসার পর সবার ভোটার আইডিকার্ডসহ সব কাগজ থানায় জমা দিয়ে আসা হয়। যাতে সন্ত্রাসীরা কেউ জায়গা নিতে না পারে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কল্যাণপুর পাঁচ নম্বর সড়কের একটি বাড়ির মালিক বলেন, ‘এই বাড়িটা নিয়ে অভিযানের আগে থেকেই এলাকাবাসীর অভিযোগ ছিল। মিরপুর থানা পুলিশ দুই বার বাড়িটিতে রেইড দিয়ে মাদক ব্যবসায়ীসহ কয়েকজনকে আটক করেছিল। কিন্তু মালিকের হুঁশ হয়নি। এখন অবশ্য ঠিক আছে। ব্যাচেলর সম্ভবত নেই। পরিবার ছাড়া কাউকে ভাড়া দিচ্ছেন না।’