X
সোমবার, ১৯ মে ২০২৫
৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

মিডিয়ায় প্রচারের জন্য জনস্বার্থে মামলা করা আইনজীবীদের ওপর হাইকোর্টের ক্ষোভ

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০৮ মে ২০১৯, ০০:৪৬আপডেট : ০৮ মে ২০১৯, ০০:৪৮

হাইকোর্ট পাবলিক ইন্টারেস্টের (পাবলিক ইন্টারেস্ট লিটিগেশন বা জনস্বার্থের মামলা) অনেক মামলা অনেক অ্যাডভোকেট মিডিয়া প্রচারের জন্য করে। কিন্তু রুলের পর তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।
কারাগারে অগ্নিদগ্ধ এক আইনজীবীর মৃত্যুতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে করা রিটের শুনানিকালে মঙ্গলবার (৭ মে) বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইয়েদুল হক সুমন। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেসুর রহমান।
শুনানির শুরুতে রিটকারী আইনজীবী সৈয়দ সাইয়েদুল হক সুমন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর হওয়া সত্ত্বেও সরকারকে বিবাদী করে রিট দায়ের করার আইনগত বৈধতা আছে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেসুর রহমান বলেন, রিটকারী আইনজীবী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একজন প্রসিকিউটর। তিনি এই আবেদনে যাদেরকে বিবাদী করেছেন তারা সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দফতরের কর্মকর্তা। ফলে উনি সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন কিনা তা খতিয়ে দেখা দরকার।
এ সময় আদালতের এজলাস কক্ষে উপস্থিত দুদক আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুব আদালতকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আমি দুদকের আইনজীবী। আমার নিয়োগপত্রে মামলা করার বিষয়ে বিধি নিষেধের কথা উল্লেখ রয়েছে।’
এ পর্যায়ে রিটকারী আইনজীবী সাইয়েদুল হক সুমন বলেন, ‘আমি ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর। কিন্ত ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে বা কোনও যুদ্ধাপরাধীর পক্ষে আমি মামলা লড়ছি না। ফলে রিট করতে আইনগত বাধা নেই।’
তখন আদালত বলেন, আপনাকে প্রসিকিউটর হিসেবে যে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে সেখানে এ ধরনের মামলা করার ক্ষেত্রে কোনও বিধি নিষেধের কথা উল্লেখ রয়েছে কিনা?


জবাবে রিটকারী আইনজীবী বলেন, ‘কোনও বিধি নিষেধ নেই।’
এরপরই আদালত রিটকারীকে প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ সংক্রান্ত চিঠি আদালতে দাখিল করতে বলেন। পাশাপাশি আইনজীবীর মৃত্যুর ঘটনায় কোনও মামলা হয়েছে কিনা তা জানাতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে নির্দেশ দেওয়া হয়।’
পরে আদালত বলেন, ‘পাবলিক ইন্টারেস্টের (পাবলিক ইন্টারেস্ট লিটিগেশন বা জনস্বার্থের মামলা) অনেক মামলা অনেক অ্যাডভোকেট মিডিয়ায় প্রচারের জন্য করে। কিন্তু রুলের পর তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না। শুনানির জন্য দিন ধার্য করলেও তারা বলে এ সপ্তাহে নয়, পরের সপ্তাহ। এভাবেই সময় নিয়ে নেয়।’
আদালত আরও বলেন, ‘বিচারকাজের বাইরেও আমরা অনেক বিষয়ে খোঁজ রাখি। ব্যারিস্টার সুমন বিভিন্নভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসে সমাজের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে কাজ করে যাচ্ছেন। এটি একটি ভালো দিক। তবে ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে একটি চক্র কাজ করছে। তাই আপনাকে (ব্যারিস্টার সুমন) সাবধানে চলার পরামর্শ দিচ্ছি।’ এরপর আদালত পরবর্তী শুনানির জন্য আগামীকাল (৮ মে) পর্যন্ত মামলাটির কার্যক্রম মুলতবি করেন।’
পঞ্চগড় জেলা কারাগারে (কারা হেফাজতে) থাকাবস্থায় আইনজীবী পলাশ কুমার রায় অগ্নিদগ্ধ হওয়া এবং পরে হাসপাতালে মৃত্যুবরণের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইয়েদুল হক সুমন গত ৬ মে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। রিটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিব, আইজি প্রিজন, পঞ্চগড় কারা কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত ২৫ মার্চ দুপুরে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে কোহিনুর কেমিক্যাল কোম্পানি নামে একটি প্রতিষ্ঠানের করা মামলা প্রত্যাহার দাবিতে পরিবারের লোকজন নিয়ে অনশন শুরু করেন স্থানীয় আইনজীবী পলাশ কুমার রায়। পরে সেখান থেকে উঠে তারা জেলা শহরের শের-ই-বাংলা পার্ক সংলগ্ন মহাসড়কে এসে মানববন্ধন শুরু করেন। সেখানে রাস্তা বন্ধ করে হ্যান্ডমাইকের সাহায্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে কটূক্তি করেছেন এমন অভিযোগ এনে স্থানীয়রা পলাশকে সদর থানা পুলিশের কাছে তুলে দেন। ওইদিন বিকেলে প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি করার অভিযোগে স্থানীয় রাজিব রানা নামের এক যুবক তার বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা করেন। ওই দিনই তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
আইনজীবী পলাশকে গত ২৬ এপ্রিল বিকেলে তাকে ঢাকা পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু সকালে হঠাৎ হাসপাতালের বাইরে থাকা একটি টয়লেট থেকে তিনি অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় দৌড়ে বের হন। এ সময় কারারক্ষীরা তাকে উদ্ধার করে এবং শরীরের আগুন নেভান। আগুনে তার শরীরের ৪৭ শতাংশ পুড়ে যায়। রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পরদিনই তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। গত ৩০ এপ্রিল দুপুরে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। অগ্নিদগ্ধ এই আইনজীবীর মৃত্যুর ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে রিট করেন আইনজীবী সৈয়দ সাইয়েদুল হক সুমন।

 

 

/বিআই/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
গৃহবন্দি লেকশোর হোটেল মালিককে হাজির করতে সন্তানদের রিট
গৃহবন্দি লেকশোর হোটেল মালিককে হাজির করতে সন্তানদের রিট
শ্রমিকদের বাধায় শ্রম ভবনে ঢুকতে পারছেন না কর্মকর্তা-কর্মচারীরা
শ্রমিকদের বাধায় শ্রম ভবনে ঢুকতে পারছেন না কর্মকর্তা-কর্মচারীরা
‘পরেরবার ফার্মেসি নিয়ে পড়বো’ লিখে কলেজশিক্ষার্থীর ‘আত্মহত্যা’
‘পরেরবার ফার্মেসি নিয়ে পড়বো’ লিখে কলেজশিক্ষার্থীর ‘আত্মহত্যা’
ক্যান্সারে আক্রান্ত জো বাইডেন
ক্যান্সারে আক্রান্ত জো বাইডেন
সর্বাধিক পঠিত
চাকরিচ্যুত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের আল্টিমেটাম, দাবি না মানলে লং মার্চ টু জাহাঙ্গীর গেট
চাকরিচ্যুত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের আল্টিমেটাম, দাবি না মানলে লং মার্চ টু জাহাঙ্গীর গেট
আরও দুর্বল হলো টাকা
আরও দুর্বল হলো টাকা
পাঁচ ঘণ্টার আল্টিমেটাম, দাবি না মানলে দেশ অচলের হুঁশিয়ারি শ্রমিকদের
পাঁচ ঘণ্টার আল্টিমেটাম, দাবি না মানলে দেশ অচলের হুঁশিয়ারি শ্রমিকদের
ঢাকা আসছেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী
ঢাকা আসছেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী
জামায়াতের দুই নেতাকর্মীকে মারধরের পর গলায় জুতার মালা দিয়ে পুলিশে সোপর্দ
জামায়াতের দুই নেতাকর্মীকে মারধরের পর গলায় জুতার মালা দিয়ে পুলিশে সোপর্দ