X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

আদালতের নির্দেশ এড়াতে টালবাহানা?

উদিসা ইসলাম
১৫ মে ২০১৯, ২৩:২৫আপডেট : ১৬ মে ২০১৯, ১৫:২৮





আদালত দেশের সর্বোচ্চ আদালত ৫২টি মানহীন পণ্য বাজার থেকে সরানোর নির্দেশ দেওয়ার পরও তা কার্যকর না করা হবে আদালত অবমাননার শামিল। এমনটাই মনে করেন ভেজাল পণ্য নিয়ে রিটকারী আইনজীবী শিহাব উদ্দিন খান। তিনি বলেন, আদালত তার আদেশে ‘ইমিডিয়েট’ শব্দ ব্যবহার করে পণ্যগুলো বাজার থেকে সরিয়ে নিতে বলেছেন। এর অর্থ দ্রুত সময়ের মধ্যে পণ্যগুলো সরাতে হবে।
যদিও বুধবার (১৫ মে) দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে এই ৫২ পণ্যের বেশির ভাগই দেখতে পাওয়া গেছে। অবশ্য এদিন পর্যন্ত এই ৫২টি প্রতিষ্ঠানের ১৭টি তাদের পণ্যের পুনঃপরীক্ষার আবেদন করে চিঠি দিয়েছে বিএসটিআই কর্তৃপক্ষের কাছে। আর বিএসটিআই ৭টি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করে আরও ১৮টির উৎপাদন অনুমোদন স্থগিত করেছে।
রিটকারী আইনজীবী শিহাব উদ্দিন খান বলছেন, পুনঃপরীক্ষা চলাকালীন পণ্য যদি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান না সরায় এবং তাদের এই কাজটি করতে যদি কোনও প্রতিষ্ঠান সহায়তা করে তাহলে উভয়েই আইনের প্রতি অশ্রদ্ধাশীল হিসেবে বিবেচিত হবে। আর পণ্য তিন দিনের মধ্যে না সরানো হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।
বুধবার বিএসটিআই-এর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নিম্নমানের ৫২টি খাদ্যপণ্যের মধ্যে ৭টির উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। একই সঙ্গে আরও ১৮টি পণ্য উৎপাদনের অনুমোদন স্থগিত করা হয়েছে।
এসব মানহীন পণ্য বাজার থেকে সরানোর বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসটিআই-এর পরিচালক (সিএম) ইঞ্জিনিয়ার এস এম ইসহাক আলী বলেন, নির্দেশ পাওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ১৭টি চিঠি দিয়েছে। তাদের দাবি, তাদের পণ্য সঠিক। তারপরও যদি মান নিয়ে সমস্যা মনে করা হয় বিএসটিআই যেন পুনরায় পরীক্ষা করে।
কবে নাগাদ পণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহার করা হবে— এমন প্রশ্নের জবাবে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘সেটি বৃহস্পতিবার (১৬ মে) জানা যাবে।’
প্রসঙ্গত, পরীক্ষায় নিম্নমান প্রমাণিত হওয়ায় ৫২টি খাদ্যপণ্য অবিলম্বে বাজার থেকে প্রত্যাহার করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এসব খাদ্যপণ্য বিক্রি ও সরবরাহে জড়িতদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের প্রতি এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এক রিটের প্রাথমিক শুনানিতে গত রোববার (১২ মে) রুলসহ এ আদেশ দেন। যতক্ষণ পর্যন্ত ওই ৫২ পণ্য বিএসটিআইয়ের পরীক্ষায় পুনরায় উত্তীর্ণ না হচ্ছে, ততক্ষণ এসব পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গত দুই দিনে সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন মুদি দোকানে এসিআই আয়োডিনযুক্ত লবণ, মোল্লা সল্ট আয়োডিনযুক্ত লবণ ও প্রাণের হলুদের গুঁড়া রয়েছে। নিষিদ্ধ ৫২টি পণ্যের তালিকা কোনও দোকানেই ঝুলিয়ে রাখতে দেখা যায়নি।
তবে এসিআই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সব দোকানীকে নির্দিষ্ট ব্যাচের লবণের প্যাকেট ফেরত দিতে বলেছে। প্রতিষ্ঠানটির বিজনেস ডিরেক্টর (সল্ট) মো. কামরুল হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্স অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) পরীক্ষায় এসিআই লবণের একটি ব্যাচে কিছু প্রবলেম পেয়েছে। তারা pH-এর পরিমাণ বেশি পেয়েছে। যদিও সেটি আমাদের নিজস্ব ল্যাবসহ বিভিন্ন ল্যাবে টেস্ট করে দেখেছি। আমরা কোনও সমস্যা পাইনি।’
হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী ৫২টি মানহীন পণ্য বাজার থেকে সরানোর ব্যবস্থা না নিলে নিরাপদ খাদ্য আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. মাহফুজুল হক। তিনি মঙ্গলবার (১৪ মে) দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, মানহীন এই পণ্যগুলো বাজার থেকে সরাতে ৩-৪ দিন সময় দেওয়া হবে। এর মধ্যে না সরানো হলে নিরাপদ খাদ্য আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রিটকারী আইনজীবী শিহাব উদ্দিন খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, “আদালত তার আদেশে ‘ইমিডিয়েট’ শব্দ ব্যবহার করে পণ্যগুলো বাজার থেকে সরিয়ে নিতে বলেছেন। যেহেতু পণ্যগুলো সারাদেশেই আছে তাই আদালতের আদেশ প্রতিপালনের বিষয়ে ২৩ মের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছেন।” তিনি বলেন, “তবে ওই ‘ইমিডিয়েট’ বলতে যখন খুশি তখন পণ্য সরালে হবে না, দ্রুত সময়ের মধ্যে সরাতে হবে।”
শিহাব উদ্দিন খান আরও বলেন, ‘ভেজাল খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যদি আদেশ না মেনে কোনও সুযোগ নিতে চায় এবং কোনও প্রতিষ্ঠান যদি সেই সুযোগ দিতে চায়, সেটাও আদালত অবমাননার শামিল হবে। তারা যদি সংক্ষুব্ধ হয় আপিলে যাবে। যতক্ষণ আদেশ বলবৎ থাকবে তখন আর কোনও অথরিটি, ব্যক্তি কিংবা কোম্পানির কালক্ষেপণের সুযোগ নেই।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের সামাজিক বাস্তবতায় আইনকে তোয়াক্কা না করার কারণেই তো বিষয়গুলো এত জটিল হয়েছে। আমার প্রত্যাশা থাকবে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর অতিসত্বর পণ্য সরানোর ব্যবস্থা নেবে। আদালত এসব পণ্য বাজারজাতকরণেরও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। কালক্ষেপণের মানেই তারা আদালতের আদেশ গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছেন না।’
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ—ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিষয়টি আইনানুগভাবে নিষ্পত্তি হতে হবে। আদালত যেভাবে নির্দেশ দিয়েছেন সেই নির্দেশ মেনে চলা যেমন দরকার, তেমনি কোনও প্রতিষ্ঠানের জন্য কোনও ব্যবসায়ী যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকেও নজর রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘পণ্যগুলো ভোক্তার শরীরের জন্য ক্ষতিকর কিনা, সেটি জানতে হবে এবং ক্ষতিকর হলে দ্রুত প্রত্যাহারের ব্যবস্থা নিতে হবে।’ 

/এইচআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
টিপু-প্রীতি হত্যা মামলার অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশ আজ
টিপু-প্রীতি হত্যা মামলার অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশ আজ
যশোরে তীব্র গরমে মরে যাচ্ছে মাছের পোনা, ক্ষতি ‌‘২০ কোটি টাকা’
যশোরে তীব্র গরমে মরে যাচ্ছে মাছের পোনা, ক্ষতি ‌‘২০ কোটি টাকা’
মাড় ফেলে ভাত রান্না হলে ‘১৫ ভাগ অপচয় হয়’
মাড় ফেলে ভাত রান্না হলে ‘১৫ ভাগ অপচয় হয়’
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ