X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১

‘নির্বাচিত ডাকসু’র অনুপস্থিতিতে গঠনতন্ত্র সংশোধনের সিদ্ধান্ত অগণতান্ত্রিক’

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৩:৫৭আপডেট : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৪:০০

প্রগতিশীল ছাত্র জোটের সংবাদ সম্মেলন নির্বাচিত ডাকসু’র অনুপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের নিজস্ব ক্ষমতাবলে ডাকসু’র গঠনতন্ত্রের এমন মৌলিক কাঠামো সংশোধনের সিদ্ধান্ত অগণতান্ত্রিক বলে মনে করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল ছাত্র জোট ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের অন্তর্ভুক্ত বাম ছাত্র সংগঠনগুলো।

বুধবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান ছাত্র নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি এম এম পারভেজ লেলিন বলেন, ‘নানাবিধ শর্ত আরোপ করে ডাকসু নির্বাচনকে বানচাল করার চেষ্টা করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরিবেশ পরিষদের বৈঠক এবং গঠনতন্ত্র সংশোধন ও আচরণবিধির ওপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্র সংগঠনগুলোর মতামত চেয়েছিল। প্রগতিশীল ছাত্র জোট ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলো তাদের সুপারিশ ও মতামত রেখেছিল। গত ২৯ জানুয়ারি সিন্ডিকেটের বৈঠকে গঠনতন্ত্র আচরণবিধির যে রূপরেখা হাজির করা হয়েছে, তা ছাত্রসমাজকে হতাশ করেছে। ছাত্র সংগঠনগুলোর মতামতকে উপেক্ষা করে অগণতান্ত্রিক ও একতরফাভাবে কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘ডাকসুতে ভোটার হওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স, মাস্টার্স ও এমফিল-এর শিক্ষার্থীদের কথা বলা হয়েছে। আবার এদের বয়স অনূর্ধ্ব ৩০ হতে হবে এবং অনার্স ডিগ্রি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হতে হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আমরা মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত একপাক্ষিক বৈষম্যমূলক ও অগণতান্ত্রিক। ডাকসু’র গঠনতন্ত্রের মৌলিক কাঠামো সংশোধন করে, ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠনের শক্তিকে হ্রাস করার এক নীল নকশা করা হচ্ছে। কারা ডাকসুর সদস্য হতে পারবেন, তা নিয়ে সুচতুর এক কৌশলে বিতর্ক তৈরি করা হয়েছে। যারা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ ও হল সংসদের চাঁদা দেন, তারাই ডাকসু’র ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা রাখেন। কিন্তু ক্ষমতাসীনদের সাজানো পরিকল্পনায় পা দিয়ে প্রশাসন একে সেশন, বয়স, অনার্স কোথায় করেছে ইত্যাদি নানাবিধ সীমায় সীমাবদ্ধ করার চেষ্টা করছে। শাসকরা এই সব সংশোধনী করে ডাকসু’র ক্ষমতা খর্ব করার প্রয়াস চালাচ্ছে। কিন্তু এটা ভুলে গেলে চলবে না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক এক্সেলেন্স এর জন্য যতটা না পরিচিত, তার চেয়ে বেশি পরিচিত জনগণের বিবেক হিসেবে জাতির প্রতিটি সন্ধিক্ষণে তার ঐতিহাসিক ভূমিকার জন্য।’

পারভেজ লেলিন আরও বলেন, ‘আজ ডাকসুকে শাসকদের ইচ্ছে মাফিক পরিচালনার স্বার্থে ছাত্রদের ক্লাবে পরিণত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বয়সসীমা নিয়ে তর্ক করা হচ্ছে। প্রশাসনের সিদ্ধান্ত বৈষম্যমূলক। কোনও পক্ষকে সুবিধা করে দেওয়ার জন্য প্রশাসন এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন কিনা, সে সংশয় জনমনে আছে। নির্বাচিত ডাকসু’র অনুপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের ক্ষমতাবলে ডাকসুর গঠনতন্ত্রের এমন মৌলিক কাঠামো সংশোধনের সিদ্ধান্ত অগতান্ত্রিক বলে আমরা মনে করি। নির্বাচিতদের কেবল এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারার ক্ষমতা থাকা উচিত।’

ডাকসু নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সংশয়ের কথা প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরে হলগুলোতে যে অগণতান্ত্রিক পরিবেশ বিরাজ করছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশ পরিষদের সভায় ক্রিয়াশীল অধিকাংশ সংগঠনের পক্ষ থেকে ভোট গ্রহণের বুথ হল থেকে সরিয়ে একাডেমিক ভবনে স্থানান্তরিত করার যে দাবি তোলা হয়েছিল, তাকে উপেক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যদিয়ে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। যেহেতু ক্যাম্পাস ও হলে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের দখলদারিত্ব রয়েছে, ফলে শিক্ষার্থীরা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন না, যা একটি সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের অন্তরায়।’

এ সময় শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবিতে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাযন ছাত্র নেতারা। দাবিগুলো হলো— ক্যাম্পাস ও হলগুলোকে সন্ত্রাস-দখলদারিত্ব থেকে মুক্ত করে সংগঠনগুলোর সহাবস্থান এবং শিক্ষার্থীদের স্বাধীন মতপ্রকাশের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। গেস্ট রুম ও গণরুমে ছাত্র নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। সব নির্যাতনের বিচার করতে হবে। প্রয়োজন ও মেধার ভিত্তিতে প্রশাসনিক তত্ত্বাবধানে প্রথম বর্ষ থেকেই বৈধ সিটের ব্যবস্থা করতে হবে। তফসিল ঘোষণার পূর্বেই ডাকসু ও হল সংসদ ফি প্রদানকারী সব শিক্ষার্থীদের ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। হলে অবস্থানরত ও সংযুক্ত সব শিক্ষার্থীর ভোটাধিকার রক্ষায় ভোট কেন্দ্র একাডেমিক ভবনে স্থাপন করতে হবে। শ্রেণিকক্ষে প্রচারণা ও নির্বাচনি সমাবেশে জাতীয় নেতাদের অংশগ্রহণের বাধাসহ আচরণবিধির অগণতান্ত্রিক বিধানগুলো বাতিল করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে প্রগতিশীল ছাত্র জোটের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন— বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি আতিকুল ইসলাম সোহেল, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি মাসুদ রানা, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা, সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্যের পক্ষে বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলনের সভাপতি আতিফ অনিক, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি বিপুল চাকমা, ছাত্র গণমঞ্চের সভাপতি সাঈদ বিলাস প্রমুখ।

/এসও/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে সকার স্কুলের বাছাইয়ে ৩ বাংলাদেশি কিশোর
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে সকার স্কুলের বাছাইয়ে ৩ বাংলাদেশি কিশোর
দীর্ঘ অপেক্ষার পর ঢাকায় স্বস্তির বৃষ্টি, কমলো তাপমাত্রা
দীর্ঘ অপেক্ষার পর ঢাকায় স্বস্তির বৃষ্টি, কমলো তাপমাত্রা
রোমাঞ্চকর ম্যাচে ১ রানের নাটকীয় জয় হায়দরাবাদের 
রোমাঞ্চকর ম্যাচে ১ রানের নাটকীয় জয় হায়দরাবাদের 
মামুনুল হকের জন্য কাশিমপুর কারাগারের সামনে ভক্তদের ভিড়
মামুনুল হকের জন্য কাশিমপুর কারাগারের সামনে ভক্তদের ভিড়
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা