X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১

ডিএসসিসির অভিযান: ৪ কোটি টাকার ক্যাবল নষ্ট, ৫০ হাজার গ্রাহক বিচ্ছিন্ন

শাহেদ শফিক
০৮ আগস্ট ২০২০, ২০:৩৯আপডেট : ০৮ আগস্ট ২০২০, ২১:১১

ডিএসসিসির অভিযান: ৪ কোটি টাকার ক্যাবল নষ্ট, ৫০ হাজার গ্রাহক বিচ্ছিন্ন

পরিচ্ছন্ন নগরী গড়তে সড়কের ওপর ঝুঁকিপূর্ণভাবে ঝুলে থাকা অবৈধ ইন্টারনেট ও ডিস ক্যাবল অপসারণ শুরু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। ক্যাবল ব্যবসায়ীদের দাবি, গত দুই দিনের এই অভিযানে কমপক্ষে ৫০ হাজার গ্রাহক ইন্টারনেট ও ডিস সংযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। পাশাপাশি সাড়ে তিন থেকে চার কোটি টাকার ক্যাবল নষ্ট হয়েছে। আর সিটি করপোরেশন বলছে, পরিচ্ছন্ন নগর গড়াতেই তারা এই অভিযান পরিচালনা করছেন।

ডিএসসিসি সূত্র জানিয়েছে, গত ৩০ জুলাই সংস্থার বাজেট ঘোষণা অনুষ্ঠানে এক সপ্তাহের মধ্যে নগরীর অবৈধ, দৃষ্টিকটু ও ঝুঁকিপূর্ণ ক্যাবল অপসারণ করার ঘোষণা দেন মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। মেয়রের এমন ঘোষণার পর বুধবার (৫ আগস্ট) থেকে নগরজুড়ে এসব ক্যাবলের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে ডিএসসিসির ভ্রাম্যমাণ আদালত। দুই দিনের অভিযানে ধানমন্ডি, ফুলবাড়িয়া ও গুলিস্তান এলাকায় প্রায় ৪ কোটি টাকার ক্যাবল কেটে দেওয়া হয়। এতে ৫০ হাজারের মতো সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। হঠাৎ করেই এমন অভিযানে দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বিষয়টি জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার ডিএসসিসি মেয়রের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন ইন্টারনেট ও ডিস ব্যবসায়ীরা।

জানতে চাইলে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি আমিনুল হাকিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, 'আমরা মাটির ওপরে ক্যাবল রাখতে চাই না। কিন্তু যারা এই কাজটি করছেন, তারা তা সঠিকভাবে করেনি। দেড় থেকে দুই কিলোমিটারের মধ্যে আন্ডারগ্রাইন্ড লাইনের ডিস্ট্রিবিউশন পয়েন্ট রাখা হয়েছে। সেখান থেকে সংযোগ নিয়ে যখন প্রতিটি বাড়িতে দেওয়া হয়, তখন তো আবারও সেটি মাটির ওপরের বৈদ্যুতিক পোল বা অন্যান্য সংযোগের মধ্যে চলে যাচ্ছে। আমরা বলেছি আন্ডারগ্রাউন্ড লাইনে প্রতিটি বাসা-বাড়ির সামনে অথবা দুটি বাড়ির জন্য একটি ডিস্ট্রিবিউশন পয়েন্ট রাখতে। তাহলে আর কোনও বৈদ্যুতির পোলের ওপর নির্ভর হতে হবে না। কিন্তু যারা এই দায়িত্বটি নিয়েছেন, তারা সেটি করতে পারছেন না।'

ডিএসসিসির অভিযান: ৪ কোটি টাকার ক্যাবল নষ্ট, ৫০ হাজার গ্রাহক বিচ্ছিন্ন

তিনি আরও বলেন, 'বিশ্ব ব্যাংকের চাহিদা অনুযায়ী উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হতে হলে তার ৫৬ শতাংশ মানুষ ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশে এখন আছে ৭-৮ শতাংশ। এখন আইসিটি ডিভিশনের চাহিদা ইন্টারনেটের দাম কমিয়ে গ্রাহকের সংখ্যা বাড়াতে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বলা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের জন্য ইন্টারনেটের দাম কমাতে। কিন্তু আমাদের সঙ্গে যদি এমন আচরণ হয়, তাহলে আমরা সেটা কীভাবে করবো? মাটির নিচের ক্যাবল ব্যবহার করলে খরচ বাড়বে।'

তিনি আরও বলেন, 'কোনও কোনও মন্ত্রণালয় বলছে ক্যাবল রাখবে না। মেয়রও সিটির বিউটিফিকেশন নিয়ে ভাবছেন। আমরাও চাই শহরটা সুন্দর হোক। কিন্তু কীভাবে? সিটি করপোরেশন যখন রাস্তা করছে, তখন একটা কমন ভায়াডাক্ট করতে পারে। আমরা সেগুলো ব্যবহার করে ভাড়া দেবো। এর জন্য একটা কমন সমন্বয়কারী থাকলে এই সমস্যা হতো না। আসলে আমরা আছি গ্যাঁড়াকলে। আগামী রবিবার দক্ষিণের মেয়রের সঙ্গে আমাদের একটা বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে আমাদের যেসব ফাইন্ডিং রয়েছে সেটা আমরা তাকে জানাবো।'

বাংলাদেশ ইন্টারনেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আনোয়ার হোসেন আনু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, 'আমরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। করোনাকালে যেখানে সবাই বাসায় বসে অফিস করছেন, শিক্ষার্থীরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে ক্লাস করছে, ব্যাংক, বিমা, হাসপাতাল, আউটসোর্সিং, কলসেন্টার, সফটওয়্যার, টেলিমেডিসিন, ই-কমার্সসহ জরুরি সব সেবাই ইন্টারনেটে হচ্ছে সেখানে বিনা নোটিশে হঠাৎ করেই এভাবে ক্যাবল কেটে দেওয়ায় সবাই দুর্ভোগে পড়েছেন। গত দুই দিনে আমাদের দুই থেকে আড়াইশ’ কোটি টাকার ইন্টারনেট ক্যাবল কেটে দেওয়া হয়েছে। ২০ হাজার গ্রাহক ইন্টারনেট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'বর্তমানে করোনার কারণে বাজারে ক্যাবল সংকট। কিন্তু হঠাৎ করে এতো টাকার ক্যাবল ধ্বংস করে দেওয়ার কারণে বাজারেও কোনও ক্যাবল পাওয়া যাচ্ছে না। করোনার কারণে বিদেশ থেকেও ক্যাবল আমদানি বন্ধ। বাজারে ক্যাবলের দাম বেড়ে গেছে। আর এই মুহূর্তে ব্যবসায়ীরা এতো টাকা কোথায় পাবে? যেখানে সরকার সবাইকে বাসায় থাকার অনুরোধ করছে, সেখানে ইন্টারনেট ও ডিস সেবা যদি বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয় মানুষ তো বাসা থেকে বেরিয়ে পড়বে। ক্ষতি তো দেশেরই হবে।'

ডিএসসিসির অভিযান: ৪ কোটি টাকার ক্যাবল নষ্ট, ৫০ হাজার গ্রাহক বিচ্ছিন্ন

ক্যাবল অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এস এম আনোয়ার পারভেজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, 'মাটির নিচে ফাইবার অপটিক ক্যাবল স্থানান্তরের জন্য যে দুটি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তারা পরিপূর্ণ সাপোর্ট দিতে পারছে না। অনেক স্থানে দেখা গেছে সড়কের ওপর ইলেক্ট্রিক পোলের ওপর দিয়ে তারা লাইন নিয়েছে। তাদের ফি কী হবে সেটাও নির্ধারণ করে দিচ্ছে না। সিটি করপোরেশন আমাদের ভায়াডাক্ট করে দিতে পারে। আমরা তার ভাড়া দেবো। কিন্তু সেটাও করছে না।'

তিনি আরও বলেন, 'সরকার আমাদের গ্রাহক পর্যায়ে ৩০০ টাকা করে ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে। আমরা এই টাকা দিয়ে খরচও তুলতে পারছি না। এর পরেও খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে সেবা দিয়ে যাচ্ছি। এই করোনাকালে অনেকেই আমাদের মাসিক সার্ভিস ফিও দিতে পারছে না। কর্মীদের বেতন দেওয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় কোনও প্রকার নোটিশ ছাড়া হঠাৎ করেই সিটি করপোরেশনের এমন অভিযানে আমরা হতভম্ব হয়েছি। আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। শুধু আমাদের ডিস ব্যবসায়ীদের এক থেকে দেড় কোটি টাকার ক্যাবল নষ্ট হয়েছে। প্রায় ৩০ হাজার গ্রাহক ডিস লাইন থেকে বিচ্ছিন্ন। এই করোনাকালে এখন নতুন করে টাকা ইনভেস্ট করা অনেক ব্যবসায়ীর পক্ষে কঠিন।'

জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো. এমদাদুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, 'আমাদের মেয়রের নির্বাচনী ইশতেহার ছিল পরিচ্ছন্ন শহর। এই ক্যাবল তারগুলো শহরকে নোংরা করে দিচ্ছে। সেই কারণে একটি পরিচ্ছন্ন শহর গড়তে আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি। তাছাড়া এই তারগুলো অনেক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ঝুলে আছে। তারগুলোর ওজন অনেক বেশি। এর সঙ্গে বিদ্যুতের সংযোগও রয়েছে। যে কোনও মুহূর্তে হেলে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।'

তিনি আরও বলেন, 'ক্যাবল ব্যবসায়ীরা আমাদের সড়ক ও পোল ব্যবহারের জন্য কোনও ফি দেয় না। আইনে আছে সিটি করপোরেশন জায়গা ব্যবহার করতে হলে ফি দিতে হবে। অনুমতিও নিতে হবে। সে কারণে আমাদের মেয়র এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।'

/এএইচ/এমএমজে/
সম্পর্কিত
মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তদন্ত করবে ডিবি
মিল্টন সমাদ্দার আটক
লালবাগে নারীর মরদেহ উদ্ধার
সর্বশেষ খবর
যাত্রাবাড়ী থেকে ১১ পরিবহন চাঁদাবাজ গ্রেফতার
যাত্রাবাড়ী থেকে ১১ পরিবহন চাঁদাবাজ গ্রেফতার
ধানক্ষেত পাহারা দিতে গিয়ে অপহরণের শিকার বাবা-ছেলেসহ ৩ জন
ধানক্ষেত পাহারা দিতে গিয়ে অপহরণের শিকার বাবা-ছেলেসহ ৩ জন
তিউনিসিয়া উপকূলে নৌকাডুবিতে নিহত ৮ বাংলাদেশির মরদেহ আসছে আজ
তিউনিসিয়া উপকূলে নৌকাডুবিতে নিহত ৮ বাংলাদেশির মরদেহ আসছে আজ
থাইল্যান্ড সফর নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করছেন প্রধানমন্ত্রী
থাইল্যান্ড সফর নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করছেন প্রধানমন্ত্রী
সর্বাধিক পঠিত
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
মিল্টন সমাদ্দার আটক
মিল্টন সমাদ্দার আটক
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
সিয়াম-পরীর গানের ভিউ ১০০ মিলিয়ন!
সিয়াম-পরীর গানের ভিউ ১০০ মিলিয়ন!