X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

নুরের নৈতিক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন

সাদ্দিফ অভি
২৪ মার্চ ২০১৯, ২২:৩১আপডেট : ২৫ মার্চ ২০১৯, ১৫:২৫



নুরুল হক নুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জন করেছিল প্রগতিশীল ছাত্র জোট, স্বাধিকার স্বতন্ত্র পরিষদ, স্বতন্ত্র জোট, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ এবং বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন। নির্বাচন বর্জনের এ ঘোষণার সঙ্গে একাত্ম হয়ে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানান বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক এবং ডাকসু নির্বাচনে জয়ী ভিপি নুরুল হক নুরও। এ পটভূমিতে তার দায়িত্বগ্রহণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে নির্বাচন বর্জনকারী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা।
ডাকসু নির্বাচনের দিন থেকে নানা অনিয়ম তুলে ধরে বিভিন্ন সময় নানা ধরনের বক্তব্য দিয়ে আন্দোলনের সঙ্গে থাকার ঘোষণা দেন নুর। ডাকসুর ভিপি হিসেবে দায়িত্ব নেবেন নাকি আন্দোলন চালিয়ে যাবেন, তা জানাতে তিনি সময় নেন ১১ দিন। দায়িত্ব নেওয়ার দুই দিন আগে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকও করেন তিনি। এ অবস্থায় দায়িত্ব নেওয়ার পর আন্দোলনরত অন্য প্যানেলগুলোর প্রার্থীদের মধ্যে বিরাজ করছে ক্ষোভ। কারণ, দায়িত্ব নেওয়ার আগেও আন্দোলনকারীরা নিজেদের অবস্থান নুরকে জানিয়েছিলেন। তারা বলেছেন, এই নির্বাচনে তাদের কেউ জয়ী হলে তারা কখনও দায়িত্ব নিতেন না।
ডাকসু’র প্রথম কার্যকরী সভার একদিন আগে গত শুক্রবার (২২ মার্চ) বিকালে সংবাদ সম্মেলনে নুর জানান, তিনি ডাকসু’র ভিপি হিসেবে দায়িত্ব নিচ্ছেন। দায়িত্ব নেওয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘গত ১১ মার্চ যে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে তা ঘিরে সারা বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে প্রত্যাশা ছিল। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রত্যাশিত সে নির্বাচন উপহার দিতে পারেনি। আমরা হতাশার সঙ্গে লক্ষ করলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমরা একটি কথা বলতে চাই যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যদি প্রশ্নবিদ্ধ হয় তাহলে বাংলাদেশও প্রশ্নবিদ্ধ হবে।’
শিক্ষার্থীদের চাওয়াকে প্রাধান্য দিয়েই দায়িত্ব নিচ্ছেন উল্লেখ করে নুর বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা পুনর্নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছে। আমরাও তাদের দাবির প্রতি একাত্মতা পোষণ করি। শনিবার যে অভিষেক অনুষ্ঠান হতে যাচ্ছে, সেখানে আমরা শিক্ষার্থীদের চাওয়া-পাওয়াকে প্রাধান্য দিয়েই অংশ নেবো ও দায়িত্ব গ্রহণ করবো। একইসঙ্গে ডাকসুর পুনর্নির্বাচনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য সমস্যা সমাধানে কাজ করবো।’
দায়িত্বগ্রহণের দিনে সভায় যারা যোগ দিয়েছেন তারা ‘অবৈধ ডাকসু নির্বাচনকে বৈধতা দিয়েছেন’ বলে অভিযোগ করে তাদের লালকার্ড দেখিয়ে প্রত্যাখান করেছে ছাত্র ইউনিয়ন। লালকার্ড প্রদর্শনের সময় ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা বলেন, দায়িত্বগ্রহণ করার মধ্য দিয়ে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। তাদের প্রতি ছাত্রসমাজ ক্ষুব্ধ।
এ প্রসঙ্গে ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এবং প্রগতিশীল ছাত্র জোটের প্যানেলের ভিপি প্রার্থী লিটন নন্দী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা যারা প্রগতিশীল ছাত্র জোটসহ আন্দোলন করছিলাম, আমরা প্রথম থেকে এখন পর্যন্ত একই বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছি। এই নির্বাচন যে ত্রুটিপূর্ণ প্রক্রিয়ার মধ্যে হয়েছে, এর সামগ্রিক ফলাফলকে আমরা প্রত্যাখান করেছি। আজকেও আমরা লাল কার্ড প্রদর্শন করেছি ডাকসুতে যারা যোগ দিয়েছে তাদের। এরপর আমরা ২৮ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদের কাছে স্মারকলিপি দেবো। এ ক্ষেত্রে আমরা আমাদের অবস্থান এবং নীতিনৈতিকতার জায়গায় স্থির রয়েছি। এখন কে কী করলেন, আমার মনে হয় সে অবস্থাটি তিনিই ভালো ব্যাখ্যা করতে পারবেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের জায়গা থেকে আন্দোলনটি চালিয়ে যাচ্ছি। এর মধ্যে একটি ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন সময় নুরের দেওয়া বক্তব্যের কারণে আন্দোলনে যে গতি ছিল, সেটা শিক্ষার্থীদের মাঝে একধরনের ধোঁয়াশার মেসেজ গিয়েছে। তাই আন্দোলন যে মাত্রায় হতে পারতো, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধোঁয়াশাপূর্ণ বক্তব্যের কারণে আন্দোলনটি সেই মাত্রায় করা সম্ভব হয়নি। তারপরও আমরা আমাদের নৈতিক জায়গা থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। শেষ পর্যন্ত পুনর্নির্বাচন হবে কিনা, জানি না, কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা আমরা নৈতিকতার সঙ্গে আপস করিনি।’ নিজেদের আদর্শগত জায়গা খুব শক্ত দাবি করে লিটন বলেন, ‘একটা বাচ্চা মেয়েও কিন্তু তা করে দেখিয়েছে। সবাই গণভবনে গেলেও সে কিন্তু যায়নি। আমি যখন ডাকসু নির্বাচন বর্জন করি, তখন পদ গ্রহণ করার প্রশ্নই আসে না। আমরা সে জায়গায় থাকলে প্রশ্নই আসতো না।’
স্বাধিকার স্বতন্ত্র পরিষদের জিএস প্রার্থী এ আর এম আসিফুর রহমান বলেন, ‘দুদিন আগে আমরা পাঁচ প্যানেল বসেছিলাম। সেখানে আমরা নুরকে এটাই বলেছি, যেহেতু আমাদের নির্বাচনি কোনও জোট ছিল না, আমরা অনিয়মের বিরুদ্ধে এক কাতারে দাঁড়িয়েছিলাম, এখন দায়িত্ব নেওয়া না-নেওয়া তার প্যানেলের সিদ্ধান্ত। আমরা এতটুকু বলে দিয়েছি যে, ‘আপনার জায়গায় আমরা চারজনের কেউ থাকলে নীতিনৈতিকতার জায়গা থেকে দায়িত্ব নিতাম না’।”
তিনি বলেন, ‘নৈতিকভাবে বলতে আমরা যদি এই নির্বাচনে জয়ী হতাম তাহলে আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পক্ষে থাকতাম না।’
নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল ও বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল সংসদে সদস্য হিসেবে দায়িত্ব নেননি লামইয়া তানজিন তানহা এবং ফারজানা আক্তার মীম। নির্বাচনে অনিয়ম হয়েছে, এমন অভিযোগ তুলে নির্বাচনের দিন তাদের প্যানেল ভোট বর্জন করে।
লামইয়া তানজিন তানহা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটা একটা প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন ছিল। এই নির্বাচনে পদ গ্রহণ করার কোনও প্রশ্নই আসে না। আমার আদর্শের সঙ্গে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের দায়িত্ব গ্রহণের বিষয়টা যায় না। প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে দায়িত্ব গ্রহণ করা মানে আমি নিজেও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে গেলাম। আমাকে যারা নির্বাচিত করেছেন সেসব শিক্ষার্থীদের আমি হলে গিয়ে বলেছি, পাশে থেকে কাজ করবো। পাশে থেকে কাজ করাই যায়। কিন্তু বিতর্কিত একটি নির্বাচনে পদ গ্রহণ করতে চাচ্ছি না।’
তিনি বলেন, ‘যারা আন্দোলন করেও দায়িত্ব নিয়েছেন তাদের আদর্শিক জায়গা অন্য। নির্বাচন বর্জন করে পদ গ্রহণ করা যৌক্তিক নয় বলেই আমি পদ গ্রহণ করিনি।’


/এইচআই/
সম্পর্কিত
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
কুমিল্লার স্কুলে স্কুলে ‘পানির ঘণ্টা’ চালুর নির্দেশ
সর্বশেষ খবর
বৃষ্টি ও বন্যায় কেনিয়ায় নিহত অন্তত ৪৫
বৃষ্টি ও বন্যায় কেনিয়ায় নিহত অন্তত ৪৫
‘তাই বলে ১৯ গোল খাবো!’
‘তাই বলে ১৯ গোল খাবো!’
বিকেএসপি কাপ ভলিবলে লাল দল চ্যাম্পিয়ন
বিকেএসপি কাপ ভলিবলে লাল দল চ্যাম্পিয়ন
যে দর্শনে পাকিস্তানকে কোচিং করাতে চান গিলেস্পি
যে দর্শনে পাকিস্তানকে কোচিং করাতে চান গিলেস্পি
সর্বাধিক পঠিত
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
আজ কি বৃষ্টি হবে?
আজ কি বৃষ্টি হবে?