X
রবিবার, ১৮ মে ২০২৫
৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

প্রশ্নফাঁস করে বিলাসবহুল বাড়ি, আদালতের নির্দেশে ক্রোক

নুরুজ্জামান লাবু
০৭ নভেম্বর ২০১৯, ০৭:৪৫আপডেট : ০৭ নভেম্বর ২০১৯, ১৩:১৬

এই সেই দুই বাড়ি

প্রশ্নফাঁসের টাকা দিয়ে নড়াইলের নিজ গ্রামে করেছিলেন বিলাসবহুল ‘ডুপ্লেক্স’ বাড়ি, খুলনার খালিশপুরে গড়ে তুলেছিলেন ছয় তলা আরেকটি বাড়ি। ক্রমেই সম্পদের পসরা সাজিয়ে বসছিলেন তিনি। কিন্তু এরমধ্যেই প্রশ্নফাঁসের দায়ে সিআইডির জালে আটকা পড়েন। আদালতে তার বিরুদ্ধে চার্জশিটও দেওয়া হয়। এরপর জেলও খাটেন। কিন্তু আটকে রাখা যায়নি। অল্প কয়েকদিন পরেই জামিনে বেরিয়ে যান তিনি। তবে এবার পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার স্থাবর সম্পদ হিসেবে খুলনা ও নড়াইলের বাড়ি দুটি ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

আলোচিত এই প্রশ্নফাঁসকারী চক্রের হোতার নাম ইব্রাহীম। ৩ নভেম্বর ঢাকার সিনিয়ার স্পেশাল জজ আদালতের ই আদেশের পর পুলিশ তার দুই বাড়ি নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে।

ইব্রাহীম



জানা যায়, দেশব্যাপী আলোচিত প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় ২০১৭ সালের ১৯ অক্টোবর মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই আবাসিক হলে অভিযান চালিয়ে মামুন ও রানা নামে দুই শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করে সিআইডি। পরবর্তীতে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরদিন পরীক্ষার হল থেকে গ্রেফতার করা হয় রাফি নামে ভর্তিচ্ছু একজন শিক্ষার্থীকে। এই ঘটনার দিনই (২০ অক্টোবর, ২০১৭) শাহবাগ থানায় একটি মামলা করা হয়। এরপর একে একে বেড়িয়ে আসতে থাকে প্রশ্নফাঁসে জড়িত বিশাল এক চক্রের সদস্যদের নাম। ধারাবাহিক অভিযানে মূলহোতাসহ মোট ৪৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়। আলোচিত এই চক্রটির মাস্টারমাইন্ড ছিল বিকেএসপির সহকারী পরিচালক অলিপ কুমার বিশ্বাস, ইব্রাহীম, মোস্তফা কামাল, হাফিজুর রহমান হাফিজ এবং তাজুল ইসলাম।

সিআইডির তদন্তে প্রশ্নফাঁস চক্রের মূলহোতাদের অঢেল অবৈধ অর্থ-সম্পদের সন্ধানও পাওয়া যায়। এরপর এসব স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে উত্তরা পশ্চিম থানায় মানি লন্ডারিং আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়।

মামলাটির বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোস্তফা কামাল বলেন, ‘তদন্তের সময় জানা যায়, ইব্রাহীমসহ অন্যরা প্রশ্নফাঁস করে অবৈধভাবে বিপুল অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছে। বিষয়টি তদন্তে উঠে আসার পর তারা এসব সম্পদ ক্রোক করার জন্য আদালতে আবেদন করেছিলেন। আদালত সেই আবেদনের শুনানির পরিপ্রেক্ষিতে ইব্রাহীমের দুই বাড়ি ক্রোক করার নির্দেশ দিয়েছেন।’


সিআইডির এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রশ্নফাঁসকারীর সম্পদ জব্দ করার মধ্য দিয়ে এটি প্রমাণ হলো যে, অবৈধভাবে বা ক্রাইমের মাধ্যমে সম্পদ অর্জন করলেও তা ধরে রাখা যায় না। এটি অন্যান্য অপরাধীদের কাছেও একটি বার্তা হিসেবে যাবে।’

আদালত ও সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে নিয়মিত মামলার পাশাপাশি ৮ জনের বিরুদ্ধে এই বছরের ৭ জানুয়ারি উত্তরা-পশ্চিম থানায় মানি লন্ডারিং আইনে একটি মামলা দায়ের করে সিআইডি। মামলার তদন্তে প্রশ্নফাঁসের মাধ্যমে ইব্রাহীমের বিপুল সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়া যায়। ইব্রাহীম খুলনার খালিশপুর থানার মুজগুন্নি আবাসিক এলাকার (দ্বিতীয় পর্যায়) ২১ নম্বর সড়কের ৩২৪ নম্বর প্লটে চার কাঠ জমি কিনেছিল। ২০১৭ সালের ১৭ জুলাই ৩৭১৯ নম্বর দলিলের মাধ্যমে কেনা এই জমিতে ছয় তলা পাকা ভবন তৈরি করে। ওই বছরেরই ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত তৈরি করা ওই ভবনে প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয় করা হয়। এছাড়া নড়াইলের কালিয়া উপজেলায় ৬ নং খাসিয়াল ইউনিয়নের তালবাড়িয়া গ্রামে প্রায় একই সময়ে ৩১ শতাংশ জমির ওপর একটি ডুপ্লেক্স ভবন নির্মাণ করা হয়। এই ভবন নির্মাণে ব্যয় করা হয় প্রায় ৭০ লাখ টাকা।

সিআইডির তদন্ত সূত্র জানায়, ইব্রাহীম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশুনা শেষ করার আগেই প্রশ্নফাঁস চক্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়। ২০১৪ সালের দিকে চক্রের অন্যতম সদস্য মোস্তফা কামালের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তার মাধ্যমেই ইব্রাহীম বিভিন্ন ব্যাংক-বীমাসহ সরকারি চাকরির পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস করে সমাধান করা শুরু করেন। বিনিময়ে তিনি একটি নির্দিষ্ট অংকের অর্থ ভাগ পেতেন।

আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ইব্রাহীম জানিয়েছিলেন, ২০১৫ থেকে ২০১৮ সালের বিভিন্ন সময়ে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক ও অগ্রণী ব্যাংকের অফিসার পদে, পরিসংখ্যান ব্যুরোর কম্পিউটার অপারেটর ও এমএলএসএস পদে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমএলএসএস পদে, কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের কর্মকর্তা ও ক্যাশিয়ার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা, ব্লক সুপার ভাইজার পদে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের তৃতীয় শ্রেণির নিয়োগের প্রশ্নপত্র ফাঁস করে ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে বহু লোককে চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন।

আদালতে দেওয়া ইব্রাহীমের ভাষ্য ছিল, জালিয়াতের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থ তিনি নিজের নামে, স্ত্রী তাবাসসুম মুস্তারি, বোন রহিমা খানম রিপাসহ বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে লেনদেন করেন। এছাড়া বিকাশ অ্যাকাউন্টেও টাকা লেনদেন করেন। এই টাকা দিয়ে নড়াইলে গ্রামের বাড়িতে পাঁচ বিঘা জমি, ১০ কাঠা জমির ওপর একটি দোতলা বাড়ি, খুলনায় সাড়ে ছয় শতাংশ জমির ওপর চারতলা একটি ভবন (ওমেগা রিয়েল এস্টেট), একটি হোন্ডা ভেজেল গাড়িসহ (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৫২৬৮৫) নানা বৈষয়িক বিষয়াদি ক্রয় করেন।

সিআইডির একজন কর্মকর্তা জানান, আদালত নড়াইলের ডুপ্লেক্স বাড়িটি ক্রোক করে সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপার এবং খুলনার ছয় তলা বাড়িটি খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনারকে নির্দেশনা দিয়েছেন। ইতোমধ্যে পুলিশ দুই বাড়িই নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে।

 




 

/এএইচ/
সম্পর্কিত
মতিঝিলে একটি ভবনে আগুন
ঢাবি শিক্ষার্থী সাম্য হত্যা: তিন জন রিমান্ডে
মসজিদভিত্তিক শিক্ষা প্রকল্পমন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে কর্মী-শিক্ষকদের বিক্ষোভ, দুই ঘণ্টার আল্টিমেটাম
সর্বশেষ খবর
বিইউবিটিতে জাতীয় এআই অলিম্পিয়াড সম্পন্ন
বিইউবিটিতে জাতীয় এআই অলিম্পিয়াড সম্পন্ন
বিমানের চাকা খুলে পড়ার কারণ সম্পর্কে যা জানা গেলো
বিমানের চাকা খুলে পড়ার কারণ সম্পর্কে যা জানা গেলো
মাথা ন্যাড়া করে জুতার মালা পরিয়ে যুবলীগ নেতাকে পুলিশে সোপর্দ
মাথা ন্যাড়া করে জুতার মালা পরিয়ে যুবলীগ নেতাকে পুলিশে সোপর্দ
আ.লীগ নেতাসহ শতাধিক ব্যবসায়ীর এনসিপিতে যোগদান
আ.লীগ নেতাসহ শতাধিক ব্যবসায়ীর এনসিপিতে যোগদান
সর্বাধিক পঠিত
চট্টগ্রামে হচ্ছে একাধিক হাসপাতাল, পাল্টে যাচ্ছে স্বাস্থ্য সেবার চিত্র
চট্টগ্রামে হচ্ছে একাধিক হাসপাতাল, পাল্টে যাচ্ছে স্বাস্থ্য সেবার চিত্র
নগর ভবনে উপদেষ্টা আসিফকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা
নগর ভবনে উপদেষ্টা আসিফকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা
উপদেষ্টাকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট, জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষককে বরখাস্ত
উপদেষ্টাকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট, জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষককে বরখাস্ত
ছাত্রলীগের ১৫ জন মিলে চার মিনিটের মিছিল, আটক তিন
ছাত্রলীগের ১৫ জন মিলে চার মিনিটের মিছিল, আটক তিন
বাংলাদেশি পণ্য আমদানিতে কঠোর হলো ভারত
বাংলাদেশি পণ্য আমদানিতে কঠোর হলো ভারত