X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতে স্বেচ্ছাসেবীরা

সাদ্দিফ অভি
৩০ মার্চ ২০২০, ২৩:৪৫আপডেট : ৩১ মার্চ ২০২০, ০১:৪৫

 বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। দিন দিন বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। এ অবস্থায় বাইরে এমনকি ঘরেও আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ। এই ঝুঁকির মধ্যেই দেশের নিম্ন আয়ের মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছে বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী সংগঠন। খাবার, হ্যান্ড সেনিটাইজারসহ সচেতনতার বার্তা পৌঁছাতে নিরলস পরিশ্রম করছেন এসব সংগঠনের কর্মীরা। তবে এসব কাজের সঙ্গে জড়িতরা রয়েছেন চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। আবার প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের হাত ধোয়ার বিষয়টিও খেয়াল রাখার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। চিকিৎসকদের মতে সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহারের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবীদের সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা প্রয়োজন।

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিজ নিজ উদ্যোগে কাজ করছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো। এছাড়া ব্যক্তিপর্যায়ে কাজ করছেন অনেকেই। নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে খাবার, হ্যান্ড সেনিটাইজার, মাস্কসহ বিতরণ করছেন নানা সামগ্রী। এসব সামগ্রী বিতরণ করতে গিয়ে অনেক সময় স্বেচ্ছাসেবীরা সাধারণ মানুষের জটলার কাছে চলে যাচ্ছেন। কেউ কেউ গ্লাভস ছাড়াই বিভিন্ন সামগ্রী হস্তান্তর করছেন।

 কয়েকটি সংগঠন ও সামাজিক উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা তাদের স্বেচ্ছাসেবীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করেই কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু সুরক্ষা সামগ্রী অপ্রতুল থাকায় সব কর্মীকে তা দেওয়া যাচ্ছে না। তাই সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কেউ কেউ সেচ্ছাসেবীদের জন্য পার্সোনাল প্রোটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) সরবরাহ করার কথাও ভাবছেন।

নিজ উদ্যোগে বস্তির মানুষদের জন্য খাবার সরবরাহ করার উদ্যোগ নিয়েছেন ফেরদৌস আহমেদ উজ্জ্বল। তিনি জানান, বস্তিবাসী ও ভাসমান মানুষসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষদের পাঁচ কেজি চাল, দুই কেজি আলু, আধা লিটার তেল, আধা কেজি পেঁয়াজ, আধা কেজি লবণ আর একটি হুইল সাবান প্যাকেট করে দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে সাত জন স্বেচ্ছাসেবী কাজ করছেন। তাদের মধ্যে দুই জন শ্রমজীবী ও একজন শিক্ষার্থী আছেন। কিন্তু তাদের কয়েকজন মাস্ক, গ্লাভস ছাড়াই নিম্ন আয়ের এসব মানুষদের জন্য খাবার নিয়ে ঘরে ঘরে যাচ্ছেন।

 উজ্জ্বল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা মানুষের সহায়তায় নিজ উদ্যোগে কাজটি করছি। আমাদের স্বেচ্ছাসেবীর স্বল্পতা আছে, তবে সুরক্ষার বিষয়টি আমাদের মাথায় আছে। আমরা তাদের গ্লাভস আর মাস্ক ব্যবহার করার কথা বলেছি। এর বাইরে সুরক্ষা হিসেবে তাদের জন্য পার্সোনাল প্রোটেক্টিভ ইকুইপমেন্টের (পিপিই) ব্যবস্থা করার চেষ্টা চলছে। আপাতত পাঁচটি পিপিই ম্যানেজ করতে পেরেছি।

এদিকে করোনার বিস্তার রোধে সারাদেশে হ্যান্ড স্যানিটাইজার সরবরাহের কাজ করছে ছাত্র ইউনিয়ন। এই হ্যান্ড সেনিটাইজার তারা নিজ উদ্যোগে উৎপাদন এবং বিতরণ করছেন। উৎপাদন কাজের সঙ্গে যুক্ত আছেন ৩০ জন। এছাড়া হাজার খানেক কর্মী দেশব্যাপী স্যাটিাইজার বিতরণ এবং সামাজিক সচেততা বাড়াতে কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অনিক রায়।

তিনি বলেন, জেলা পর্যায়ে ও থানায় থানায় আমাদের হাজার খানেক কর্মী কাজ করছেন। তাদের সুরক্ষার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া আছে। আমরা আপাতত পিপিই জোগাড় করার চেষ্টা করছি। যারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন, তাদের আমরা আলাদা জায়গায় রাখছি। তারা বাসা-বাড়িতে যায় না, আলাদা থাকে। এভাবেই আমরা কাজটি এগিয়ে নিচ্ছি। পিপিই জোগাড় না হওয়া পর্যন্ত মাস্ক-গ্লাভস যা পাওয়া যাচ্ছে, তা দিয়েই নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজ করছি।

 তবে স্বেচ্ছাসেবীদের জন্য এখনই পিপিই’র প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভিন্ন সামগ্রী বিতরণে সময় তাদের সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা এবং গ্লাভস ও মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

ইউনিসেফের ওয়াশ (নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন) বিশেষজ্ঞ মনিরুল আলম মনে করেন, সুরক্ষার পাশাপাশি হাত ধোয়ার বিষয়টি স্বেচ্ছাসেবীদের পালন করতে হবে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, স্বেচ্ছাসেবীদের সামাজিক দূরত্ব (৩ ফিট) মেনে চলা উচিত। আমরা তাদের মাস্ক-গ্লাভস ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করছি। তবে মাস্ক পরে বারবার তা হাত দিয়ে ধরা থেকে বিরত থাকতে হবে।

 তিনি আরও বলেন, স্বেচ্ছাসেবীদের বারবার হাত ধোয়ার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। বাইরে থেকে আসা এবং বাসা থেকে বের হওয়ার আগে অবশ্যই হাত ধোয়ার বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। এছাড়া বাইরে যতক্ষণ থাকবেন, একটু পরপর হাত ধুতে হবে।

প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী মনে করেন স্বেচ্ছাসেবীদের পিপিই’র প্রয়োজন নেই, তবে সামাজিক দূরত্ব অবশ্যই পালন করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, এসব ক্ষেত্রে আমরা গ্লাভস-মাস্ক ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে পরামর্শ দেই। যখন কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়ে যায়, তখন শুধু আক্রান্ত কিন্তু সন্দেহজনক কোনও কেস থাকে না। তখন যে কেউ রোগের বাহক হতে পারে। এজন্য যারা সাধারণ মানুষের কাছে যাচ্ছেন, তাদের মাস্ক এবং গ্লাভস ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া সামাজিক দূরত্ব অবশ্যই পালন করতে হবে। যদি কেউ গ্লাভস না পড়ে, তারা অবশ্যই ঝুঁকিতে থাকবে। খালি হাতে কাজ করার পর সেই হাত দিয়ে নাক-চোখ-মুখ স্পর্শ করলে করোনা আক্রান্ত হওয়ার খুব বেশি ঝুঁকি থাকে বলে সতর্ক করেন তিনি।

 

/টিটি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করছে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করছে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
সিস্টেম লস কমাতে সার্বক্ষণিক ম্যাজিস্ট্রেট চায় পেট্রোবাংলা
সিস্টেম লস কমাতে সার্বক্ষণিক ম্যাজিস্ট্রেট চায় পেট্রোবাংলা
ছেলেবেলার ক্লাবের শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন রোনালদো
ছেলেবেলার ক্লাবের শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন রোনালদো
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে নাটকীয় উন্নতি হয়েছে: ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে নাটকীয় উন্নতি হয়েছে: ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
সর্বাধিক পঠিত
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
ফালুর বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট অনুমোদন
ফালুর বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট অনুমোদন