X
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪
৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ, কর্তৃপক্ষ জানে না!

উদিসা ইসলাম
০৪ এপ্রিল ২০১৯, ২২:৩৩আপডেট : ০৫ এপ্রিল ২০১৯, ১২:১১

 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

নিজ বিভাগের সভাপতির বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেও প্রতিকার মেলেনি বলে দাবি করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই অভিযোগকারী শিক্ষার্থী। তবে কর্তৃপক্ষের কাছে কোনও অভিযোগ আসেনি বলে দাবি করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন। তারা বিষয়টি সম্পর্কে অবহিতও নন বলে দাবি করেন। তবে এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে গত বছর নভেম্বরে আরেকটি অভিযোগ এসেছিল এবং তখন সেই শিক্ষককে মৌখিকভাবে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিন।

অভিযোগকারী বলছেন, ঘটনা গত ২৫ জানুয়ারির এবং গত ১২ ফেব্রুয়ারি তিনি এবং তার বিভাগের আরেক ভিকটিম বিভাগে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রায় দুই মাস পরেও কোনও প্রতিকার না পেয়ে ৩ এপ্রিল ফেসবুকে ঘটনা প্রকাশ করেন অভিযোগকারীদের বন্ধু। এদিকে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার কথা জানতে পেরে অভিযোগকারীদের টেলিফোনে যোগাযোগ করে ‘কী প্রমাণ আছে’ বারবারই তা জানতে চান অভিযুক্ত শিক্ষক। একপর্যায়ে তিনি অভিযোগকারীকে বলেন, প্রমাণ হাজির না করে তিনি কী করে অভিযোগ করেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিববুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ও ইনফরমেশন বিভাগের শিক্ষার্থী মিথিলা হাসানের ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে বিষয়টি সামনে আসে। পোস্ট থেকে জানা যায়, কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দুই শিক্ষার্থী তাদের বিভাগীয় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরও কোনও প্রতিকার পাননি। একইসঙ্গে পোস্টে তিনি অভিযোগকারী শিক্ষার্থীর হাতে লেখা অভিযোগের কপি সংযুক্ত করেছেন। তিনি লিখেছেন, কীভাবে তাদের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়। কীভাবে পড়তে এসে যৌন হয়রানির শিকার হয়েও কোনও প্রতিকার পান না।

তার পোস্টের মাধ্যমে বিষয়টি জানার পর অভিযোগকারী সামিনার (ছদ্মনাম; ২০১৪-১৫ সেশন) সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ঘটনা সত্য। ফেব্রুয়ারি মাসের ১২তারিখ তারা বিভাগে লিখিতভাবে অভিযোগ জমা দেন। তিনি বলেন, বিভাগের সবাই ঘটনাগুলো জানেন। আমি একা ভিকটিম না। আমি প্রতিবাদ করতে পেরেছি। বিভাগের শিক্ষকদের বিষয়টি জানানো হলে তারা আমাদেরকে লিখিত দিতে বলেন এবং কর্তৃপক্ষকে জানাবেন আশ্বাস দেন। পরে আমরা লিখিত দিলে সেটি নিয়ে প্রশাসনের কাছে গিয়েছেন শিক্ষকরা, কিন্তু এক মাসে তেমন কোনও অগ্রগতি আমরা দেখিনি। বরং এরইমধ্যে অভিযুক্ত শিক্ষক আমাদেরকে কল করে আমাদের কাছে কী প্রমাণ আছে তা জানতে চাইছেন। কেন আমরা অভিযোগ করলাম, আমাদের সঙ্গে কী হয়েছে সেটিও টেলিফোনে জানতে চেয়েছেন।

অভিযোগকারী আরেক শিক্ষার্থী সেলিনা (ছদ্মনাম) বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা শাস্তির দাবিতে অভিযোগ করেছিলাম। পরবর্তী সময়ে অনেকেই আমাদেরকে বলেছেন সেই শিক্ষক যদি মানহানির মামলা করেন তখন আমরা বিপদে পড়ে যাব। এছাড়া অনেক শঙ্কার কথা নানা জায়গা থেকে আমাদের বলেছে। আমরা যেহেতু আমাদের অভিভাবকদের জানিয়েছি, তারা প্রশাসনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চেষ্টা করেও পারেননি। এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ঘটনা সমাধানে দায়িত্ব নিয়ে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক ফাতেমা খাতুন ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন, কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে অধ্যাপক ফাতেমা খাতুনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কোনও তদন্তের বিষয় সম্পর্কে তিনি জানেন না। এই ঘটনার বিষয়ে তিনি অবহিত কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না আমার জানা নেই।’

অভিযোগের বিষয়ে প্রশাসনের কাছে জানানো হয়েছিল উল্লেখ করে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক নেসারুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘আমাদেরকে শিক্ষার্থীরা জানানোর পরে আমরা বিষয়টি প্রক্টরকে অবহিত করি। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে আমরা তার সঙ্গে কথা বলি, তিনি অস্বীকার করেছেন। এরপর প্রশাসনকে জানানো হলে তারা বলেছেন ‘আমরা দেখব’। পরে কী ঘটেছে সেটি আমরা আর ফলো করিনি। তারা এরপরে আর আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। আমাদের দায়িত্ব ছিল প্রশাসনকে অবহিত করা। আমরা জানিয়েছি।’’

যদিও প্রক্টর আশিকুজ্জামান ভূইয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, তিনি এমন কোনও অভিযোগের বিষয়ে জানেন না।

এদিকে উপাচার্য খোন্দকার নাসির উদ্দিন বলছেন, গত নভেম্বরে এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ তিনি পেয়েছিলেন এবং মৌখিকভাবে সেই শিক্ষককে সতর্ক করার পাশাপাশি তিনি যেন আর কোনও নারী শিক্ষার্থীকে সুপারভাইজ করার সুযোগ না পান সেটিও নিশ্চিত করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। গত মাসের কোনও অভিযোগ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলেও জানান। তিনি বলেন, ‘আমি বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছি, আমি নানাভাবে ঘটনাটি আজকে জানতে পারছি, কিন্তু কোনও অভিযোগ আসেনি আমার কাছে। নভেম্বরে একটি ঘটনা ঘটেছিল এবং মেয়েটি তার পরীক্ষায় পাস করা নিয়ে শঙ্কা জানানোর পর আমি ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেজ রক্ষায় ঘটনাটি যেন জানাজানি না হয় সে বিষয়েও সতর্ক ছিলাম।’

এরকম ঘটনায় মৌখিক সতর্ক করা যথেষ্ট কি না প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সবার সামনে বলে দিয়েছি কোনও সুপারভাইজ করতে পারবে না। এরপর কিছু ঘটলে তার চেয়ারম্যানশিপ থাকবে না বা পড়াতে পারবে না সহ অন্য ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ তো আছে। মেয়েদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনও কাজে থাকবে না। ’

দিনের বেলা ক্লাস চলে যখন সে সময় ছাড়া অফিসে মেয়েদের আসতে নিষেধ করা হয়েছে জানিয়ে উপাচার্য খোন্দকার নাসির উদ্দিন বলেন, ‘অফ টাইমে কোনও শিক্ষক আসতে বললে তারা আসতে বাধ্য না, কেউ বাধ্য করলে যেন জানায়। ফেব্রুয়ারিতে কোনও অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। এরা নতুন করে কী করেছে সেটা আমি বলতে পারব না। হয়তো তারা অফিসিয়াল অভিযোগ না করে ফেসবুকেই স্ট্যাটাস দিয়েছে। আমাদের নলেজে আসলে সঙ্গে সঙ্গে সমাধানের চেষ্টা করি।’

 

/টিএন/এমএমজে/
সম্পর্কিত
উচ্চশিক্ষার মানের বৈষম্য নিরসনের আহ্বান ইউজিসির
একাদশে ভর্তির নীতিমালা প্রকাশ
একীভূত হতে পারে কেউ পাস না করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
সর্বশেষ খবর
সংকট থেকে উত্তরণে তরুণদের এগিয়ে আসার আহ্বান মেননের
সংকট থেকে উত্তরণে তরুণদের এগিয়ে আসার আহ্বান মেননের
কানে ঝুলছে বাংলাদেশের দুল!
কান উৎসব ২০২৪কানে ঝুলছে বাংলাদেশের দুল!
ধোনি-জাদেজার লড়াই ছাপিয়ে প্লে অফে বেঙ্গালুরু
ধোনি-জাদেজার লড়াই ছাপিয়ে প্লে অফে বেঙ্গালুরু
হীরকজয়ন্তীর পর সংগঠনে মনোযোগ দেবে আ.লীগ
হীরকজয়ন্তীর পর সংগঠনে মনোযোগ দেবে আ.লীগ
সর্বাধিক পঠিত
মামুনুল হক ডিবিতে
মামুনুল হক ডিবিতে
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি
আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি
নির্মাণের উদ্দেশ্যে ভালো সড়ক কেটে ২ বছর ধরে খাল বানিয়ে রেখেছে
নির্মাণের উদ্দেশ্যে ভালো সড়ক কেটে ২ বছর ধরে খাল বানিয়ে রেখেছে
গরমে সুস্থ থাকতে কোন কোন পানীয় খাবেন? ইলেক্ট্রোলাইট পানীয় কখন জরুরি?
গরমে সুস্থ থাকতে কোন কোন পানীয় খাবেন? ইলেক্ট্রোলাইট পানীয় কখন জরুরি?