X
মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫
২ আষাঢ় ১৪৩২

দেড়মাসে কৃষকের লোকসান সাড়ে ৫৬ হাজার কোটি টাকা: ব্র্যাক

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০৪ জুন ২০২০, ২২:১৬আপডেট : ০৫ জুন ২০২০, ০০:০৩

দেড়মাসে কৃষকের লোকসান সাড়ে ৫৬ হাজার কোটি টাকা: ব্র্যাক

কোভিড-১৯ সৃষ্ট মহামারির প্রভাবে দেড় মাসে সারা দেশে কৃষকের লোকসান হয়েছে আনুমানিক ৫৬ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকারও বেশি। মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত এই ক্ষতির হিসাব উঠে এসেছে ব্র্যাকের পরিচালিত গবেষণায়। বৃহস্পতিবার (৪ জুন) বিকালে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এই গবেষণার আওতায় করা দুটি সমীক্ষার ফল তুলে ধরে ব্র্যাক।

এ সময় প্যানেল আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক সদস্য ড. এম এ সাত্তার মণ্ডল, প্রাণ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইলিয়াস মৃধা, এসিআই এগ্রি বিজনেসের নির্বাহী পরিচালক ড. এফ এইচ আনসারী এবং ব্র্যাকের ডেইরি অ্যান্ড ফুড এন্টারপ্রাইজের পরিচালক মোহাম্মদ আনিসুর রহমান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ব্র্যাকের অ্যাডভোকেসি ফর সোশ্যাল চেঞ্জ কর্মসূচির ঊর্ধ্বতন পরিচালক কেএএম মোর্শেদ।

ব্র্যাকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কৃষি খাতে এবং সামগ্রিক খাদ্য নিরাপত্তার ওপর কোভিড-১৯-এর প্রভাব সম্পর্কে জানতে উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের মতামতের ভিত্তিতে এই সমীক্ষা দুটি পরিচালিত হয়। সারা দেশের এক হাজার ৫৮১ জন কৃষক (ফসল, শাকসবজি, হাঁস-মুরগি, মাছ এবং দুগ্ধ উৎপাদনকারী) এতে অংশগ্রহণ করেন।

গবেষণায় দেখা যায়, মহামারি শুরুর দিকে ত্রাণ বিতরণকারী সংস্থাগুলোর ব্যাপক চাহিদা এবং ভোক্তাদের আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পণ্য কেনার কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, বিশেষ করে মোটা চাল, মসুরের ডাল ইত্যাদির দাম ও বিক্রি বেড়ে যায়। চাল ও মসুরের ডালের দাম ৩০ থেকে ৩২ শতাংশ এবং ব্যবসায়ীদের এই পণ্যগুলোর বিক্রি ৩০০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। বাজারে চাহিদা বাড়লেও তা কৃষকদের কোনও উপকারে আসেনি। কারণ, মহামারির আগেই তারা তাদের মজুত বিক্রি করে দিয়েছিলেন। অন্যদিকে ত্রাণবহির্ভূত এবং পচনশীল পণ্যগুলোর উৎপাদন অব্যাহত রাখা এবং বিক্রি করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এ কারণে ৮৮ শতাংশ কৃষক (মাছ চাষিদের শতভাগ) আর্থিক ক্ষতির কথা জানিয়েছেন। কৃষকরা যেসব সমস্যার কথা বলেছেন, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— ন্যায্যমূল্য না পাওয়া (৬৬ শতাংশ), সীমিত সময়ের জন্য বাজার খোলা থাকা (৫২ শতাংশ), উৎপাদনের উপকরণগুলোর উচ্চমূল্য (৪৫ শতাংশ) এবং শ্রমিক সংকট (২৮ শতাংশ)।

ব্র্যাক জানায়, এই দেড়মাসে পণ্যের ক্ষতি ও কম দামের কারণে প্রত্যেক কৃষকের লোকসান হয়েছে গড়ে প্রায় ২ লাখ ৭ হাজার ৯৭৬ টাকা করে। সেই হিসাবে সারা দেশে কৃষির প্রতিটি উপখাতের সব কৃষকের সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে লোকসান হয়েছে ৫৬ হাজার ৫৩৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকার সমান।

পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক সদস্য ড. এম এ সাত্তার মণ্ডল এই গবেষণার জন্য ব্র্যাককে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘‘এই সংকট সামাল দিতে আড়তদার, পাইকার, ফড়িয়া— এদেরও গুরুত্ব দিতে হবে। সবাইকে কাজে লাগাতে হবে। কেননা, বাজারে এদের বিরাট ভূমিকা থাকে।’

প্রাণ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইলিয়াস মৃধা বলেন, ‘‘দেশের যেসব এলাকায় করোনার আক্রমণ কম, সেসব এলাকায় কৃষকদের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে সহায়তা করতে হবে।’

এসিআই এগ্রি-বিজনেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এফ এইচ আনসারী বলেন, ‘কৃষিজাত পণ্য প্রক্রিয়াকরণের প্রযুক্তিকে গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি বেসরকারি খাত, ডিলার এবং সম্প্রসারণ সেবা প্রদানকারীদের সঙ্গে যোগাযোগের উন্নতি ঘটাতে সরকারের এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া প্রয়োজন।’

ব্র্যাকের ডেইরি অ্যান্ড ফুড এন্টারপ্রাইজের পরিচালক মোহাম্মদ আনিসুর রহমান বলেন, ‘‘মহামারি শুরুর পর ব্যাপক হারে চাহিদা কমায় চাষিদের সবজি ও দুধ নষ্ট হয়েছে। তারা এগুলো ফেলে দিয়েছে। এই পরিস্থিতির দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব শুভ হবে না। কৃষকেরা কৃষিকাজ ছেড়ে দিলে বা কমিয়ে ফেললে, দেশের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে।’

ব্র্যাকের গবেষণায় আরও জানা যায়, তথ্য প্রদানকারীদের মধ্যে ৪১ শতাংশ (৬৯ ভাগ মাছ চাষি) বেঁচে থাকার জন্য ঋণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। ১৪ শতাংশ তাদের বিকল্প আয়ের উৎসের ওপর নির্ভর করার কথা বলেছেন। ১৮ শতাংশ তাদের সঞ্চয় ভেঙে বা সম্পদ বিক্রি করে চলার কথা বলেছেন। আর ১৮ শতাংশ জানিয়েছেন, তাদের কোনও পরিকল্পনা নেই। ৫ শতাংশ বলেছেন, উৎপাদনে না ফিরতে পারলে তারা পেশাই বদলে ফেলবেন। সরকারের কাছ থেকে ৬৬ শতাংশ কৃষক সহজ শর্তে ঋণ পেতে চান। ৫৬ শতাংশ কৃষক উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম এবং কম খরচে উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ চান ৪৮ শতাংশ কৃষক। সমীক্ষায় অন্তর্ভুক্ত ৬৪ শতাংশ কৃষক সরকারের ঘোষিত প্রণোদনা সম্পর্কে জানেন। তবে এই সুবিধা কীভাবে পাওয়া যায় সে সম্পর্কে ৭৯ ভাগ কৃষকের কোনও ধারণা নেই বা ভুল ধারণা আছে। ব্যাংক থেকে আনুষ্ঠানিক ঋণ নেওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে মাত্র ২০ ভাগ কৃষকের।

এ সময় গবেষণার নিরিখে এ ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলা করতে কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে— লাল ফিতার দৌরাত্ম্য ও পদ্ধতিগত বাধাগুলো কমিয়ে ঋণ বিতরণ ব্যবস্থাকে কৃষকবান্ধব করা, সৃজনশীল বিতরণ ব্যবস্থা প্রবর্তন (এমএফএস, এনজিওগুলোর মাধ্যমে ঋণ বিতরণ)। সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা ও চাহিদা বাড়িয়ে বাজারকে প্রাণবন্ত রাখতে নগদ অর্থ বিতরণ কার্যক্রম জোরদার করা, ক্ষুদ্র কৃষকের কাছাকাছি সরকারি ক্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা। বীজ, সার, ফিড উৎপাদনকারী, স্টোরেজ, পরিবহন ইত্যাদি খাতগুলোকে সুবিধা ও উৎসাহ প্রদানের মাধ্যমে আরও বিকশিত করা। উপখাত ভিত্তিক স্বল্প, মাঝারি এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ, প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষি মডেল ব্যবহার, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তার জন্য মানসম্পন্ন বীজ সরবরাহ করা এবং বেসরকারি খাত ও কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্পগুলোকে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে একত্রীকরণ।

/এসও/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ড. ইউনূস-তারেক রহমান বৈঠকের বিস্তারিত আলোচনা করেছে বিএনপি
ড. ইউনূস-তারেক রহমান বৈঠকের বিস্তারিত আলোচনা করেছে বিএনপি
ডেমরায় ছাদ থেকে পড়ে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু
ডেমরায় ছাদ থেকে পড়ে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু
ইউনূস স্যারের কাছে ক্ষমা চেয়ে বলবো, পরিবেশ তৈরি হলে তারপর নির্বাচন দিয়েন
ইউনূস স্যারের কাছে ক্ষমা চেয়ে বলবো, পরিবেশ তৈরি হলে তারপর নির্বাচন দিয়েন
একদিনে সারা দেশে গ্রেফতার আরও ১৬৩৬ জন
একদিনে সারা দেশে গ্রেফতার আরও ১৬৩৬ জন
সর্বাধিক পঠিত
নগরভবনে সভা করছেন ইশরাক, নামের সঙ্গে ‘মাননীয় মেয়র’
নগরভবনে সভা করছেন ইশরাক, নামের সঙ্গে ‘মাননীয় মেয়র’
ইরানে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা থেকে সরে দাঁড়ালো ভারত?
ইরানে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা থেকে সরে দাঁড়ালো ভারত?
ইরানের ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা ‘অবমূল্যায়ন’ করেছে ইসরায়েল
ইরানের ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা ‘অবমূল্যায়ন’ করেছে ইসরায়েল
ক্রিকেটার সাকিবসহ ১৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
ক্রিকেটার সাকিবসহ ১৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
তেহরানের আকাশসীমায় পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দাবি ইসরায়েলের
তেহরানের আকাশসীমায় পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দাবি ইসরায়েলের