X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

খাদ্য চেইনে প্লাস্টিক: হুমকিতে জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২১ এপ্রিল ২০১৮, ১৭:৫১আপডেট : ২১ এপ্রিল ২০১৮, ১৮:০১

 

সেমিনারে বক্তারা প্লাস্টিক পদার্থের নিয়মিত ব্যবহার প্লাস্টিক দূষণের মাত্রাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। অপাচ্য এ পদার্থ পরিবেশে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করছে। খাল-বিল, নদী-নালা থেকে শুরু করে মহাসমুদ্র পর্যন্ত প্লাস্টিক পদার্থ ও প্লাস্টিক কণা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। এই পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্যের কারণে বিশ্বের সব স্তরের জীববৈচিত্র্য মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। একইসঙ্গে খাদ্য চেইনের মাধ্যমে অন্যান্য প্রাণীসহ জনস্বাস্থ্যও এখন মারাত্মক হুমকিতে রয়েছে। 

শনিবার পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) কার্যালয়ে ‘পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্যের ব্যাপকতা ও ভয়াবহতা’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এ কথা বলেন। ধরিত্রী দিবস উপলক্ষে পবার উদ্যোগে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়।

এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার। তিনি বলেন, ‘প্লাস্টিক শুধু আসবাবপত্র বা পলিথিনের ভেতরে সীমাবদ্ধ নেই। সাবান, ফেসওয়াশ, টুথপেস্ট, বডিওয়াশ, ডিটারজেন্ট ইত্যাদিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদিতে মাইক্রোবিড নামক ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণার উপস্থিতি দেখা যায়। যা ব্যবহারের পর নদী-নালা, খাল-বিল ও অন্যান্য জলাশয়ে পতিত হচ্ছে এবং মাছের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করছে।’ 

পলিথিন ও টিস্যু ব্যাগের বিকল্প হিসেবে পাট, কাপড়, কাগজের ব্যাগ ও ঠোঙ্গা ব্যবহার করা, এগুলো সহজলভ্য করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

সভায় অন্য বক্তারা বলেন, প্লাস্টিক দূষণ দেশের নদী, সাগর, মহাসাগর ও ভূমিকে বিষাক্ত করছে, সামুদ্রিক জীবন ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং জনস্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। বাংলাদেশে সরকার ২০০২ সালে আইন করে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। কিন্তু এই আইনের কোনও বাস্তবায়ন নেই। ফলে রাজধানীসহ সারাদেশে প্রায় এক হাজার ২০০ কারখানা নিষিদ্ধ পলিথিন তৈরি হচ্ছে। এগুলোর বেশিরভাগই পুরান ঢাকাকেন্দ্রিক। 

বক্তারা আরও বলেন, ঢাকা শহরে একটি পরিবার প্রতিদিন গড়ে চারটি পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করে। সে হিসেবে শুধুমাত্র ঢাকা শহরে প্রতিদিন দুই কোটির বেশি পলিথিন ব্যাগ একবার ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া হয়। এগুলো দিয়ে ড্রেন, নালা-নর্দমা, খাল, ডোবা ইত্যাদি ভরাট হয়ে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। বর্তমানে দেশে প্রতিদিন ৩৫ লাখের বেশি টিস্যু ব্যাগ উৎপাদন ও বাজারজাত হচ্ছে। এসব ব্যাগ পলিথিনের হলেও কাপড়ের ব্যাগ হিসেবে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

বক্তারা বলেন, এ বছর বিশ্বে ৫ ট্রিলিয়ন প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার হবে। যা প্রতি সেকেন্ডে এক লাখ ৬০ হাজার। এগুলো একটির পর আরেকটি রাখা হলে তা প্রতি ঘণ্টায় পৃথিবী সাত বার ঘুরবে এবং ফ্রান্সের দ্বিগুণ এলাকা আচ্ছাদন করবে। এর দশ শতাংশেরও কম পুনর্ব্যবহারযোগ্য। এগুলোর বেশিরভাগই পলিথিন, যা ক্ষয় হতে কয়েক শত বছর লাগে। প্রতি টন প্লাস্টিক ব্যাগ ফের ব্যবহারযোগ্য করা হলে তা ১১ ব্যারেল তেল সমতুল্য শক্তি সংরক্ষণ করে। 

সেমিনারে বলা হয়, প্রতি বছর ৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন প্লাস্টিক সমুদ্রে জমা হয়। সমুদ্রে প্লাস্টিক অতি ক্ষুদ্র টুকরোয় ভেঙে যায়। এসব টুকরো মাছে খায় কিন্তু হজম হয় না। মাছের পেটে জমা হতে থাকে এবং খাদ্য শৃঙ্খলে প্রবেশ করে। 

এক সমীক্ষা তুলে ধরে বলা হয়, বাংলাদেশে ১৯৯০ সালে ১৫ হাজার মেট্রিক টন প্লাস্টিক ব্যবহৃত হয়, যা ২০১০ সালে ৭ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টনে দাঁড়ায়। ২০ বছরে ব্যবহার ৫০ গুণ বেড়েছে। বর্তমানে ছোট, মাঝারি, বড় পাঁচ হাজার শিল্পকারখানায় ১২ লাখ মেট্রিক টনের বেশি প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে। সে হিসেবে প্লাস্টিক পণ্যের জনপ্রতি ব্যবহার বছরে সাড়ে ৭ কেজি।

পরিবেশ রক্ষায় পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে বক্তারা বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরেন। এগুলো হলো–

পলিথিন নিষিদ্ধের আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পরিবেশ অধিদফতরের সক্রিয় ভূমিকা পালন; পলিথিন শপিং ব্যাগ ও টিস্যু ব্যাগের উৎপাদন এবং ব্যবহার বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ; পলিথিন নিষিদ্ধকরণ আইন (২০০২) অমান্যকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন (২০১০) প্রচলন; পলিথিন ও টিস্যু ব্যাগের বিকল্প হিসেবে পাট, কাপড়, কাগজের ব্যাগ ও ঠোঙ্গা ব্যবহার করা, এগুলো সহজলভ্য করে ব্যবহারে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা; প্লাস্টিক প্রত্যাখ্যান, হ্রাস, পুনর্ব্যবহার এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য করার লক্ষ্যে ব্যক্তিগত দায়িত্ব পালনে সবাইকে সচেষ্ট হওয়া; পরিবেশ অধিদফতর, পাট অধিদফতর, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, এফবিসিসিআই, ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের মধ্যে সমন্বয় সাধন; প্লাস্টিক প্রত্যাখ্যান, হ্রাস, পুনর্ব্যবহারের ক্ষেত্রে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা ইত্যাদি।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন পবার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. লেলিন চৌধুরী, সম্পাদক এম এ ওয়াহেদ, নাসফ’র সাধারণ সম্পাদক মো. তৈয়ব আলী, সাউথ-ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক জুবাইদা গুলশান আরা, নাসফ’র আইনবিষয়ক সহ-সম্পাদক মো. ওমর ফারুক, বিসিএইচআরডির পরিচালক মো. মোনতাজুর রহমান মোহন, হীল’র পরিচালক জেবুন নেসা, সবুজ ছাতা হেলথ কেয়ারের এমডি মো. শরিফুজ্জামান খান সাঈদ, পবার সদস্য মোসতারি বেগম প্রমুখ। 

বিআই/এএম/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সিটি ক্লাবের সঙ্গে অবনমন হলো গাজী টায়ার্সের
সিটি ক্লাবের সঙ্গে অবনমন হলো গাজী টায়ার্সের
দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার নতুন রেকর্ড
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার নতুন রেকর্ড
মানবাধিকার রেকর্ড নিয়ে জাতিসংঘে সমালোচনার মুখে তালেবান
মানবাধিকার রেকর্ড নিয়ে জাতিসংঘে সমালোচনার মুখে তালেবান
সর্বাধিক পঠিত
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ